বিশ্ব

করোনাভাইরাসঃ কবে মিলবে প্রতিকার?1 min read

এপ্রিল ১৯, ২০২০ 3 min read

author:

করোনাভাইরাসঃ কবে মিলবে প্রতিকার?1 min read

Reading Time: 3 minutes

পুরো বিশ্বের মানুষ আজ এক ভাইরাসে জব্দ। জনমনে ত্রাস সৃষ্টিকারী এই করোনাভাইরাসের পোষাকি নাম কোভিড-১৯। দুনিয়া জুড়ে এখন পর্যন্ত এই মহামারীর প্রকোপে পড়েছেন ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। আক্রান্ত হয়ে দেড় লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের যুগে ঘরে বসে মানুষের একটাই প্রার্থনা, কবে মিলবে এর ভ্যাক্সিন। এই মহামারী থেকে মুক্তি পেতে চলছে বিস্তর তোড়জোড়। বিজ্ঞানীরাও বসে নেই। চেষ্টা চলছে এই মরণঘাতীর পথ্য আবিষ্কারের। মানুষ আশায় বুক বেঁধে আছে কবে মিলবে বহুল কাঙ্ক্ষিত ঔষধ কিংবা ভ্যাক্সিন।

দ্রুতগতিতে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েই অবিরাম কাজ করে চলেছেন গবেষকরা। করোনাকে ঠেকাতে কুড়িটিরও বেশি ভ্যাক্সিন তথা টিকার উন্নয়ন চলছে। সেসবের মধ্যে কিছু নমুনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে মানব শরীরে ভ্যাক্সিন প্রয়োগের কথা গণমাধ্যমে আসে। এছাড়া তারা প্রাণীর শরীরে এর কার্যকারিতা ও ফলাফল নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে বেজীতে দুই রকমের ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করে পরীক্ষা চালাচ্ছেন। এটি ছিল তাদের প্রাথমিক প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে প্রাণীতে প্রয়োগের ফলে প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করা হবে। গবেষকরা জানাচ্ছেন এপ্রিলের মধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে ফলাফল কি হয় তা দেখা হবে।

এ রকম নানা ধরণের পরীক্ষা নিরিক্ষার হার গোটা বিশ্বজুড়েই বেড়ে গেছে। কেউ কেউ ভ্যাক্সিন প্রয়োগের নতুন সব পদ্ধতি উদ্ভাবন নিয়ে ভাবছেন। তবে অতি দ্রুত কার্যকরী ভ্যাক্সিন পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে বলার কোনো উপায় নেই।

যদি বিজ্ঞানীরা ডিসেম্বরের আগেই কোনো পরীক্ষার থেকে নিশ্চিত সাফল্য পেয়ে যায় তারপরেও উপযুক্ত ঔষধ কিংবা ভ্যাক্সিন গোটা দুনিয়ার মানুষের জন্য উৎপাদনে ২০২১ সালের অর্ধেকটা পেরিয়ে যাবে- এমনটাই বলছে বিশেষজ্ঞরা ।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ থেকে বলা হয়েছে, পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হওয়া থেকে শুরু করে নিশ্চিত কার্যকরী ভ্যাক্সিন বাজারে আসতে এবং তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে কমপক্ষে ১২ থেকে আঠারো মাস লাগবে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মোট চার ধরণের করোনাভাইরাস মানবদেহে সংক্রমণ ঘটিয়েছে যার মধ্যে কোভিড-১৯-ই ছড়িয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই চার প্রকার করোনার সবকটিরই লক্ষণ আমাদের অতি পরিচিত । হাঁচি, সর্দি-কাশি, জ্বর।

বাজারে বিদ্যমান কোনো ঔষধে কি সারবে করোনাভাইরাস?

ভ্যাক্সিন সংক্রমণ এড়াতে ভীষণ কার্যকর তবে এই মুহুর্তে ভাইরাস প্রতিরোধ করাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত, যার জন্য মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। চিকিৎসকরা আক্রান্ত রোগীর যথাযথ শুশ্রূষায় সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা বর্তমানে এন্টিভাইরাল (মূলত ভাইরাসের বিরুদ্ধে সক্রিয়) ঔষধ প্রয়োগ করে দেখছেন সেগুলো করোনার ক্ষেত্রে কাজ করে কিনা। এই পদ্ধতি অনেকখানি বিপদমুক্ত বলেই তারা এ নিয়ে কাজ করছেন।

ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের অল্প সংখ্যক রোগীর মাঝে প্রয়োগ করা হয়েছে রেমডিসিভার নামক এন্টিভাইরাল ঔষধ। এগুলো মূলত ইবোলার ঔষধ হিসেবে তৈরি হলেও অন্যান্য ভাইয়ারসের ক্ষেত্রেও এর কার্যকারিতা দেখা গেছে।  চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ইতিমধ্যে এরকম প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। সে ফলাফল পেতে আগামী কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।

