খেলা

ডুবতে চলেছে জোয়াকিম লোর নতুন জার্মানি?1 min read

নভেম্বর ৯, ২০১৯ 3 min read

author:

ডুবতে চলেছে জোয়াকিম লোর নতুন জার্মানি?1 min read

Reading Time: 3 minutes

ঝড়ের আভাস মিলেছিল ২০১৪ বিশ্বকাপের পরপরই। ফিলিপ লাম বিশ্বকাপ জিতেই অবসরে গিয়েছেন। দল থেকে অবসর নিয়েছেন ক্লোসা। স্বাভাবিকভাবেই জার্মানি ফুটবল দলের রঙ খানিকটা আলো হারাচ্ছিল। পরের ইউরো অর্থাৎ ২০১৬ ইউরো পর্যন্ত তবুও সব ঠিকই ছিলো। সেসময় দলের ত্রাতা হিসেবে ছিল বড় কিছু নাম। শোয়েন্সটাইগার, ওজিল, মুলার, বোয়াটেং, ম্যানুয়েল নায়্যারসহ উঠতি তারকা টিমো ওয়ের্নার মিলে ফুটবলের এই পাওয়ার হাউজকে নিয়ে গিয়েছিল ইউরোর সেমি ফাইনাল পর্যন্ত। কিন্তু ওই অতটাই। এরপর থেকে আবার ভাঙ্গন। 

কোচ জোয়াকিম লো সিদ্ধান্ত নিলেন নতুন জার্মানির। দল থেকে বাদ দেয়া হল টমাস মুলার, জেরম বোয়াটেং আর মাটস হামেলসের মতো পরীক্ষিত তারকাদের। আর তুর্কি ইস্যুতে অবসরে চলে গেলেন জার্মান মাঝমাঠের পাসিং মাস্টার মেসুত ওজিল। কিন্তু লোর গড়া নতুন সেই জার্মানির যেন রঙ আসলো না। দলটা রীতিমতো ভুগছে প্রায় সব বড় ম্যাচে। দেখা দিয়েছে নিজস্ব কোন্দলও। 

নেদারল্যান্ডসের সাথে ইউরো বাছাইপর্বের ম্যাচে শেষ গোল হজমের পর নায়্যারের মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা যেন পুরো দলের ছবি হয়ে গিয়েছে। ডাচদের কাছে প্রথমার্ধে ১-০ গোলের লিড থাকলেও জার্মানি ম্যাচ শেষ করে ৪-২ গোলে হেরে। ২০০৭ সালের পর এটাই ছিল জার্মানির কোন বাছাইপর্বের ম্যাচে প্রথম হার। সেই সাথে দেশের মাটিতে তাদের প্রথম চার গোল হজমের ঘটনা।

সদ্যসমাপ্ত আন্তর্জাতিক বিরতিতেও জার্মানি ছিল নড়বড়ে। যদিও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে একেবারেই তরুণ স্কোয়াড নামিয়েছেন জোয়াকিম লো, কিন্তু ২-০ গোলের লিড থেকে মেসিবিহীন তারুণ্য ভরপুর আর্জেন্টিনা যেভাবে ফিরে এসেছে তাতে হতাশ হয়েছেন জার্মান ভক্তরা।

জার্মান ফুটবল বিশেষজ্ঞ রাফায়েল হনিংস্টেইন জানান, “জার্মানি যেভাবে হারছে সেটা দেখে বিশ্বকাপে মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচটার কথা মনে পড়ে যায়। দলটা আসলে জানেইনা তারা কি করছে।” দলের সিনিয়ার তিন খেলোয়াড় নিয়ে কোচের সিদ্ধান্তেরও বিপক্ষে তিনি। রাফায়েলের মতে, “মুলার একজন নেতা, হামেলস একজন নেতা, বোয়াটেং একজন নেতা। দলে অভিজ্ঞ আর তারুণ্যের বন্ধন এখন কই?” 

