খাসোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজ সালমান জড়িত: জাতিসংঘ1 min read
Reading Time: 2 minutesতুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। আর এতে আবারও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সৌদি আরব। সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জড়িত থাকার ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ আছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিচারবহির্ভূত ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ড বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যাগনেস কায়ামার্ড খাসোগি হত্যা নিয়ে তার ১০০ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার অভিযোগে তদন্ত করা উচিত। সৌদি আরবের আরও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ আছে বলে দাবি করেন তিনি।
কায়ামার্ড ছয় মাসের তদন্তের ভিত্তিতে করা তার প্রতিবেদনটিতে বলেন, “খাসোগি একটি ইচ্ছাকৃত, পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, যার জন্য সৌদি আরব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে দায়ী।” এই প্রতিবেদনে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে চূড়ান্ত কোন উপসংহারে পোঁছান নি তিনি। তবে তিনি সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কিছু নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৭ সদস্যের সামনে এই প্রতিবেদনটি আগামী ২৬ জুন উপস্থাপন করা হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৭ সদস্যের মধ্যে সৌদি আরবও রয়েছে।
এদিকে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর জাতিসংঘের প্রতিবেদনটিকে “নতুন কিছু না বলে” উল্লেখ করেছেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন, “মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিবেদনটিতে স্পষ্ট স্ববিরোধ এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ রয়েছে যা প্রতিবেদনটির বিশ্বাসযোগ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে।”
প্রতিবেদনটি তৈরি করতে কায়ামার্ড একটি ফরেনসিক ও আইনি বিশেষজ্ঞ দলের সাথে তুরস্ক গিয়েছিলেন। তিনি তুরস্ক কর্তৃপক্ষের থেকে খাসোগি হত্যার আলামত সংগ্রহ করেন। তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেট থেকে পাওয়া অডিও রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করেন। তদন্তের খাতিরে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তিনি হত্যাকাণ্ডের সময়কার সিসিটিভি ফুটেজও দেখেছেন। ৬ মাস তদন্তের পর তিনি তার এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করলেন।
কায়ামার্ড তার প্রতিবেদনে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পুনরায় তদন্ত করার মতো উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে এই হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত করার আবেদন জানান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইকেও খাসোগি হত্যার তদন্তের জন্য অনুরোধ করেছেন। খাসোগি যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন এবং তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি তুরস্কে ঘটেছে তাই এই হত্যাকাণ্ড বিচারের অধিকার তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের আছে বলে মনে করেন তিনি।
তুরস্কের তদন্ত কার্যক্রমে বাধা দেওয়ায় জন্য সৌদি আরব ইচ্ছাকৃতভাবে চেষ্টা করেছিল এবং হত্যাকাণ্ডের জায়গাটি পুরোপুরি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করেছিল বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।
সৌদি আরব প্রথমে জামাল খাসোগি হত্যার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা বারবার অস্বীকার করলেও আন্তর্জাতিক চাপ এবং তুরস্কের কারণে এক সময় স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়। সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী আদেল আল জুবেইর জানান, ক্রাউন প্রিন্স সালমানের অজ্ঞাতে এক বিদ্রোহী অপারেশনে মারা গেছেন খাসোগি। ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি এগারোজন সন্দেহভাজনকে এ হত্যার অভিযোগে সৌদি আদালতে তোলা হয়। এর মধ্যে রহস্যজনকভাবে ২ জনের অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। কিন্তু জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলছেন এই ঘটনায় সৌদির বিচার প্রক্রিয়ার মান গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা স্থগিত করা উচিত।
এত দিন সৌদির ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র খাসোগি হত্যার ব্যাপারে সৌদির যুবরাজের পক্ষ নিলেও জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের পর তা ধরে রাখবে কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লেখক- হাসান উজ জামান
আরও পড়ুন- জামাল খাসোগি– কি ঘটেছিল তাঁর ভাগ্যে?
আরও পড়ুন- এক বছরে নিহত ৯৫ সাংবাদিকঃ আইএফজে