ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসনের ব্যাপারে তদন্ত1 min read
Reading Time: 2 minutesডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসনের ব্যাপারে তদন্ত নিয়ে এখন চলছে বিশ্বব্যাপী তোলপাড়। থ্যাংকস গিভিং দিবস আর ক্রিসমাসের অনুষ্ঠানের ফাঁকেই আমেরিকার সর্বস্তরের জনগণ এখন নজর রাখছে পুরো বিষয়টির উপর। উল্লেখ্য যে, বিগত জুলাই মাসের পঁচিশ তারিখে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কথোপকথন ঘিরেই শুরু হয়েছে পুরো বিষয়টি। এই কথোপকথনের মূল বিষয় ছিল ২০২০ সালের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার ছেলে হান্টারকে ঘিরে।
এই কথোপকথনের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে এক প্রকার চাপ প্রদান করেন যাতে করে তিনি জো বাইডেন এবং হান্টারের বিরুদ্ধে তাদের অতীত ব্যবসায়ের দুর্নীতি নিয়ে ইউক্রেনে একটি জোর তদন্ত শুরু করেন।
এই কথোপকথনটি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে শুরু হয় কানাঘুষা এবং এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ তারিখ থেকেই অভিশংসন তদন্তটি শুরু করে দেয় ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি প্রতিনিধি পরিষদ। এদিকে এর বিরুদ্ধচারন করে আদালতের দারগ্রস্ত হওয়ার পর একটি আদালত থেকে রায় বের হয় যে, এই তদন্তটি সম্পূর্ণ রূপে বৈধ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানদের মতে উক্ত প্রতিনিধি দলটি কোন রূপ প্রস্তাব পাস না করেই এই তদন্ত শুরু করে, যার ফলে এই তদন্তের কোন বৈধতা নেই। তবে এই সূত্রে ডেমোক্রেটদের মন্তব্য ছিল, সংবিধানে উক্ত পরিষদকে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষমতা দেয়া আছে যাতে করে তারা এমন একটি তদন্ত শুরু করতে পারে। আর এ নিয়ে আদালতের দেয়া রায়ের ফলে বলতেই হয় প্রাথমিক ভাবে এই দ্বৈরথে ডেমোক্র্যাটিকরাই কিছুটা হলেও এগিয়ে আছে।
এদিকে এই তদন্তের সূত্র ধরে ২০১৬ সালে হয়ে যাওয়া নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিয়ে উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। কেননা এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষ কৌসুলি রবার্ট ম্যুলার একটি তদন্ত করেছিলেন আর বর্তমান আদালত সেই প্রতিবেদনের অনুলিপি জমা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ জারি করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই অভিশংসন তদন্তটির উপর আমেরিকার হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির একটি উন্মুক্ত শুনানি শেষ হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এই শুনানিতে তিনি আসছেন না। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে জুডিশিয়ারি কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান জেরল্ডকে ডিসেম্বরের এক তারিখে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে এই শুনানিতে ট্রাম্প আসছেন না। এছাড়া হোয়াইট হাউস থেকেও কেউ শুনানিতে অংশ গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউজের বক্তব্য হল, পুরো বিষয়টি পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং এক-পাক্ষিক।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম উপদেষ্টা প্যাট এ সিপোলোন স্বাক্ষরিত এই চিঠি সম্পর্কে মার্কিন গণমাধ্যম নিউজউইক এর একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই পুরো শুনানি একদমই পক্ষপাতদুষ্ট। কেননা এই শুনানির জন্য সময়টি এমন ভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যে সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটো বৈঠক নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকবেন।
এছাড়াওএই শুনানির সাক্ষীদের নাম প্রকাশ পর্যন্ত করা হয় নি। যার ফলে বিষয়টি পুরোপুরি পরিষ্কার যে এখান থেকে ন্যায্য শুনানির প্রত্যাশা করা সম্ভব নয়। এছাড়াও মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেহেতু ন্যাটো বৈঠক নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন তাই তিনি বাড়তি সময় পাবেন কি পাবেন না সে বিষয়েও জুডিশিয়ারি কমিটি থেকে স্পষ্ট কোন কিছু জানানো হয়নি।
এখন একটাই প্রশ্ন উঠে আসছে পুরো বিশ্বব্যাপী, ডোনাল্ড ট্রাম্প কি আসলেই অভিসংশিত হতে যাচ্ছেন কি না? উল্লেখ্য যে ইতোপূর্বে ঠিক এমনই এক পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এছাড়াও ১৮৬৮ সালের দিকে আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট জনসনকে ঘিরেও এমনই এক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো অতটা রুঢ় পরিস্থিতির মুখোমুখি হন নি। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কি অচিরেই পড়তে যাচ্ছেন কি না সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। কেননা সিনেটে এই প্রস্তাব পাশ হতে হলে রিপাবলিকানদের থেকেও নুন্যতম ২০টি ভোট নিজের দলের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে পড়তে হবে।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরো বিষয়টিকে মিথ্যে এবং ষড়যন্ত্র বলে অস্বীকার করে আসছেন। এখন দেখার বিষয় একটিই এই তদন্ত ঠিক কতদিন পর্যন্ত চালু রাখা সম্ভব এবং আদৌ কি এই তদন্ত থেকে কোন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোন ফলপ্রসূ প্রতিবেদন উঠে আসে কি না!