এরমাঝে আবার দীর্ঘ ইনজুরির কারণে দলের প্রধান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নায়্যারের মাঝে দেখা দিয়েছে অফফর্ম। একই সময়ে বার্সেলোনায় দারুণ আলো ছড়িয়েছেন মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান। প্রায় সবারই দাবী ছিল স্টেগানকে দলের এক নাম্বার গোল রুক্ষক করা হোক। জোয়াকিম লো এর সিদ্ধান্ত যদিও ছিল নয়্যারের পক্ষে। এমন সময়ে রঙ্গমঞ্চে হাজির জার্মানির সবচেয়ে বড় ক্লাব বায়র্ন মিউনিখ। জার্মান চ্যাম্পিয়ন দলের সভাপতি সরাসরি বলে বসলেন নায়্যারের প্রতি অবিচার চলছে এবং এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এরপর থেকে আন্তর্জাতিক ফিক্সচারে আর কখনোই বায়ার্ন খেলোয়াড়দের পাবেনা দেশটি। ঝামেলা নিরসনে জোয়াকিম লো বেছে নিলেন উভয় পক্ষ সমতা বিধান পদ্ধতি। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গোলবারের নিচে ছিলেন টের স্টেগান আর এস্তোনিয়ার বিপক্ষে ছিলেন ম্যানুয়েল নায়্যার।  

প্রকৃতপক্ষে জোয়াকিম লোয়ের নতুন পজিশন নির্ভরতা কমিয়ে দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবলে মানাতে পারছেনা জার্মানি। লো মূলত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দলের চার ফরোয়ার্ড মার্কো রয়েস, সার্জি গ্যানব্রি, টিমো ওয়ের্নার আর ইনজুরিতে বর্তমানে দলের বাইরে থাকা লেরয় সানের উপর ভিত্তি করে। কিন্ত, আদতে তা খুব বেশি ভাল কোন ফলাফল নিয়ে আসেনি। কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর এই পদ্ধতিতে জার্মানির অবস্থা ছিল বেশ খারাপ। 

২০১৪ এবং ২০১৮ এর মাঝে পার্থক্য যদি দেখতে হয় তবে মোটা দাগে বড় পার্থক্য আসে খেলার ধরণে। ২০১৪ সালে ম্যাচ প্রতি বল পজিশনে জার্মানির চেয়ে এগিয়ে ছিল কেবল স্পেন। কিন্তু বর্তমানে জার্মানির ম্যাচ প্রতি ৬০ শতাংশের বিপরীতে স্পেনের বল পজিশন ৭১ শতাংশ, ফ্রান্স ৭০ শতাংশ, ইতালি ৬৪ শতাংশ, ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম উভয়ের ৬৩ শতাংশ ছাড়াও অস্ট্রিয়া ৬২ শতাংশ আর গ্রিস বল পায়ে রেখেছে ৬১ শতাংশ। জার্মানির পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ হয়ত সেখানেই। 

এতকিছুর পর জার্মানির বড় সমস্যা ডিফেন্সে। রয়েস, গ্যানব্রি আর ওয়ের্নার আক্রমণ ভালভাবে সামাল দিলেও জশুয়া কিমিখের পাশে রক্ষণের বাকি তিনজনে আছে ব্যাপক সমস্যা। বায়ার্নের নিকোলাস সুলে, মানশেনগ্লাডবাখের ম্যাথিয়াস গিন্টার আর লেভারকুসেনের টাহ, কেউই ঠিক আন্তর্জাতিক মানের বা বড় অর্থে তারকা নন। সমস্যা দেখা দিয়েছে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে ঘিরেও। টনি ক্রুসের পাশে ডিফেন্সিভমিড বলতে গেলে তেমন কেউই নেই। লিভারপুল ছেড়ে জুভেন্টাসে পাড়ি জমানোর পর থেকে প্লেয়িং টাইমের অভাবে আছেন এমরে চান। আরেক জুভেন্টাস তারকা এবং বিশ্বকাপজয়ী সামি খেদিরা বয়সের ভারে হারিয়েছেন ফর্ম। 

এতকিছুর ভিড়ে তাই সত্যিই প্রশ্ন জাগে, বেকেনবাওয়ার, লোথার ম্যাথিউস, বালাক আর ক্লোসাদের উত্তরসূরীরা কি তবে সত্যিই এবার পথ হারাচ্ছে?   

লেখক- জোবায়ের আহমেদ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *