বায়ু দূষণে কেমন আছে দিল্লিবাসী?1 min read
Reading Time: 2 minutesসাম্প্রতিক সময়ে দিল্লির বায়ু দূষণ ভারতের বাহিরেও ব্যাপকভাবে আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দিল্লির অধিবাসীরা কেউ কেউ ইতিমধ্যেই বায়ু দূষণে অতিষ্ঠ হয়ে দিল্লি ছেড়ে চিরতরে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ৪০ শতাংশ অধিবাসী দিল্লি ছেড়ে একেবারে চলে যেতে চাচ্ছেন।
ভারতীয় সরকার ইতিমধ্যেই বায়ুদূষণ রোধে জোড়-বিজোড় যানবাহন চলাচল পদ্ধতি চালু, দীপাবলিতে আতশবাজি নিষিদ্ধ করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু তারপরেও বায়ু দূষণের মাত্রা না কমে বরং বেড়েই চলছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দিল্লির বেশ কয়েকটি স্থানে কয়েকদিন আগেও বাতাসের গুণমান সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স (AQI) পাঁচশোর কাছাকাছি ছিল। তবে নভেম্বরে কিছু জায়গায় একিউআই ৬২৫ ছাড়িয়েছে। আবার লোকাল সার্কেল নামক দিল্লির এক অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সমীক্ষায় উঠে এসেছে দিল্লির কিছু কিছু জায়গায় বাতাসের গুণমান সূচক ৯৯৯ ছাড়িয়েছে।
অথচ বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) যদি ০-৫০ এর মধ্যে থাকে তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো, ৫১-১০০ এর মধ্যে থাকলে তা সন্তোষজনক, ১০১-২০০ এর মধ্যে হলে সাধারণ মানের, ২০১-৩০০ এর মধ্যে হলে খারাপ, ৩০১-৪০০ হলে খুব খারাপ, আর ৪০১-৫০০ হলে মারাত্মক খারাপ বলে বিবেচনা করা হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দিল্লির বায়ু দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যে মহাবিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
কেন এমন ভয়াবহ বায়ু দূষণের কবলে পড়লো দিল্লি তার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে অনেক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বছরের এই সময়টায় উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এসব এলাকায় কৃষকরা ধানের নাড়া বা খড় পোড়ায়, যা তাদের অনেকটা প্রথার মতো; এই খড় পোড়ানোর ধোয়া ও ময়লা বাতাসের সঙ্গে মিশে দিল্লিতে বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার দিল্লিতে অতিরিক্ত মানুষের বসবাস, যানবাহনের মারাত্মক ক্ষতিকর ধোঁয়া, প্রচুর যানজট, দীপাবলিসহ বিভিন্ন সময়ে আতশবাজি, শিল্প-কারখানার বর্জ্য, আবর্জনা ও দূষিত ধোঁয়া এমন নানাবিধ কারণ একত্রিত হয়ে দিল্লিতে বায়ু দূষণকে ত্বরান্বিত করেছে বলেও মনে করছেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা।
দিল্লির বায়ু দূষণ নিয়ে সাধারণ মানুষ, চলচ্চিত্র তারকা থেকে শুরু করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত সরব হয়ে উঠেছে। এদিকে আবার ভারতের উত্তর প্রদেশের বিজেপি মন্ত্রী সুনিল ভারালা বায়ু দূষণ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বেশ সমালোচনারও মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি দিল্লির পরিস্থিতি মোকাবেলায় বস্তুনিষ্ঠ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা না বলে বলছেন সরকারের উচিত ইন্দ্রদেবকে তুষ্ট করার জন্য যজ্ঞের আয়োজন করা; ইন্দ্রদেবই সব ঠিক করে দেবেন। তার মতে, ইন্দ্রদেবের উপাসনা করে যজ্ঞ করলে বৃষ্টি হবে আর এই বৃষ্টির মাধ্যমে দিল্লির দূষণ দূর হবে।
কেজরিওয়াল সরকার এই বায়ু দূষণ মোকাবেলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও বারবার কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর দোষ চাপাচ্ছিলেন; এমন পরিস্থিতিতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কের মধ্যে সুপ্রিমকোর্ট হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে এবং বায়ুদূষণ রোধে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়কে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে।
এমন ভয়াবহ বায়ুদূষণ দিল্লির অধিবাসীদের জনজীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না, শুধুমাত্র প্রয়োজনের তাগিদেই মাস্ক ব্যবহার করে রাস্তায় বের হচ্ছেন তারা। তবে মাস্ক ব্যবহার করেও কিন্তু শেষ রক্ষা হচ্ছে না; কিছু সময় বাহিরে থাকলেই চোখ জ্বালাপোড়া, মাথাব্যাথা, শ্বাসকষ্টসহ নানা নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন দিল্লিবাসী। বায়ু দূষণ জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভিড় করছেন।
লেখক- আমিনুল ইসলাম
আরও পড়ুন- দিল্লির প্রথম অক্সিজেন বার- ২৯৯ রুপিতে “বিশুদ্ধ বাতাস “