গেম অফ থ্রোন্স: মহারণের মহাসমাপ্তি1 min read
Reading Time: 4 minutesসকল জল্পনা কল্পনা আর প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শুরু হয়েছে টেলিভিশন ইতিহাসের অনবদ্য এক সৃষ্টি ‘গেম অফ থ্রোন্স’এর সর্বশেষ সিজন। এ বছর মার্চের ৫ তারিখে শেষ সিজনের ট্রেইলার মুক্তির পরপরই আবার নতুন উদ্যমে শুরু হয় এর উন্মাদনা। দুনিয়ার লাখ লাখ দর্শকের চোখ আজ থেকে তাই নিবদ্ধ HBO এর পর্দায়।
সৃষ্টির শুরু
‘গেম অফ থ্রোন্স’ টিভি সিরিজটি যে মার্কিন লেখক জর্জ আর মার্টিনের ‘A Song of Ice & Fire’ সে কথা অনেকেরই জানা। জন টলকিনের প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তিই মার্টিনের এই সুদীর্ঘ উপন্যাসের মূল অনুপ্রেরণা। টলকিনের ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই সিরিজ লেখায় মনোনিবেশ করেন মার্টিন।
১৯৯১ সাল থেকে লেখা শুরু করলেও সিরিজের প্রথম বই প্রকাশ পায় ১৯৯৬ সালে। প্রাথমিকভাবে ৩ পর্বে যবনিকার ইচ্ছে থাকলেও পরে সেটা নিয়ে যান পঞ্চম পর্ব অব্দি। এর ষষ্ঠ কিস্তি The Winds of Winter লেখা শেষ হলেও প্রকাশ পাচ্ছেনা এখনই। আর হ্যাঁ, সিরিজের সর্বশেষ বইয়ের নামও কিন্তু জানা– A Dream of Spring.
ছোট পর্দার ভাবনা
২০০৬ সালে হঠাৎই জর্জের কাছে ফোন করেন প্রযোজক ডেভিড বেনিওফ। প্রস্তাব দেন তাঁর ‘A Song of Ice & Fire’ সিরিজ চিত্রায়নের। পরবর্তীতে এক রেস্তোরাঁয় বেনিওফ আর ওয়েসের সাথে ৫ ঘণ্টার মিটিং শেষে জর্জের অনুমতি মেলে। তবে এই অনুমতি মেলার পেছনে একটা ছোট্ট টুইস্ট আছে। জর্জ যাচাই করবার জন্য ওয়েসকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘বলো তো জন স্নোর মা কে?’ ওয়েসের সঠিক উত্তরের উপরই আসলে নির্ভর করছিলো অনুমতির। ভাবুন তো, ওয়েস যদি ভুলে যেতো উত্তরটা অথবা ভুল করে বসতো? তাহলে হয়তো শতাব্দীর এই সেরা সিরিজের দেখাই মিলতো না।
এর আগে অবশ্য অনেক প্রযোজক ও স্ক্রিন রাইটারের কাছে ধর্না দিয়েছিলেন জর্জ। কিন্তু কেউই খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। অবশেষে বেনিওফ এবং ওয়েসের সাথেই জুটি বেঁধে সিরিজের কাজ শুরু করেন মার্টিন। ২০০৭ সালে HBO এর গ্রন্থস্বত্ব ও সিরিজ স্বত্ব কিনে নেয়। ২০০৮ থেকে লেখা স্ক্রিপ্ট HBO কমিটি কর্তৃক গৃহীত হয় ২০১০ সালের মার্চে। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে শ্যুট করা সিরিজের প্রথম কিস্তি প্রচারিত হয় ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে জুনে। প্রথম সিরিজের বেলায় এত তীব্র উন্মাদনা না থাকলেও দর্শক– সমালোচকের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয় সিরিজটি। সেবার এমি এ্যাওয়ার্ডে জিতে নেয় ১৩ টি পুরস্কার। প্রথম সিজনে মাত করার পরেই আসলে শুরু হয় এর প্রতি মানুষের আগ্রহ। প্রতি সিজনে যেমন মত্ততা বেড়েছে একে ঘিরে তেমনি পুরস্কারের ঝুলিও হয়েছে সমৃদ্ধ।
শেষ সিজনের কড়চা
এখন সম্প্রচারিত হচ্ছে সর্বশেষ সিজন ৮। প্রথমদিকে এপিসোড সংখ্যা ১০ টি করে হলেও সিজন ৭ এ তা নেমে আসে সাতটিতে। আর এবারের পর্ব সংখ্যা হলো মাত্র ৬। এই সিজনের শ্যুটিং ২০১৭ সালের অক্টোবরে শুরু হয়ে ২০১৮ এর জুলাই অব্দি চলে। আর আজ থেকে সম্প্রচার শুরু হয়ে এটি চলবে মে মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত।
এবারের পর্বগুলোর জন্য স্ক্রিপ্ট লিখেছেন ডেভ হল, ব্রায়ান কগম্যান, ডেভিড বেনিওফ এবং ডি বি ওয়েস। আর বিভিন্ন পর্ব পরিচালনার ভার নিয়েছেন ডেভিড নাটার, ডেভিড বেনিওফ, ডি বি ওয়েস এবং মিগেল সাপোচিক।
এই শেষ সিজন নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা বর্তমান। গুজব আছে,সিরিজের খল চরিত্র সারসেই ল্যানিস্টার মারা যেতে পারেন এই শেষ সিজনে। শুধু তাইনা, দুইটি নতুন শিশু চরিত্রকেও দেখা যাবে এবার। তবে সবচাইতে চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে , এই সিজন সম্ভবত ওপেন এন্ডিং থিওরি মতে শেষ হবে। সূত্রমতে, একাধিক এন্ডিং ধারণ করা হয়েছে। অতএব বোঝাই যাচ্ছে, দর্শক তার ইচ্ছেমত ভেবে নেবার স্বাধীনতাটা পাচ্ছেন এবারের সিজনে।
দীর্ঘতম পর্ব
সর্বশেষ সিজনের কয়েকটি এপিসোড দৈর্ঘ্যের দিক থেকে অন্য সিজনের চাইতে একটু বেশিই হবে। দীর্ঘ পর্বগুলো হবে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের।
গগনচুম্বী বাজেট
বাজেটের দিক দিয়ে অসামান্য উদাহরণ স্থাপন করেছে GOT। সিজন ১ থেকে ৫ এর প্রতিটি পর্বের বাজেট ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে থাকলেও সিজন ৬ থেকে সেটা বদলে দাঁড়িয়েছে ১০ মিলিয়নে। আর এই সিজন ৮ এর প্রতিটি পর্ব তো ১৫ মিলিয়নের উপর ঠায় দাঁড়িয়ে! কোন টিভি সিরিজের জন্য এত খরচা শুধু আকাশচুম্বীই না, রেকর্ডও।
বাড়তি পাওনা ডকুমেন্টরি
গেম অফ থ্রোন্স’কে নিয়ে একখানা ডকুমেন্টরিও প্রস্তুত। Game of Thrones: The Last Watch নামক এই ডকুমেন্টরিটি HBO তে রিলিজ পাবে এই বছরেরই ২৬ মে।
মূল বই- মিল অমিল
‘গেম অফ থ্রোন্স’ সিরিজের বইয়ের অনুকরণে তৈরি হলেও বইয়ের ধারাবাহিকতার সাথে কিন্তু সম্পূর্ণ মিল রাখা হয়নি টিভি সিরিজের। এর প্রথম দুই সিজন ‘A Game of Thrones’ এবং ‘A Clash Kings’ এই দুই বই অনুসারে হলেও তৃতীয় সিজন ‘A Storm of Swords’ বইটির শুধুমাত্র অর্ধেকের রূপদান করে। তবে চতুর্থ সিজনে এই বইয়ের বাকি অর্ধেকটা দেখানো হয়। এর সাথে থাকে চতুর্থ ‘A Feast for Crows’ ও পঞ্চম ‘A Dance with Dragons’বইয়ের কিছু অংশও। পঞ্চম সিজনেও এই দুই বইয়ের পাশপাশি ষষ্ঠ ‘The Winds of Winter’ এর কিছু চ্যাপ্টার সংযোজিত হয়।
বইয়ের লেখক জর্জ মার্টিনের মতে বইয়ের চাইতে টিভি সিরিজেই বেশ খোলতাই হয়েছে কিছু চরিত্র; বিশেষত ওশা এবং শায়ে চরিত্র দুটি। সিরিজের অধিকাংশ অভিনেতা–অভিনেত্রীই মূল বই পড়েন নি স্রেফ প্রভাবিত হবার ভয়ে!
ক্যামেরার কারসাজি
যেহেতু গোটা সিরিজটাই বলেছে কাল্পনিক এক রাজ্য, তার দ্বন্দ্ব, সংঘাত এবং ড্রাগনদের কথা– স্বভাবতই ক্যামেরা আর সিজিআই কারসাজি থাকবেই। এ বিষয়ে মজার দুটো তথ্য দেই। সিরিজে ওয়েস্টেরসকে নর্থের আঘাত থেকে রক্ষাকারী যেই বিখ্যাত দেয়াল দেখা যায় সেটার উচ্চতা ৭০০ ফুট বলা হলেও আদতে কিন্তু মাত্র ১৭ ফুট!
আর ড্রাগনের রূপায়ন কীভাবে হয় জানলে বেশ চমকেই যাবেন। কাল্পনিক ড্রাগনগুলোর চলাফেরার দৃশ্যায়নের জন্য ব্যবহার করা হয় বিড়াল, মুরগির মতো প্রাণীদের। আর সাথে সিজিআই আর ভিজুয়াল ইফেক্টসের কারিশমা তো আছেই!
টিভি সিরিজের ইতিহাস লেখা হলে ‘Friends’, ‘Dexter’,’The Office’ প্রভৃতির জায়গাটা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ওপরেই। কিন্তু সেসব তালিকা থেকে বদলে একেবারে নিজস্ব ঘরানার নাম আর উন্মাদনা সৃষ্টির জন্য রাজসিক মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে দুর্দান্ত এক সিরিজ ‘Game of Thrones’।