এছাড়া ধারণা করা হয়েছিল, এইচআইভি এইডসের জন্য বহুল ব্যবহৃত লোপিনাভার এবং রিটোনাভার নামক ঔষধ দুটি করোনার বিরুদ্ধে কাজ করবে কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। এগুলো কোনো সুস্থতায় তো কাজে লাগেই নি, কমাতে পারেনি মৃত্যুর হার কিংবা করোনা সংক্রমণের হার। প্রায় মৃত্যু পথযাত্রীদের উপর অনেকটা দেরীতেই পরীক্ষামূলকভাবে এই ঔষধ প্রয়োগ করা হয়েছিল ।

প্রয়োগের তালিকায় ছিল ক্লোরোকুইন যা মূলত ম্যালেরিয়ায় কাজে দেয় এমন ঔষধ। দেখা গেছে এটি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম। ডাক্তাররা কিছু অকল্পনীয় ব্যাপারও পেয়েছেন । কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটি কীভাবে ভাইরাস মারতে সক্ষম তার কোনো নির্দেশক চিহ্ন খুঁজে পায়নি বিধায় আপাতত একে তালিকায় রাখা যাচ্ছে না।

নতুন আবিষ্কৃত ভ্যাক্সিন কি সব বয়সীদের কাজে দিবে?

বয়স্কদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম কাজ করবে এই ভ্যাক্সিন। এর মানে এই নয় যে ভ্যাক্সিন কার্যকরী নয় বরং বয়স বাড়লে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার দরুণ তা হতে পারে। আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটিও মাথায় রাখা জরুরী।

প্রায় সব ঔষধ এমনকি সাধারণ ব্যথানাশকেরও রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যতীত এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে এখনই তাই কিছু বলা যাচ্ছে না। ঔষধ তৈরির অতি সাধারণ নিয়ামকের মতো এটি থাকবেই তবে তা যেন মাত্রা না ছড়ায় সে দিকে নজর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

যদি প্রথমিকভাবে ভ্যাক্সিন বাজারে এসেও যায় তবে তা আসবে অতি সীমিত আকারে। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে যারা স্বাস্থ্যখাতে করোনায় আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত তাদের। এছাড়া সবচেয়ে বেশি ঝুকির মধ্যে থাকা বৃদ্ধদেরকে দেওয়া হবে অগ্রাধিকার।

ভ্যাক্সিন না আসা অব্দি যা করতে হবে

ভ্যাক্সিন তথা টিকা মূলত রোগ সংক্রমণে বাঁধা দিতে সক্ষম। কিন্তু তার আগে আমাদের শিখতে হবে কীভাবে প্রতিরোধ করতে হয়। করোনা আক্রান্ত হলে ঘরে বসেই এর চিকিৎসা সম্ভব। যার জন্য দরকার পূর্ণ মাত্রায় বিশ্রাম ,তরল খাবার গ্রহণ ও সাধারণ সর্দি কাশির জন্য বহুল ব্যবহৃত প্যারাসিটামল। যাদের গুরুতর অবস্থা তাদের হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়াই শ্রেয়তর।

কিভাবে কাজ করে ভ্যাক্সিন?

ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে মূলত দেহে মৃত ভাইরাস বা ব্যকটেরিয়া প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এমন যে অপরিচিত কিছু প্রবেশ করলে একে ক্ষতিকর ভেবে মেরে ফেলে। এভাবেই মানবদেহ উক্ত ভাইরাস বা ব্যকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে শিখে যায়। ততদিনে আসল ভাইরাস বা ব্যকটেরিয়া দেহে ঢুকে পড়লে তাকে কুপোকাত করা দেহের পক্ষে অনেকখানি সহজ হয়ে দাঁড়ায়। এভাবেই মূলত ভ্যাক্সিন কাজ করে।

হাম, মাম্পস কিংবা রুবেলার মত অসুখের ভ্যাক্সিন হিসেবে অপেক্ষাকৃত দূর্বল ভাইরাসকেই ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলোতে নেই কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি।

সদ্য আসা করোনাভাইরাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে বানানো ভ্যাক্সিন এর পদ্ধতির নাম ‘প্লাগ এন্ড প্লে’। এটি ভ্যাক্সিন তৈরির প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নতুন পদ্ধতি। বর্তমানে আমরা জানি এটি মূলত সার্স ভাইরাসেরই জ্ঞাতি ভাই এবং এর জেনেটিক কোড বিজ্ঞানীদের জানা আছে বিধায় ভ্যাক্সিন তৈরি করাও সহজ বলে দাবী বিজ্ঞানীদের। জেনেটিক কোড জানার সুবিধা হচ্ছে ভাইরাসের নমুনা ছাড়াই এর বিস্তার ঠেকাতে ভ্যাক্সিন তৈরি করা সম্ভব।

ভ্যাক্সিন নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীদের একদল করোনাভাইরাসের দেহের একাংশের সাথে ক্ষতিকর নয় এমন ভাইরাস জুড়ে দিয়ে কাজ করছেন। এখন অক্ষতিকর অংশের মাধ্যমে শরীর কি প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং করোনাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

অন্য একদল বিজ্ঞানী দেখছেন ভাইরাসের ডিএনএ বা আরএনএ-কে শরীরে প্রবেশ করালে দেহ এন্টি ভাইরাস উৎপন্ন করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করতে পারছে কিনা। সেসবের ফলাফল কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

লেখক- মাহের রাহাত 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *