করোনার ধাক্কায় আবার নড়েচড়ে বসেছে বেইজিং1 min read
Reading Time: 2 minutesকরোনাভাইরাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিল চীন। কিন্তু চীনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আজ সোমবার নতুন করে দেশটিতে ৪৯ ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন। রাজধানী বেইজিংয়েই ৩৬ জনের বেশি শনাক্ত হয়েছে। নতুন করে করোনাভাইরাসের এই আক্রমনে বেইজিং এর বেশ কিছু অঞ্চলে যেন কিছুটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতোই থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
অতি সম্প্রতি চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ফেংটাই জেলার জিনফাদি বাজারে যাওয়া ৫১৭ জনের কোভিড টেস্ট করানোর পর সেখানে ৪৫ জনকেই কোভিড পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত করে হয়েছে। ইতিমধ্যে এই বাজারকে কেন্দ্র করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কর্তৃপক্ষ ভ্রমণ এবং সব ধরনের ক্রীড়া অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য হল নতুন করে আক্রান্তদের কারো মধ্যেই কোভিড-১৯ এর কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। উক্ত বাজারটি এশিয়ার সবচাইতে বড় কৃষি বাজার হওয়া সত্ত্বেও পুরো এলাকাটি লক-ডাউন করে দেয়া হয়েছে। এই সম্পর্কে প্রশাসন থেকে আরো বলা হয়, “জনসাধারণের নিরাপত্তা এবং তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়টিই আমাদের কাছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। আর একারণেই জিনফাদি বাজার এবং আশেপাশের আশেপাশের এলাকাগুলির জন্য লক-ডাউন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।”
চীনের হঠাৎ করে আবার করোনার আক্রমণে অনেকেই মনে করছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিশ্ববাসী হয়ত আরো একটি বড় ধাক্কা পেতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই এই ভাইরাসটি প্রায় আশি লক্ষাধিক মানুষকে বিশ্বব্যাপী সংক্রমিত করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষ ইতোমধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
দশ হাজারেরও বেশী কোভিড-টেস্ট করার পদক্ষেপ গ্রহণ
গত শনিবার দুপুর তিনটা থেকেই জিনফাদি মার্কেটে এই লক-ডাউন শুরু হয়েছে। পাশের আরেকটি এলাকার একটি মিট রিসার্চ সেন্টার থেকে আগত দুইজন ব্যক্তির মধ্যে করোনাভাইরাস পাওয়া গেলেও, এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না যে তারা কোথা থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ স্থানীয় লোকালয় থেকে প্রায় দশ হাজারেরও বেশী মানুষের কোভিড-১৯ রয়েছে কি না সেটা পরীক্ষা করার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। উল্লেখ্য যে, জিনফাদি মার্কেটের ওয়েবসাইট হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেখানে প্রতিদিন ১৫০০ টন সামুদ্রিক খাবার, ১৮ হাজার টন সবজী এবং বিশ হাজার টন ফল ফলাদি বিক্রয় করা হয়।
জনপ্রিয় টুরিস্ট এলাকাগুলো বন্ধ ঘোষণা
নগর প্রশাসনের একজন মুখপাত্রের বিবৃতি থেকে জানা যায় যে, শহরে ছয়জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিই সেই জিনফাদি মার্কেটে গিয়েছিলেন। তাই শহর থেকে যাতে অন্যান্য এলাকায় করোনা ভাইরাস আবারো ছড়িয়ে না যায় তাই চীনের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যাতে কোন পর্যটক এই এলাকায় আসতে না পারে সেদিকে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে। এছাড়া খেলাধুলার পাশাপাশি অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোও দ্রুত বন্ধ করে দেয়া হতে পারে বলে নগর প্রশাসন জানিয়েছেন।
বেইজিংয়ের ইওঙ্গে মন্দির ও জাতীয় থিয়েটারও শনিবার থেকে বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নতুন ভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার কারণে, স্থানীয় স্কুলগুলো পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা বাদ দেয়া হয়েছে।
স্যালমন মাছ আতংক!
নগর প্রশাসন প্রায় বাড়ি বাড়ি গিয়েই খোঁজ খবর নিচ্ছেন যে, বিগত কয়েকদিনের মধ্যে কেউ কি জিনফাদি মার্কেটের দিকে ভ্রমণ করেছে কি না। এদিকে স্থানীয় পত্রিকায় আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে, সেখানে বলা হয়েছে জিনফাদি মার্কেটে আমদানি করা স্যালমন মাছ কাটার চপিং বোর্ড পরীক্ষা করে সেখানে করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে।
এই খবরটি প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথেই ব্যবসায়ীরা স্থানীয় সুপারমার্কেটগুলোর র্যাক থেকে সবগুলো স্যালমন মাছ সরিয়ে ফেলে। এই উদ্বেগটি অন্যান্য শহরগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী চেংদুতে একটি বড় বড় পাইকারি পাইকারি বাজার কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারাও শনিবার থেকে সবগুলো স্যালমন মাছের পণ্য সরিয়ে ফেলবে।
লেখক- ইকবাল মাহমুদ ইকু