Site icon Bangla Info Tube

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের কার্ডিফ স্মৃতি

অস্ট্রেলিয়ার সাথে মোহাম্মদ আশরাফুলের সেই মহাকাব্যিক সেঞ্চুরি, পাশে অসহায় অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিং। Photo Credit: espncricinfo.com

Reading Time: 3 minutes

অস্ট্রেলিয়ার সাথে একটা সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের আকাশ-পাতাল তফাত থাকলেও সময়ের সাথে সেটি কমেছে নিশ্চয়ই। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাথে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে তেমন আগ্রহ না দেখানোয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ মাশরাফিরা কমই পেয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সাথে মাত্র ৪ টি দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া।

ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বমোট ২০ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া। ১৮ হারের বিপরীতে বাংলাদেশের জয় বলতে ১৪ বছর আগের কার্ডিফে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচটি। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াই একমাত্র দল যাদের বিপক্ষে টাইগারদের জয় কেবল একটি। কার্ডিফের সেই ম্যাচের পর গত ১৪ বছরে মাত্র ১৪টি ওয়ান ডে খেলেছে এই দুই দল। এর মধ্যে সর্বশেষ ২টি খেলায় কোন দলই জয় বা পরাজয়ের মুখ দেখে নি। ব্রিসবনে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে মাঠ পর্যন্ত গড়ায় নি। আর ২০১৭ সালে ওভালে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচটিতে তামিমের ৯৫ রানের পরও বাংলাদেশ ১৮২ রানে অল আউট হয়। অস্ট্রেলিয়া ১ উইকেটে ৮৩ রান তোলার পর বৃষ্টিতে পণ্ড হয় সেই ম্যাচ। এই দুটি ম্যাচেই পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয় দুই দলকে।

২০১৯ বিশ্বকাপে আজ ২০ জুন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। দর্শক হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন এই ম্যাচে যেন আবারও কার্ডিফের সেই মুহূর্ত ফিরে আসে। কার্ডিফের সুখ স্মৃতি যদি এত দিনে আপনার কাছে ঝাপসা হয়ে ওঠে তাহলেও কোনো অসুবিধা নেই। এই ম্যাচের আগে চলুন আপনাকে কার্ডিফের সেই ম্যাচে ফিরিয়ে নিয়ে যাই।

১৮ জুন ২০০৫, কার্ডিফ। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশকে নিয়ে ত্রিদেশীয় ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের ২য় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামে বাংলাদেশ। টসে জিতে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিং প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেবেন না বা কেন? অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেন, রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্ক, ডেমিয়েন মার্টিন, মাইক হাসি, সাইমন ক্যাটিচকে নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপকে বাংলাদেশের বোলাররা কাঁপিয়ে দিবে এমন আশা হয়ত চরম আশাবাদী কোনো কোনো দর্শকও সে ম্যাচের শুরুতে করেন নি।

কিন্তু সকল হিসেব পাল্টে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে সাজঘরে ফেরান নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফি। এরপর ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে মাত্র ৯ রানে দলকে রেখে তাপস বৈশ্যের শিকার হয়ে ফিরে যান রিকি পন্টিং। ম্যাচের এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে অজিদের। মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মোহাম্মদ রফিকের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এ রানের চাকা আটকে যায় অস্ট্রেলিয়ার। মাঝে ডেমিয়েন মার্টিন ও মাইকেল ক্লার্ক ইনিংস মেরামতের কাজ করেন। ৫ম উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ১০৮ রান। মার্টিন ১১২ বলে ২ চারে করেন ৭৭ রান, মাইকেল ক্লার্ক ৮৪ বলে করেন ৫৪ রান। শেষের দিকে মাইক হাসির ২১ বলে ৩১ এবং সাইমন ক্যাটিচের ২৩ বলে ৩৬ রানের ঝোড়ো ২ ইনিংসের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪৯ রান সংগ্রহ করে।

বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ টি উইকেট নেন তাপস বৈশ্য। ১ টি করে উইকেট নেন মাশরাফি এবং নাজমুল হোসাইন। মোহাম্মদ রফিক আর মাশরাফি ছিলেন দলের সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার। মাশরাফি ১০ ওভারে ২ টি মেডেনসহ দেন ৩৩ রান, মোহাম্মদ রফিক ১০ ওভারে দেন মাত্র ৩১ রান।

ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ১৭ রানে নিজেদের প্রথম উইকেট হারায়। দেখতে দেখতে ২০ ওভার ৫ বলের মধ্যে ৭২ রানে ফিরে যান বাংলাদেশের প্রথম ৩ ব্যাটসম্যান। তখনো বা কে ভেবে রেখেছিল এই ম্যাচের চিত্রনাট্য মোহাম্মদ আশরাফুল নিজ হাতে লিখবেন।

এরপর হাবিবুল বাশারকে সাথে নিয়ে আশরাফুল ইতিহাসের পথে যাত্রা শুরু করেন। দুজনে মিলে কাটিয়ে দেন ২৩টি ওভার, সাথে যোগ করেন ১৩০ রান। দলের ২০২ রানের সময় ৭২ বলে ৪৭ রান করা হাবিবুল বাশার দুঃখজনক ভাবে রান আউটের শিকার হোন। কিন্তু আশরাফুল তাণ্ডব তখনও চলতে থাকে। ১১ টি চারে সাজানো ১০১ বলে ১০০ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলে দলকে জয় থেকে নিঃশ্বাস দূরত্বে রেখে গিলেস্পির বলে আউট হয়ে যান আশরাফুল। ম্যাচ তখনও অনিশ্চয়তার দোলাচলে। ১৭ বলে দরকার ২৩ রান। কিন্তু সেদিন ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হওয়া আফতাব আহমেদ বাকি কাজ শেষ করেন। শেষ ওভারে যখন ৭ রান দরকার তখন গিলেস্পির প্রথম বলেই ৬ হাঁকিয়ে ম্যাচটি বাংলাদেশের করে নেন আফতাব আহমেদ। বাংলাদেশ পায় অবিশ্বাস্য এক জয়। অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান আশরাফুল।

বিশ্বকে অবাক করে দেওয়া এই জয় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার বলেছিলেন, ‘I am the happiest man in the world’. এটিই হয়ত সেদিন কোটি বাংলাদেশীর মনের কথা ছিল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-
অস্ট্রেলিয়া- ২৪৯/৫ (৫০ ওভার)
বাংলাদেশ- ২৫০/৫ (৪৯.২ ওভার)
ফলাফল- বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা- মোহাম্মদ আশরাফুল

 লেখক- হাসান উজ জামান  

আরও পড়ুন- মোহাম্মদ আশরাফুল – বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম নক্ষত্র

আরও পড়ুন- ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের যত জয়

আরও পড়ুন- একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের যত জয়

Exit mobile version