দাম বেশি তাই, দেশে ডলার যাচ্ছে বেশি বেশি1 min read
Reading Time: 3 minutesবিশেষ প্রতিনিধি।
বাংলা ইনফোটিউব।
নিউইয়র্ক: সার্চ ইন্জিন গুগল দেখাচ্ছে এখন প্রতি ডলারের বিপরিতে টাকার দর ৮৪ দশমিক চার টাকা।যদিও এটা দুই দশ পয়সা ওঠা নামা করছে তবে, সার্বজনীন ভাবে সাড়ে তিরাশি’র উপরেই থাকছে।নতুন বছরের শুরু থেকেই ডলারের দাম এখন উর্ধমুখি। দেশে সেটা কিনতে গেলে কোথাও কোথাও ৮৬ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।এই বাড়তি দামের সুযোগ নিচ্ছেন প্রবাসীরা।এখন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ হারে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন দেশে।ডলারের দামের সাথে বছরের এই সময়টাতে ট্যাক্স রির্টান জমা থেকে প্রাপ্ত অর্থযোগও একটি বড় বিষয়। নিউইয়র্কের কয়েকটি এক্সচেন্জ প্রতিষ্ঠান আর ক্রেতাদের সাথে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ওজোন পার্কের বাসিন্দা রেহনুমা কামাল গত মাসে ঢাকায় তার বাসায় টাকা পাঠিয়েছেন ডলার প্রতি ৮৩ দশমিক ২০ পয়সা করে।এক হাজার ডলার পাঠিয়ে ৬ মাস আগের চেয়ে প্রায় আড়াই হাজার টাকা বেশি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। দেশ থেকে একটি ঋন নিয়েছিলেন দুই লক্ষ টাকার।সেটি পরিশোধ করেন তিনি মাসে মাসে।গত মাসে প্রায় ৫’শত ডলার পাঠিয়েছেন। আশা করছেন, এই মাসেও পাঠাবেন বাকী ৫শত ডলার। আর আশা করছেন, যেন আরেকটু বাড়ে ডলারের বিপরিতে টাকার দাম।
জ্যাকসান হাইটস এর ডিজিটাল ওয়ান এর সত্বাধিকারী ব্যবসায়ী জাকারিয়া মাসুদ জানিয়েছেন, তার প্রতিষ্ঠান এখন ডলার প্রতি ৮৩ দশমিক ৫৩ টাকা করে পৌছে দিচ্ছেন বাংলাদেশে। সম পরিমান টাকা দিচ্ছে আগের রুপালী এক্সচেন্জ, বর্তমানে পরিচিতি সানম্যান গ্লোবাল এক্সপ্রেস কর্প। এই প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুদ রানা তপন জানিয়েছেন, ডলার প্রতি টাকা বেশি পাওয়া গেলে, নিউইয়র্ক থেকে ভিন্ন পথে বা হুন্ডির উপর নির্ভরতা কমে যায় অনেক খানি।মানুষ তখন বৈধ পথে টাকা পাঠাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এখন সেটাই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মাসুদ রানা জানিয়েছে এখন দৈনিক গড়ে একশ বিশ হাজার ডলার টাকা পাঠাচ্ছেন তারা তাদের প্রতিষ্ঠান থেকেই। এটা কোন কোন তিন দেড়শ হাজার ডলার পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
শুধু ডলারের দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলেই কি এই উর্ধগতি কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ রানা জানিয়েছেন, বছরের এই সময়টাতে ট্যাক্স রির্টান থেকেও মানুষ বাড়তি পয়সা পায়। সারা বছরে অনেক পরিবার অপেক্ষা করেন নতুন বছরে বাড়িতে কিছু টাকা পাঠানোর জন্য। আয়কর রির্টান সেই সুযোগ করে দেয়, সে কারনেও এখন ডলার বেশি বেশি পাঠাচ্ছেন দেশে অনেক প্রবাসী।
রেমিটেন্স প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে কথা বলে এবং অন্যন্য বিশ্লেষন থেকে দেখা যাচ্চে, টাকার দাম করে যাওয়ার এই প্রেক্ষাপট তৈরী হয়েছে মূলত ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকেই। ২০১৪, ১৫ এবং ২০১৬ সালে ডলারপ্রতি টাকার দাম ৮০ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটা কখনও কখনও ৭৭ টাকার নিচেও ছিল দীর্ঘদিন।২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে এটা বাড়তে শুরু করে। তবে ২০১৮ সালের শুরু থেকেই এটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ৬ মাসে ডলার প্রতি টাকা বেড়েছে ৩ টাকার বেশি।
বেশি বেশি ডলার পাঠানোর প্রেক্ষিতে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিটেন্স প্রবাহও বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। গত বছর অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিত জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালে রেমিটেন্স প্রবাহে যে মন্দা তৈরী হয়েছিল সেটা কাটিয়ে প্রায় ২০ ভাগ বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরনের হার। এর পরেও, ঢাকায় স্থানীয়ভাবে ডলারের বাজারে কিছু অস্থিরতাও তৈরী হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাজারে অতিরিক্ত ডলার ছেড়েও দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। যার প্রভাব পড়ছে আমদানির ক্ষেত্রে। এছাড়া খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়াচ্ছে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি। বকোনো কোনো ক্ষেত্রে দাম আরো বেশি নিচ্ছে কিছু ব্যাংক। এদিকে গেল নভেম্বরে ডলার নিয়ে কারসাজির অভিযোগে তিনটি বিদেশি ও ১৭টি দেশীয় ব্যাংককে সতর্ক করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকারদের মতে, আমদানি ব্যাপক হারে বাড়লেও রপ্তানি-রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় সেই হারে বাড়ছে না। এতে করে ডলার সংকটে পড়েছে দেশের মুদ্রাবাজার। আবার ব্যাংক খাতে আমানতের তুলনায় ঋণ প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়ে গেছে। এসব কারণে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই সতর্ক হতে হবে। কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। দেশের অর্থনীতিতে অপরিহার্য প্রভাব ডলারের। মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর কর্মকর্তারা জানান, বাজারে ডলারের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রাহকের চাহিদা মতো ডলার বিক্রি করতে পারছে না। গত অর্থবছরে এবং তার আগেও ডলারের সরবরাহ বেশি থাকায় প্রচুর ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিদেশি ঋণ পরিশোধ এবং আমদানি ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা মেটাতে চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ১২০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে উঠে এসেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। অথচ ২০১৬-১৭ অর্থবছর ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগের অর্থবছর ৪১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনলেও এক ডলারও বিক্রির প্রয়োজন পড়েনি। এর আগের অর্থবছর ৩৭৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার কিনে বিক্রি করে মাত্র ৩৫ কোটি ৭০ ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছর বাজার থেকে ৫১৫ কোটি ডলার কিনলেও কোনো ডলার বিক্রি করেনি। ফলে গত কয়েক বছর ধরে অধিকাংশ ডলার ব্যাংকের কাছে উদ্বৃত্ত তারল্যছিল।