জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিয়ে মোদির “পলিটিক্স”1 min read
Reading Time: 2 minutes“পলিটিক্স” বোঝা আমজনতার জন্য একটু কঠিনই বটে। সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে নিজ স্বার্থ উদ্ধারে সিদ্ধহস্ত রাজনীতিবিদরা কখন কি করে বসবেন সেটা আন্দাজ করার মতো জটিল ও কুটিল মস্তিস্ক সবার থাকে না। তাই প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বর্তমান “পলিটিক্স” বুঝতে হলে আপনার মস্তিস্কের সকল দরজা জানালা খোলা রেখেই বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
নরেন্দ্র মোদি প্রচারে থাকতে ভালোবাসেন। বলিউডের কোন সুপারস্টারের চাইতে ভারতে তার জনপ্রিয়তা কম নয়। সাম্প্রদায়িকতা আর জাতীয়তাবাদের বুলি আওড়িয়ে দাপটের সাথে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতার সিংহাসনে বসেছেন।ক্ষমতায় আসার পর মোদির জনপ্রিয়তার পারদ যেন আরও ঊর্ধ্বমুখী। সময়ের সাথে সাথে তিনি ধর্মান্ধ ও উগ্র জাতীয়তাবাদ মনের মধ্যে লালন পালন করা ভারতীয়দের কাছে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন।
নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে ভারতীয়দের আবেগ কাজে লাগানোয় মোদি তৎপর ছিলেন। তার এই পদক্ষেপকে কংগ্রেসসহ আরও অনেকেই ধিক্কার জানিয়েছিল। কিন্তু তাতে মোদির কি আসে যায়? জাতীয়তাবাদী ভারতীয়রা তাতে মোদির ওপর ছিল ব্যাপক খুশি। নির্বাচনের পর চিরশত্রু পাকিস্তানের নাকের ডগায় কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা সমৃদ্ধ রাজ্য থেকে বিভক্ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে আবারও তিনি অনেক ভারতীয়র কাছে নায়ক বনে যান।
ধর্ম নিরপেক্ষ ভারত মোদি সরকারের হাত ধরে যে হিন্দু রাষ্ট্র হওয়ার পথে এটাও এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিতর্কিত বাবরি মসজিদের রায়ে মহামান্য আদালত যুক্তি আর ধর্মীয় আবগের সীমারেখা কতটুকু মেনে রায় দিয়েছে সেটা নিয়েও কথা হয়েছে অনেক। কিন্তু রায়টি যেহেতু আদালতের তাই এখানে মোদি সরকারের দায় খুঁজতে না যাওয়াই উত্তম। তবে বাবরি মসজিদের রেশ না কাটতেই ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে আবারও আলোচনায় মোদির সরকার।
লোক সভা ও রাজ্য সভায় পাশের পর বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিলটিতে ইতিমধ্যেই স্বাক্ষর করে ফেলেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ফলে নতুন নাগরিকত্ব বিলটি এখন ভারতের আইনের অংশ। নতুন এই আইনের ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারের শিকার হওয়া হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা সহজেই ভারতের নাগরিক হতে পারবেন। পূর্বের আইনে ভারতের নাগরিক হতে হলে ১২ বছর ভারতে অবস্থান করতে হতো, বর্তমান আইনে তা কমিয়ে করা হয়েছে ৬ বছর। কিন্তু নতুন আইনের সমস্যা অন্য জায়গায়।
এই আইনের মাধ্যমে ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিক হবার যোগ্যতা নির্ধারণ হয়েছে। শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের এই সু্যোগ থেকে করা হয়েছে বঞ্চিত। এই বিলটি ভারতের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা সেটা নিয়ে বুদ্ধিজীবীরা যখন আলোচনা সমালোচায় ব্যস্ত তখন ভারতের অনেক রাজ্যের সাধারণ মানুষেরা এই আইনের বিপক্ষে নিজেদের কণ্ঠ জানান দিতে নেমে এসেছে রাজপথে। বিচিত্র ব্যাপার হলো সব রাজ্যের মানুষ কিন্তু এক উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নামেন নি।
বিলটি মুসলিম বিরোধী এই শ্লোগানে আন্দোলন করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গবাসী। কিন্তু আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় রাজ্যের জনগণ নেমেছে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সকল বাঙ্গালীদের ভারত থেকে হটানোর দাবিতে। তাদের আশঙ্কা এই আইন কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশীদের নাগরিকত্ব পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতিমধ্যে আসাম, মেঘালয় রাজ্যের অনেক স্থানে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশের গুলিতে দুইজন বিক্ষোভকারী আসামে নিহত হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। সেখান আটক করা হয়েছে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে। আন্দোলনের আগুন যেন সারা দেশে ছড়িয়ে না পরে সেজন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আসামের ১০ জেলার ইন্টারনেট সুবিধা। একই অবস্থা মেঘালয়েও। সেখানে মোবাইল মেসেজিং সার্ভিস এবং ইন্টারনেট সুবিধা দুদিনের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। এমনকি ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে।
এনআরসি নিয়ে চলমান বিতর্কের সাথে নতুন নাগরিকত্ব আইন যে বিজেপিকে চাপে নতুন করে চাপে ফেললো এতে কোন সন্দেহ নেই। এক পাশে এনআরসির মাধ্যমে ভারত থেকে বাঙ্গালী বিতড়ন আরেক পাশে নতুন আইনের মাধ্যমে মুসলিম ব্যতীত অন্য ধর্মাবলম্বীদের ভারতের নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ করে দেয়া হলো। জাতীয়তাবাদ ও সেই সাথে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র গড়ে তোলার যে অদৃশ্য আগুন নিয়ে মোদি খেলছেন তার ফলাফল ভেবে দেখার সময় কিন্তু এখনই।