বিশ্ব

করোনা পরবর্তী বিশ্বের হালচাল1 min read

এপ্রিল ২০, ২০২০ 6 min read

author:

করোনা পরবর্তী বিশ্বের হালচাল1 min read

Reading Time: 6 minutes

অদেখা এক শত্রুর আক্রমণে স্থবির সারা পৃথিবী। সবকিছু যেন থেমে আছে অনন্তকালের জন্য। কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন দেশই সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। আটলান্টিকের দুই পাড়ের ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্র কিংবা আগামীর পরাশক্তি চীন, কোথাও কেউ সফল হয়নি মহামারী যুদ্ধে। কোন একদিন করোনার ছাপ মুছে গেলে কেমন হবে বিশ্ব? কে কোথায় থাকবে রাজনীতির মানচিত্রে?

বড় হুমকিতে যুক্তরাষ্ট্র

সোভিয়েত ইউনিয়নের পরপরই বিশ্বে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটি বিশাল অর্থনীতি এবং বাজার ব্যবস্থার কল্যাণে নিজেদের একক অবস্থান করে নিয়েছে দ্রুততম সময়ে। এছাড়া সামরিক আগ্রাসনের মত পদক্ষেপও নিয়েছে দেশটি। নাইন ইলেভেনের পর মধ্যপ্রাচ্যে সেনা আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় সুযোগ নিয়ে এসেছে অর্থনৈতিক দিক থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রাসী মনোভাবের বিপরীতে অন্যান্য ক্ষমতাবান দেশগুলো সব সময়ই চাপে ছিল।

এখনো যুক্তরাষ্ট্রকেই বিশ্ব মোড়ল মানা হয়। যদিও সেটি এককভাবে নয়। বিশেষ করে চীন প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় তাদের অর্থ ব্যবস্থায় পড়েছে নেতিবাচক ছাপ। বাড়ছে বেকারত্ব। আর সামরিক শক্তির চেয়ে অর্থ ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিই এখন বড় হয়ে উঠছে বিশ্বের জন্য। যুদ্ধের চেয়ে আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত খাতেই মনোনিবেশ করছে শক্তিশালী দেশগুলো।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে পারে এমন দেশের দেখা মিলছে। বিশেষ করে চীন, কোরিয়া, কানাডা এবং ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুমকি। যুক্তরাজ্য বিশ্ব নেতৃত্বে নেই আর। এছাড়া রাশিয়াও রয়েছে খানিক পিছিয়ে, তবে সেটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কম চিন্তার বিষয় না। এমন টালমাটাল পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত্যু এবং রোগীর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়িয়ে গিয়েছে সবাইকে। অথচ কদিন আগেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দম্ভ করে বলেছেন ‘বিশ্বের সেরা চিকিৎসা ব্যবস্থা তাদের। করোনা কিছুই করতে পারবে না। কয়েকটা ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।’ কিন্তু তাতে হীতে বিপরীত হয়েছে। ট্রাম্পের সেই “চাইনিজ ভাইরাস” যুক্তরাষ্ট্রকে করেছে মৃত্যপুরী।

চীনের পর ইতালি ও স্পেন যখন করোনায় বিধ্বস্ত তখনো যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক হয়নি। নিউইয়র্ক থেকে শুরু করে একের পর এক শহর লকডাউনের ঘোষণা এলো। হাসপাতালসহ সবখানেই এখন বিরাট সংকট। এবং তা এতটাই প্রকট যে, শত্রুসম চীনের কাছ থেকে মাস্ক, চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে হচ্ছে। মৃত্যুর মিছিল এতটাই বড় যে মরদেহ পরিবহনের ব্যাগ কিনতে হচ্ছে তাদের। গণকবর দেয়ার জন্য বেছে নিতে হয়েছে পার্কগুলোকে। সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকায় নতুন গতি আনার কথা বলা হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেননি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প । যুদ্ধ ব্যয় কমিয়ে সেদিকে নজর দেওয়ার তাগাদা দেওয়া হলেও অন্য দেশকে চাপে রেখে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছিলেন তিনি।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে সফল ব্যবসায়ী ট্রাম্প রাষ্ট্রীয় কাজে দেখলেন বড় এক ব্যর্থতা। যুক্তরাষ্ট্রকে যারা পরাশক্তি ও বন্ধু ভেবেছিল তারাও দেখতে পেল এক কঙ্কালসার অর্থনীতি। করোনার সঙ্গে আদতে হেরেই বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। করোনা পরবর্তী নতুন বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র তাই অনেকটাই পিছিয়ে।

সময় এখন চীনের

চীনের উহান থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯ । এ এক নতুন মহামারী। প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরবন্দী রয়েছে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। জরুরি পরিষেবা ছাড়া সবাই এখন স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ব যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম এমন স্থবির চালচিত্র সারা বিশ্বে। ক্রমশ উন্নতি করার পরেও চিকিৎসাবিজ্ঞান যে এমন এক ভাইরাসের কাছে হেরে যাবে তা ছিল সবার চিন্তার বাইরে। সমরশক্তির চেয়ে কার চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত ও সুশাসন কার্যকর সেসব নিয়েই এখন আলোচনা বিশ্বজুড়ে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বিশ্ব নেতৃত্বে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেখানে সবার প্রথম নাম উঠছে চীনের।

করোনার লড়াই প্রথমে একাই শুরু করে চীন। সারা বিশ্ব তখনো নিজেদের মত ব্যস্ত। আর চীন তখন মৃত্যুর মিছিল আটকাতে ব্যস্ত। তবে সে লড়াইয়ের শেষ দেখে নিয়েছে চীনের চিকিৎসাকর্মী ও স্বাস্থ্যসেবায় জীবন বাজি রাখা লড়াকু সৈনিকরা। তাদের সাথে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়েছে সাধারণ জনগণ। রাতারাতি হাসপাতাল বানিয়ে ফেলা, সারা দেশ থেকে সেরা চিকিৎসাকর্মীরা এসে দল বেঁধে মানুষের চিকিৎসা করা, চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা, সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় কঠোরতা এবং সরকার ও প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা, সব মিলিয়ে চীন পেয়েছে করোনা জয়ের স্বাদ। বহু প্রাণহানি ঘটলেও চীনই এখন পর্যন্ত করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে সবচেয়ে সফল। শুরুর দিকে বুঝে উঠতে সময় নেওয়া ও তথ্য গোপন করায় চীনকে পশ্চিমারা দোষ দিলেও চীনের দেখানো পথেই হাঁটতে হচ্ছে তাদের। চীন লকডাউন, টেস্ট, আইসোলেশন ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে ফর্মুলা দিয়ে করোনা বধ করেছে সে পথেই আপাতত সারা বিশ্ব চলছে। আড়াই মাসের মাথায় করোনা নিয়ন্ত্রণ ও তিন মাসের পর করোনাকে হারিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। এখনো সে লড়াই পুরোপুরি না শেষ হলেও মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ও সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের হিসাবটা চীনের পক্ষেই রয়েছে।

পশ্চিমা বিশ্বের নানা সমালোচনার পরও চীন তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। বর্তমান পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো করোনায় একেবারেই স্থবির হয়ে গিয়েছে। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রকে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে করোনা। তাদের শক্তিশালী অর্থনীতি, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা আসলেই কতটা কার্যকরী তা নিয়ে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন উঠেছে। করোনায় মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারছে না তারা।

এই অবস্থায় চীন ঘুরে দাঁড়িয়ে সারা বিশ্বে পাঠাচ্ছে চিকিৎসা সরঞ্জাম। যুক্তরাষ্ট্রের বড় অ্যান্টিবায়োটিকের বাজার চীনের দখলে। মাস্ক, পিপিই, স্যানিটাইজার, ওষুধ, খাবার পাঠাচ্ছে চীন। দেশে দেশে চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে দিয়েছে। চীন গত ত্রিশ বছরে বিশ্বের নানা প্রান্তে এই সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক শক্ত করেছে। এখন সারা বিশ্বে তারা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শত্রু মিত্র না খুঁজে, ছোট-বড় দেশ বিবেচনা না করে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক বিস্তৃত করে চীন একাই বিশ্ব শাসনের এক মহাপরিকল্পনা করে নিয়েছে। আর সেই পরিকল্পনায় এক হয়েছে সারা বিশ্ব। এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা, ইউরোপ সবখানেই তারা বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। করোনার সময়ও তারা দেশে দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়ে সে সম্পর্ক আরও মজবুত করেছে।

মানবিকভাবে চীন বহু দেশকে অর্থ সহযোগিতা করেছে বিগত দশকে। সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দেওয়ার মতো সব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের স্নায়ুযুদ্ধ তীব্র হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস পুরো বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ঝাঁকুনি দিয়েছে। চীনের করোনায় সামলে ওঠা, বিশ্বজুড়ে বন্ধুত্বপরায়ণ মনোভাব, দেশে দেশে সহযোগিতা, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে আগামীর বিশ্ব নেতৃত্ব তাদের হাতেই আসতে পারে।

সামনে আসবে উত্তর কোরিয়া?

উত্তর কোরিয়া এককভাবে বিশ্ব পরাশক্তি না হলেও বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের মনোভাব ও কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে আলোচিত। পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ করার কারণেই দেশটি বিশ্ব মিডিয়ার নজর কাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার বিরোধ যুদ্ধাবস্থা তৈরি করেছে বারবার। দুই পক্ষের কঠোর হুঁশিয়ারি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে উত্তর কোরিয়াকে যেমন হুমকি দিয়েছে তেমনি উত্তর কোরিয়া তার জবাব দিয়েছে একের পর এক পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে যে তারা বিচলিত নয় তা স্পষ্ট। উত্তর কোরিয়াকে বারবার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আটকে রাখতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সে পথে হেঁটে যুক্তরাষ্ট্র সফল হয়েছে এমনটা ভাবা ভুল।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার এই বিরোধ নিরসনে দুই দেশের প্রধান কর্তা ট্রাম্প ও কিম জং উনের ঐতিহাসিক বৈঠক হয় ২০১৮ সালে। এরপর থেকেই যুদ্ধাবস্থা কেটে যায়। কিন্তু উত্তেজনা কমেনি। করোনায় এখন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়াকে ছুঁতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিডিয়ায় এটি অবিশ্বাস করলেও উত্তর কোরিয়ার দাবি এমনই। জানুয়ারির শেষ দিক থেকেই উত্তর কোরিয়া করোনাভাইরাসকে ঠেকাতে শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটিতে প্রবেশ ও বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। করোনা মোকাবিলায় উত্তর কোরিয়ার বাস্তব চিত্র অজানা থাকলেও দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রশংসা করা হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ায়। অন্য সমপরিমাণ জিডিপির দেশগুলোর তুলনায় তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভালো। দেশটির অধিকাংশ জনগণ চিকিৎসায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও তারা দেশের মানুষের মৌলিক চিকিৎসা দিতে সক্ষম।

করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণও ব্যাখ্যা করেছে দেশটি। পূর্ব সতর্কতা এবং বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন পদক্ষেপ- যেমন দেশে যারা এসেছেন তাদের সবাইকে শনাক্ত করে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো এবং সব ধরনের পণ্য-সামগ্রী জীবাণুমুক্ত করে সফল হয়েছে দেশটি। পাশাপাশি স্থল, সমুদ্র এবং আকাশপথের সব সীমান্ত বন্ধ করার কারণে দেশটিতে করোনা ছড়ায়নি বলে দাবি করা হয়। করোনাকে দমন করার উত্তর কোরিয়ার এ চিত্র শতভাগ সত্যি হলে বিশ্ব নেতৃত্বে আগামীতে পরিবর্তন আসতে পারে।

ফিনিক্স পাখি হতে পারে রাশিয়া

ভ্রাদিমির পুতিনের রাশিয়া অনেকদিন ধরেই নীরব ভূমিকায় রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙে দেওয়ার পর যে রাশিয়ার জন্ম হয় তা একক নেতৃত্বের ভূমিকায় আসেনি। রাশিয়ার বিশাল সামরিক শক্তি ও আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি তাদের অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে। নব্বইয়ের দশকের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এমন দেশগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে তারাই। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পর রাশিয়ার ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকটাই পিছিয়ে থাকতে হয়েছে। সিরিয়ায় আইএস নির্মূলের নামে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন ঠেকাতে রাশিয়া উপস্থিত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্রের ব্যবসায় ভাগ বসিয়েছে। ইরানকে চাপে রাখতে গিয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এখনো রাশিয়া বিশ্ব নেতৃত্বে বড় ধরনের প্রভাব রাখে। তিনটি উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হবে সবই। প্রথমটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। রাশিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে। সে অভিযোগ রাশিয়া অস্বীকার করলেও এ নিয়ে বহু তর্ক রয়ে গেছে।

দুই, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরে কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে তেল ও অস্ত্র বাণিজ্যের কারণে। সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আইএসকে নির্মূল করতে গিয়ে তেল হাতিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র- এই অভিযোগে রাশিয়াও আইএস নির্মূলে যোগ দেয়।

তিন বছর যে আইএসকে দমাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র, সেই আইএসের মেরুদন্ড ভাঙে রাশিয়া। মাত্র তিন মাস বোমা হামলা করে রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে আইএসকে পঙ্গু করে ফেলে। যুক্তরাষ্ট্র সেখান থেকে নজর দেয় ইরানের দিকে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও সামরিকভাবে চাপে ফেললে চীন ও রাশিয়া তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। মধ্যপ্রাচ্যে ও আরব দেশগুলোতে থাকা মার্কিন সেনাদের দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা হুমকি দেওয়া ইরানকে সমর্থন দিয়ে আসছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রকে এভাবে চাপে রাখতে রাশিয়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সরাসরি বিশ্ব নেতৃত্বের কথা না বললেও রাশিয়া সব সময়ই বিশ্ব নেতৃত্বের বড় দাবিদার।

করোনায় পুরো বিশ্ব যখন কাঁপছে তখন রাশিয়ার চিত্র পুরো ভিন্ন। এত বড়, এত বেশি জনসংখ্যার দেশ হয়েও করোনা সেখানে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েনি। চীন থেকে করোনা ইউরোপে থাবা দিলেও মৃত্যুপুরী ইউরোপের বাকি দেশের তুলনায় রাশিয়া ভালো অবস্থানে। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে রাশিয়া এখন পর্যন্ত দারুণ সফল। বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত ৭ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তখন রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজারও হয়নি। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে রাশিয়া করোনা থেকে বেঁচে থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া দারুণভাবে সেটি আটকে রাখতে পেরেছে। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে রাশিয়ার জনগণ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র লাশ রাখার জায়গা পাচ্ছে না। চিকিৎসক, ওষুধ, হাসপাতাল সংকটে যুক্তরাষ্ট্র দিশাহারা।

রাশিয়া এখনো করোনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। করোনা যুদ্ধে রাশিয়ার এই লড়াকু ও সতর্ক অবস্থান আগামীতে ইতিবাচক কিছু দেখাতে পারে। ধ্বংসস্তুপ থেকে রাশিয়া হয়ত জেগে উঠবে ফিনিক্স পাখির মত করে। আর তা ঘটলে সোভিয়েতের পর আবার চালকের আসনে আসবে দেশটি।

লেখক- জুবায়ের আহম্মেদ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *