বিশ্ব

চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা 1 min read

জুন ১৪, ২০২০ 2 min read

author:

চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা 1 min read

Reading Time: 2 minutes

সীমান্ত নিয়ে চীনের সাথে ভারতের বিরোধ বহু পুরনো। এই দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৪৮৮ কিলোমিটার। দীর্ঘ এই সীমারেখায় কিছু অমীমাংসিত অঞ্চল নিয়েই এই বিরোধ। অমীমাংসিত অঞ্চলগুলো হলো আকসাই চীন (ভারতীয় অংশে লাদাখ) এবং অরুণাচল প্রদেশ।

১৮৫৬ সালে প্রস্তাবিত জনসন লাইন অনুসারে আকসাই চীন ভারতের অন্তর্গত লাদাখের একটি অংশ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু চীন জনসন লাইন সম্পূর্ণরূপে অমান্য করে আকসাই চীনকে নিজেদের এলাকা বলে ঘোষণা করে। ১৯৬২ সালে আকসাই চীন এবং অরুণাচলের একাংশ দখল করে নেয় চীন। সংঘাতের সূত্রপাত মূলত এখান থেকেই। এছাড়াও চীনের সাথে ভারতের সম্পর্কের অবনতির অন্য একটা মুখ্য কারণ হলো, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত তিব্বতের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা দালাই লামাকে ১৯৫৯ সালে ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান। অনেকেই মনে করেন, দালাই লামাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার কারণেই ভারতের উপর চীন এমন প্রতিশোধমূলক আচরণ করেছিলো। এসব কারণে যে সীমান্ত সমস্যার শুরু হয় তা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের সূচনা করে। ১৯৬২ সালে সংঘটিত সেই চীন-ভারত যুদ্ধে ভারত পরাজিত হয়। এদিকে যুদ্ধজয়ী চীন একতরফা ভাবেই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে এবং আকসাই চীনকে নিজেদের দখলে রেখে অরুণাচল অংশকে ভারতের কাছে ফিরিয়ে দেয়।

যুদ্ধ শেষে উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয় বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং সীমান্তে সহিংসতা বন্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। কিন্তু তারপরেও সীমান্তে দুই দেশের বিরোধ নিষ্পত্তি কখনোই সম্ভব হয় নি। দুই দেশই এরপর বেশ কয়েকবার সীমান্ত নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছে।

তবে সাম্প্রতিক চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধের শুরুটা করেছিল চীন। ৫ মে ভারতীয় সেনারা লাদাখের এলএসির গালওয়ানে রাস্তা তৈরি করার প্রস্তুতি নিলে চীন বাধা দেয়। ঐদিনই আবার চীন-ভারত সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল প্যাংগং হ্রদে ভারতীয় টহল দলকে টহল দিতে বাধা দেয় চীনারা। এই ঘটনার পর থেকেই সীমান্তে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ফলশ্রুতিতে চার দিন পর সিকিম-তিব্বত সীমান্তের নাকুলা এলাকায় দুই দেশের সৈন্যরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি এবং ঢিল ছোড়াছুড়ির মতো ঘটনাও ঘটে।

ভারতের দাবী, চীনা সেনারা ভারত নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছিলো। অন্যদিকে চীন বলছে, ভারতীয় সেনাদের আচরণ ছিলো উস্কানিমূলক। এই ঘটনার পর এলএসির উভয় পাশে চীন ৮০-১০০ টি তাঁবু স্থাপন করে এবং ভারতও প্রায় ৬০ টি তাঁবু স্থাপন করে। সীমান্তে উভয় দেশই নিজেদের তৎপরতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি চীনা প্রেসিডেন্টের সেনাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানোর পর থেকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে থাকে।

তবে ঘটনার শুরু থেকেই ভারতীয় সরকার সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করছে। উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি তারা। বরং ভারত চীনকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য জোর তাগিদ দিচ্ছিল। চীন ভারতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কয়েক দফায় কূটনীতিক এবং সামরিক বৈঠকে বসে। বৈঠক শেষে চীন এবং ভারত উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথক বিবৃতিতে জানায় যে, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও ভারসাম্যের সম্পর্ক রক্ষায় যথেষ্ট ইতিবাচক। আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধনই শান্তিপূর্ণভাবে সম্ভব।

এদিকে ভারতের বুদ্ধিজীবী মহলের এক অংশের দাবী, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় ব্যর্থতাসহ অতীতের আরও অনেক ব্যর্থতা ঢাকতে মোদি সরকারের জন্য এই সীমান্ত উত্তেজনা আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। চীনের উদ্দেশ্যও এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে হংকং নিরাপত্তা আইন পাশ করিয়ে নেওয়া। বেইজিং শেষ পর্যন্ত হংকং নিরাপত্তা আইন করিয়ে নিয়েছে। সুতরাং চিন্তা করার কিছুই নেই। সীমান্তে এই উত্তেজনা বিবাদে জড়াবে না। বরং শীঘ্রই সমাধানে পৌঁছাবে দুই দেশ।

লেখক- নিয়ন রহমান

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *