অর্থনীতি

ট্রাম্প কীভাবে এত বিশাল সম্পত্তির মালিক হলেন1 min read

মে ১৭, ২০১৯ 3 min read

author:

ট্রাম্প কীভাবে এত বিশাল সম্পত্তির মালিক হলেন1 min read

Reading Time: 3 minutes

বহুল আলোচিত এবং সমালোচিত ধনকুবের, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবী করেন তার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় দশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বিখ্যাত বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বস জানিয়েছে ট্রাম্পের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; আর এই পরিমাণ অর্থ তাকে বিশ্বের ধনীদের মধ্যে ২৫৯ তম অবস্থানে নিয়ে আসে। ধনীদের মধ্যে অবস্থান এবং সম্পত্তি নিয়ে যতই টানাপোড়ন হোক না কেন এটা নিঃসন্দেহেই বলা যায় যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ যাবত কালের সবচাইতে ধনী প্রেসিডেন্ট।    

ট্রাম্পের এই অর্থের ভিত্তি 

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মার্কিন সৈন্য এবং তাদের পরিবারের কাছে ঘর বিক্রি করে মোটামুটি বিশাল সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাবা ফ্রেড ট্রাম্প। ১৯৭১ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে রিয়েল ষ্টেট কোম্পানি দিয়ে তার ব্যবসায়িক জীবন শুরু করেছিলেন, সেটা তার বাবারই গড়া। ট্রাম্প সেই কোম্পানি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সময় এটার নাম ছিল এলিজাবেথ ট্রাম্প এন্ড সন কো. পরবর্তীতে তিনি এই নাম পরিবর্তন করে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন রেখে দেন।

১৯৮০ সালের দিকে হলিডে ইন কর্পোরেশনের সাথে একত্র হয়ে তিনি আটলান্টিক সিটিতে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের হোটেল এবং ক্যাসিনো কমপ্লেক্সের ব্যবসা শুরু করেন এবং তিনি এই কমপ্লেক্সের নাম দেন হারা’স এট ট্রাম্প প্লাজা। কিছুদিনের মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক পার্টনারের সকল শেয়ার কিনে নেন এবং এই প্লাজার নাম পরিবর্তন করে রাখেন ট্রাম্প প্লাজা হোটেল এন্ড ক্যাসিনো। সফলভাবে এই ট্রাম্প প্লাজা দেয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প আটলান্টিক সিটিতে প্রায় ৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে হিলটন প্লাজা নামক আরেকটি সম্পত্তি কিনে নেন। বরাবরের মতো এই হোটেলটির নামও পরিবর্তন করে তিনি ট্রাম্প ক্যাসল রাখেন। 

তবে এর পরবর্তীতে ম্যানহাটনে ট্রাম্প আরেকটি এপার্টমেন্ট ও হোটেল কিনে নেন, কিন্তু তৎকালীন শহরের ভাড়া বিষয়ক কিছু আইনের কারণে তার ব্যবসা সেখানে অনেকটাই সংকুচিত হয়ে আসে। এরপর ১৯৮৫ সালে ট্রাম্প ম্যানহাটনে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন। তবে এই প্রকল্পের অনুমতির জন্য অপেক্ষমাণ সময়টা বেশ দীর্ঘ হওয়ার কারণে এই প্রকল্প নিয়ে ট্রাম্পের স্বপ্ন দেখায় অনেকটাই ভাটা চলে আসে।

পরপর এমন দুটি বড় প্রকল্পে ট্রাম্পের ব্যর্থ বিনিয়োগ যেন বারবার তার পতনের দিকেই ইঙ্গিত করছিল!

১৯৯০ সালে ট্রাম্প দেউলিয়া হতে যাচ্ছিলেন!  

অবশেষে ৯০ দশকের শুরুর দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেতার পালা থমকে দাঁড়ায়। দেশের অর্থনীতির দৈন্য দশা ও অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আয়ের পরিমাণও ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। ব্যাঙ্ক ঋণের সুদের বকেয়া পরিশোধ করতে রীতিমতো বেগ পোহাতে হয়। কেননা ট্রাম্পকে বাৎসরিক প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সুদ পরিশোধ করতে হতো। তৎকালীন সময়ে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ব্যাংক থেকে ট্রাম্পকে যাতে দেউলিয়া ঘোষণা করা না হয় সেজন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প তাৎক্ষনিক ভাবে তার ঋণ দাতা চার ব্যাংকের সাথে এক বৈঠকে বসেন। ট্রাম্প ব্যবসা চালু রাখার জন্য চার ব্যাংক থেকে আরো ৬৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ চান, কিন্তু এতে ব্যাংকগুলো বিপাকে পরে যায়। কেননা সে মুহূর্তে ট্রাম্পকে দেউলিয়া ঘোষণা করলে ব্যাংকগুলোকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হারাতে হতো, তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় আগামী পাঁচ বছরের জন্য ট্রাম্পের থেকে তারা কোন সুদ গ্রহণ করবে না।

১৯৯৫—ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

১৯৯৫ সালের দিলে ভাগ্যের চাকা আবার ঘুরতে শুরু করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এই বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৈরি করা ট্রাম্প হোটেল এন্ড ক্যাসিনোকে পাবলিক কোম্পানি করে দেয়া হয় এবং ৩২.৫০ ডলার শেয়ার দরে প্রায় ১৩.২৫ মিলিয়ন শেয়ার বিক্রয় করে প্রায় ২৯০ মিলিয়ন ডলার মূলধন জোগাড় হয়ে যায়। এছাড়া প্রায় একই সময়েই ট্রাম্পের প্রথম দিকের একটা বিনিয়োগ গ্র্যান্ড হ্যাট বিল্ডিং ব্যাবসায়িক ভাবে বেশ সফল হয়ে যায় এবং তাৎক্ষনিক ভাবে ট্রাম্প প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এই সম্পত্তিটি বিক্রি করে দেন। এছাড়া তৎকালীন সময়ে আরো বেশ কিছু বিনিয়োগ বেশ ব্যবসা সফল হয়ে যায় তার মধ্যে ট্রাম্প বিল্ডিং বেশ উল্লেখযোগ্য।

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পত্তি

১৯৯৯ সালের দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাবা ফ্রেন্ড ট্রাম্প প্রায় ২৫০ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পত্তি রেখে মারা যান। যদিও সেখান থেকে ঠিক কি পরিমাণ সম্পত্তি তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন সেটার কথা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। যদিও পরবর্তীতে ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে সকল ট্যাক্স কাটার পরেও ফ্রেড ট্রাম্প তার সন্তানদের মাথাপিছু প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার করে ভাগ করে দিয়েছিলেন। এছাড়া ২০০৩ সালের দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার পরিবারের সদস্যরা মিলে তাদের বাবার রিয়েল এস্টেট সম্পত্তি প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলারে বিক্রয় করে দিয়েছিলেন বলে তথ্য প্রকাশিত হয়।

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি ছাড়াও সারা জীবন ধরে ফ্রেন্ড ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে তার ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন এবং তার রাজনৈতিক যোগসূত্র কাজে লাগিয়ে ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে দিয়েছিলেন।

বিগত কয়েক দশকের বিনিয়োগ এবং ব্যাবসায়িক সাফল্য পর্যালোচনা করে এটা বলাই যায় যে ট্রাম্প নামটাই এখন ঠিক কোকা কোলা অথবা নাইক- এর মতো একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়ে গেছে। এর পেছনের কারণের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সকল প্রকল্পে ব্যাবসায়িক বিনিয়োগ করেছেন তার সবগুলোর সাথে তিনি “ট্রাম্প” নামটা জুড়ে দিয়েছেন। যার ফলে বিগত কয়েক দশক ধরে চলে আসা ব্যবসা এবং বিনিয়োগগুলো এই নামটার সাথে জুড়ে দিয়েছে মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা। আর এই আস্থার কারণেই প্রায় দেউলিয়া হয়ে পরা অবস্থা থেকেও নতুন উদ্যমে উঠে এসেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।   

লেখক- ইকবাল মাহমুদ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *