কাশ্মীরের সর্বশেষ পরিস্থিতি1 min read
Reading Time: 2 minutesভারত যদিও বারবার দাবী করে আসছে কাশ্মীর তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যু, কিন্তু এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মণ্ডলে নিত্য আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এরই মধ্যে দেশটির উচ্চতর আদালত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকা কাশ্মীরের অবস্থা আগের মতো স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ প্রদান করেছে। এছাড়া উচ্চতর আদালত জাতীয় ভাবমূর্তি ও স্বার্থের কথা বিবেচনা করার ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
উচ্চতর আদালতে নির্দেশ
গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতির অধীনে গঠিত উচ্চতর আদালতের একটি বেঞ্চ থেকে এই ধরনের নির্দেশিকা দেয়া হয়। এই সময়ে বিচারকরা বলেন, কাশ্মীরের জন সাধারণের কথা বিবেচনা করে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য আমরা এই নির্দেশনা দিয়েছি কেন্দ্রীয় সরকারকে।
তবে এই অবরোধ ও বিভিন্ন বিধিনিষেধ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতকে বলা হয়েছে, সেখানে নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায় কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বিশেষ করে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এই বিষয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, কাশ্মীরে এই অবরোধ অবস্থায় একটি গুলিও চলেনি।
জম্মু-কাশ্মীরের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আটক
তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সমস্যা সমাধানের পথে না গিয়ে বরং পুরো বিষয়টি আরো ঘোলাটে হয়ে উঠেছে পুলিশের দ্বারা জম্মু কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর আটক হওয়ার মাধ্যমে। উল্লেখ্য যে, পুলিশ ইতোপূর্বে আটক না করলেও নিজের বাসায় মোটামুটি গৃহবন্দী অবস্থাতেই দিন কাটাচ্ছিলেন তিরাশি বছর বয়স্ক জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আব্দুল্লাহ। এ সম্পর্কে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভারতের সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির একটি বিবৃতিতে উঠে এসেছে, পাবলিক সেফটি এক্ট নামক কঠোর একটি আইনের আওতায় পুলিশ তাকে আটক করেছে। এই আইনটি একটু কঠিনই বটে, কেননা এই আইনের আওতায় কোন ধরনের বিচার ছাড়াই আটককৃত ব্যক্তিকে দুই বছর পর্যন্ত পুলিশ আটকে রাখতে পারবে। এর আগে ফারুক আবদুল্লার ছেলে জম্মু-কাশ্মীরের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহকেও আটক করা হয়েছিল।
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘের একটি সভায় নরেন্দ্র মোদীর যোগ দেয়াকে কেন্দ্র করেই এই গ্রেফতার হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। উক্ত সভার আগে যেন ফারুক আবদুল্লাহ মিডিয়ার সামনে সরকারের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রদান করতে না পারেন, ঠিক তার জন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কাশ্মীরে কিশোর আসরার মৃত্যু নিয়ে দ্বিধা
১৭ বছর বয়সী আসরার মারা গিয়েছেন কাশ্মীরে। কিন্তু ঠিক কীভাবে তিনি মারা গিয়েছিলেন, সে প্রশ্নের উত্তরে দ্বিধার সৃষ্টি করেছে দুই ধরনের মন্তব্য। এই কিশোরের পিতার দাবী, টিয়ার শেলের এবং গুলির আঘাতের কারণে মারা গিয়েছে আসরার। অপরদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে বক্তব্য দেয়া হয়েছে যে, পাথর ছুড়াছুড়ির মধ্যে পাথরের আঘাতে মৃত্যু হয় কিশোর আসরারের।
আসরারের মতই রফিক শাগু নামক এক ব্যক্তির স্ত্রী ফাহমিদার মৃত্যু ঘিরেও চলছে উভয় পক্ষের বাক বিতণ্ডা। মৃতার স্বামীর বক্তব্য হল, নিরাপত্তা বাহিনীর ছোঁড়া একটি কাঁদানে গ্যাস বাসার মধ্যে ঢুকে গেলে দম বন্ধ হয়ে মারা যায় ফাহমিদা। তবে সেনাবাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
হাজারো অভিযোগের মূল কেন্দ্রবিন্দু জম্মু-কাশ্মীর
এখন যোগাযোগ ব্যবস্থাই জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ জনগণের শত অভিযোগের প্রধান কারণ। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলেই জনমনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করছে। স্থানীয় মানুষ সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলেও অনেক মহল থেকে অভিযোগ আসছে। কিন্তু কোন রকম অভিযোগ নিয়ে আদালত পর্যন্তও যেতে পারছে না বলে জানান সমাজকর্মী এনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়ের আইনজীবী। তার ভাষ্যমতে কাশ্মীরে ১৮ বছর থেকে ছোট শিশুদের পর্যন্ত অবৈধ ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে।
কাশ্মীরের অনেক ধরনের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে আসলেই কি ঘটছে সেটা অনেকেই জানতে পারছেন না। আর তাই ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন এই বিষয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি জানার জন্য প্রয়োজন হলে তিনি কাশ্মীরে যেয়ে নিজের চোখে সবকিছু দেখে আসবেন। উল্লেখ্য যে, কাশ্মীর টাইমসের সম্পাদকের করা একটি মামলার শুনানি দেয়ার সময় এই মন্তব্য করেন ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
এদিকে সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও প্রায় ৪০০ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে আটক করে রেখেছে কাশ্মীরে অবস্থান নেয়া নিরাপত্তা বাহিনী। হাজারো অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা কাশ্মীর ঘিরে তাই পরিস্থিতি এখন বেশ নাজুক আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থা থেকে কাশ্মীর শীঘ্রই বের হয়ে আসবে এমন ধারনা করাও এখন নেহায়েত বোকামি বলেই মনে হতে পারে।