ট্রাম্প বিরোধিতার আরেক রুপ: নারী জাগরণ1 min read
Reading Time: 2 minutesসাহেদ আলম
আরো একটি নারী জাগরণ প্রত্যক্ষ করলো যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ লক্ষ নারীর পদচারণার মধ্য দিয়ে। ২০ জানুয়ারী নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো, ফ্লোরিডা, বস্টন, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া, কলরাডো, সিয়াটলসহ দুই শতাধিক সিটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তির দিন অর্থাৎ ২০ জানুয়ারি শনিবার লাখ লাখ মহিলা বিক্ষোভ করলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অ-আমেরিকান কর্মকান্ডের। গগনবিদারি স্লোগানে তারা উদাত্ত আহবান জানালেন আসছে নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টিকে কংগ্রেসের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতে।
গত বছর এই দিনে রাস্তায় যত মানুষ সমবেত হয়েছিল সেটাকে অনেকেই বলে থাকেন ,যে ট্রাম্পের জয়ের পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শফৎ নেয়ার দিন যত মানুষ হয়েছিল তার কয়েক গুন বড় ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের সাথে এদিন বিশ্বের আরো অন্তত ৪০টি শহরে মানুষ দাড়িয়ে গিয়েছিল, নারী প্রতিবাদে।নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য নারীরা ৮ মার্চকে আলাদা দিন হিসেবে পালন করে বরাবরই। কিন্তু এই ২০ জানুয়ারীর নারী জাগরণ মূলত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের সংঙ্গবদ্ধ একটি প্রতিবাদী রুপ।এবারে এই দিবসে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সহ রিপাবলিকান আর ডেমোক্রাট দলীয় কিছু আইন প্রনেতা, অভিনেতা, কমেডিয়ান প্রভৃতি মানুষের দ্বারা যৌন নিগ্রহের রেওয়াজ ভাঙার গান গেয়েছেন সমবেত জনতা। যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক প্রতিবাদ, রাজনৈতিক প্রতিবাদে নানা উথ্বানের সাক্ষী। তবে নারীদের এমন ক্রমবর্ধ সংগঠিত হওয়ার রেওয়াজ দেখা গেল পর পর দুই বছর ধরে। বিশ্লেষকরা ভাবছেন, এই জাগরন একদিন নারীদেরকে সত্যিকারের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করবে যুক্তরাষ্ট্রে আর বিশ্বজুড়ে।
২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রথমবার ইতিহাসে একজন নারীকে বড় কোন রাজনৈতিক দল (ডেমোক্রাট দল) থেকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পাওয়ার ইতিহাস রচিত হয়। কিন্তু নানা হিসাব নিকাশ, নারী বিরোধী শক্তির অব্যহত প্রচারণায় হিলারী ক্লিনটন সম্ভাবনা জাগিয়েও নির্বাচিত হতে পারেন নি। সেই সময়-ও আরেকবার অনেক বিশ্লেষক বিশ্বাস করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও নারী নেতৃত্ব মেনে নেয়ার মন মানুষিকতায় প্রস্তুত হয়নি। কিন্তু আরো অধিক সংখ্যায় নারীরা যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে দেয়ার স্বপ্ন দেখছেন সেটা নানান ভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। সর্বশেষ, অপরা উইপ্রে নামক একজন নারী সেলিব্রেটি আগামি নির্বাচনে নিজের প্রতিদ্বন্দীতা করতে পারেন বলে মনে হচ্ছে। নারীদের সংঙ্গবদ্ধ অবস্থানের কারনে, আলাবামায় কট্টর রিপাবিলান সিনেটর, ধরাশয়ী হয়েছেন, শুধু তার বিরুদ্ধে যৌন অবমাননার অভিযোগের কারনে। এসব কারণে এই নারী জাগরনকে আগামি দিনে রাজনীতির পট পরিবর্তনের নির্নায়ক হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ।
অবস্য, যাকে নিয়ে এই প্রতিবাদ তিনি ছিলেন নির্বিকার। ২০ জানুয়ারী হাজার হাজার মহিলার বিক্ষোভ দেখার সময় হোয়াইট হাউজের বারান্দায় ফার্স্টলেডি মেলানিয়াকে পাশে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রোদ্রোজ্জল আবহাওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে এক টুইট বার্তায় লিখেন, ‘আমাদের মহান এদেশের সর্বত্রই আজ চমৎকার আবহাওয়া। মহিলাদের মার্চ (মিছিল) করার জন্যে এটি অবশ্যই একটি ভালো দিন।’ ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, ‘ অপ্রত্যাশিতভাবে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারসহ সমৃদ্ধি অর্জনে গেল বছরটি ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকার মত। গত ১৮ বছরের মধ্যে গেল বছরে সবচেয়ে কম মহিলা বেকার ছিলেন। এটিও কম বড় অর্জন নয়।’
এদিন লক্ষ নারীর পদচারণায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাষ্ট্রপরিচালনা নীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ, ব্যানার স্লোগান ছিল দেখার মত। বিশেষত, অভিবাসী বিরোধী অবস্থান, কাগজপত্রহীন পিতা মাতার সন্তানদের আইনী সুরক্ষা প্রকল্প ‘ডাকা’ বাতিলের দেনদরবারে ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পুরো দোষ তাকেই দেয়া হয় আন্দোলন কারীদের তরফে। নাজুক পরিস্থিতির কঠোর সমালোচনা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রব্যাপি মহিলাদের বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে লিংকন মেমরিয়্যাল পার্কের বিক্ষোভ-সমাবেশে বক্তৃতাকালে ইউএস সিনেটর (ডেমক্র্যাট-নিউইয়র্ক) ক্রিস্টিন জিলিব্র্যান্ড বলেছেন, ‘মার্কিন কংগ্রেসে আরো বেশী মহিলা দরকার। তাই নভেম্বরের নির্বাচনে যেন মহিলারাও প্রার্থী হন। সিনেটর জিলিব্র্যান্ড উল্লেখ করেন, ‘এক বছর আগে এদিনে ট্রাম্প শপথ নেয়ার দিনও সর্বকালের বৃহত্তম মহিলা সমাবেশ হয়েছে। সে সময়েই আমরা সতর্ক করেছিলাম যে, ট্রাম্পের হাতে আমেরিকা নিরাপদ নয়। আমেরিকার ইতিহাস স-ঐতিহ্য আজ হুমকির মুখে এমন ব্যক্তির কর্মকান্ডে। তাই মহিলাদের আরো সোচ্চার হতে হবে।’
নিউইয়র্কের সমাবেশ থেকে হাইতি, আফ্রিকা, মেক্সিকোসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের সম্পর্কে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের কংগ্রেস থেকে হঠানোর সংকল্প ব্যক্ত করা হয়। এ সমাবেশে বাংলাদেশী মহিলারাও ছিলেন সন্তানসহ। তারাও ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী অভিযানকে অ-আমেরিকান হিসেবে অভিহিত করেন।
Photo Courtesy: REUTERS