ডেঙ্গু আতঙ্কে কাঁপছে দেশ!1 min read
Reading Time: 3 minutesডেঙ্গু! এ সময়ের এক আতঙ্কের নাম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী গত বছর যেখানে পুরো বছরে ১০ হাজার ১৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল সেখানে চলতি বছর শুধু মাত্র জুলাই মাসেই ১৪ হাজার ৯৯৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। ইতিমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৫ জনেরও বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে এক হাজার ৩৩৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালে জায়গা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার বাইরে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৮৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮৪৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঢাকায় এ রোগের প্রকোপ তুলনামূলক অনেক বেশি এবং তার পেছনে রয়েছে অনেক গুলো যৌক্তিক কারণ। একদিকে যেমন এ শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি অন্যদিকে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কারনে জলাবদ্ধতার পরিমানও বেশি। দক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, টায়ার বালতিতে জমে থাকা পানি এগুলো সবই ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তারের জন্য আদর্শ পরিবেশ।
কিভাবে এতটা ভয়াবহ রুপ নিলো ডেঙ্গু?
সরকারের সাম্প্রতিক জরিপে উঠে এসেছে এবার বর্ষা শুরু আগে প্রাপ্তবয়স্ক এডিস মশার সংখ্যা যা ছিলো, তা বর্ষায় বেড়ে হয়েছে ছয়গুণ। আর মূলত এ কারণেই দেখা দিয়েছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। শুধু এডিস মশার সংখ্যাই নয়, মশার লার্ভার ঘনত্বও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এসব লার্ভা থেকে মশা বের হলে আগামী দিনগুলোতে মশার সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে এই মুহুর্তে পুরো এশিয়াই কাপছে ডেঙ্গু জ্বরে। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের তথ্যানুযায়ী, ডেঙ্গুর পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে থাইল্যান্ড,পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনামেও। উষ্ণ আবহাওয়াতে ঘনঘন বৃষ্টি হওয়াতে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেমন দেখতে হয় এই এডিস মশা?
ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা খালি চোখে দেখেই সনাক্ত করা সম্ভব। এই মশার আরেক নাম টাইগার মশা কারণ এই জাতীয় মশার দেহে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। এডিস মশা মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে এবং এর অ্যান্টেনা বা শুঙ্গটি কিছুটা লোমশ হয় এবং পুরুষ মশার অ্যান্টেনা স্ত্রী মশার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি লোমশ দেখতে হয়। মূলত দেহের এই ডোরাকাটা দাগ এবং অ্যান্টেনা দেখেই এডিস মশা চেনা সম্ভব।
কিভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু কিনা?
সাধারনত ডেঙ্গু হলে তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে। এ সময় জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। শরীরে বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে হাড়, কোমড়, পিঠসহ অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়। এছাড়া চোখের পিছনে এবং মাথায় ব্যথা হয়। অনেক সময় এই ব্যথার তীব্রতা এত বেশি হয় যে মনে হয় বুঝি হাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। তাই এই জ্বর “ব্রেক বোন ফিভার” নামেও পরিচিত। সাধারণত ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ৪ বা ৫ দিন জ্বর থাকার পর তা এমনিতেই চলে যায় এবং কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এর কিছুদিন পরে পুনরায় জ্বর আসার সম্ভাবনা থাকে। একে “বাই ফেজিক ফিভার” বলে।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াই ভালো। যেমন যদি রোগীর নিচের উপসর্গগুলো দেখা যায়ঃ
১। শরীরের যে কোন অংশ থেকে রক্তপাত হলে
২। রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে
৩।শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে
৪। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে
৬। জন্ডিস দেখা দিলে
৭। অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে
৮। প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে
এসব ক্ষেত্রে বাড়িতে বসে না থেকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা কী?
এডিস মশা কামড়ালে যে মানুষের ডেঙ্গুজ্বর হবেই, বিষয়টি এমন নয়। মূলত পরিবেশে উপস্থিত ডেঙ্গু ভাইরাস এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হলে সেই মশার কামড়ে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া ভাইরাসের কারণে হওয়া জ্বরে আক্রান্ত থাকা ব্যক্তিকে এডিস মশা কামড়ালেও মশার মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার সুযোগ থাকে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়, এমনকি কোনো চিকিৎসা না করালেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে, যাতে ডেঙ্গু জনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়। যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধই যথেষ্ট। এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথার ঔষধ কোন ক্রমেই খাওয়া যাবে না কারণ এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায় কি?
ডেঙ্গু প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ এডিস মশার বিস্তার রোধ। এডিস মশা মূলত শান্ত প্রকৃতির মশা এবং অভিজাত এলাকায় বড় বড় সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় এরা বাস করে। এই মশা স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি এদের পছন্দের জায়গা নয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার জন্য আদর্শ স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সাথে মশা নিধনের জন্য প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে করে রোগীকে কোন মশা কামড়াতে না পারে কেননা এতে ডেঙ্গু পরিবারের মাঝে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।