ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের যত জয়1 min read
Reading Time: 4 minutesবর্তমান সময়ে ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবেই সমাদৃত। কোনো দেশই বাংলাদেশকে আর হেসে-খেলে পরাজিত করতে পারে না। কিন্ত একটি সময় ছিলো, যখন বাংলাদেশর সঙ্গে ক্রিকেট খেলে জয় পাওয়ার জন্য প্রতিপক্ষ দলকে তেমন কোনো বেগ পেতে হতো না। ঐ সময় বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করতে পারাটাও ছিলো বাংলাদেশের জন্য স্বপ্নের মতো। আজ ২০১৯ সালে এসে বাংলাদেশের স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বকাপ জয়। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারার স্বপ্নটা বাংলাদেশের প্রথম সফল হয়েছিলো ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে।
১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আইসিসি ট্রফিতে জয় লাভ করার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ১৯৯৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করে। আর এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার নিয়মিত সদস্য পদও লাভ করে।
প্রথমবার বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো। ১৯৯৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ ক্রমাগত এগিয়ে গেছে সামনের দিকে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পাঁচটি ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে ফেলেছে। আর এই বিশ্বকাপগুলোতে বাংলাদেশ ৯টি দলের বিপক্ষে ১১টি ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এই জয়গুলোর হয়তো সাক্ষী ছিলেন আপনিও। একনজরে দেখে নিন বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের জয় পাওয়া ম্যাচগুলোর খুঁটিনাটি।
১. বাংলাদেশ বনাম স্কটল্যান্ড
২৪ই মে, ১৯৯৯ সাল, এডিনবার্গের গ্রেঞ্জ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে বাংলাদেশ বনাম স্কটল্যান্ডের মধ্যে একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিলো বাংলাদেশের জন্য ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে তৃতীয় ম্যাচ। এর আগের দুটি ম্যাচই বাংলাদেশ পরাজয় বরণ করে। এই ম্যাচে টসে হেরে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করতে নামে। প্রথম দিকে ব্যর্থতা দেখা দিলেও ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও অফ স্পিনার নাঈমুর রহমান দুর্জয়। তাদের এই জুটিতে ৬৯ রান আসে। ৫৮ বলে ৩৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন নাঈমুর রহমান। তারপর মিনহাজুল আবেদীন নান্নু একাই এক প্রান্ত আগলে রেখে বাকি পথ পাড়ি দেন। তিনি ৬৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ১৮৫ রান করতে সক্ষম হয়।
এরপর স্কটল্যান্ড ব্যাট করতে এসে ৫০ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে। গ্যাবন হ্যামিল্টন স্কটল্যান্ডের পক্ষে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ৪৭ তম ওভারে এসে এনামুল ২ বলে ২ উইকেট নিয়ে স্কটল্যান্ডের জয়ের আশা একেবারেই বন্ধ করে দেন। সবশেষে ২২ বল বাকি থাকতেই ১৬৩ রানে অলআউট হয়ে যায় স্কটল্যান্ড। আর বাংলাদেশ ২২ রানের জয় তুলে নিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে জয়ের দেখা পায়। অসাধারণ নৈপুণ্যের জন্য এই ম্যাচে মিনহাজ মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছিলেন।
২. বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান
৩১ই মে ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটনে বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৩ রান করে। জবাব দিতে নেমে পাকিস্তান ৪৪.৩ ওভারে ১৬১ রান করে অলআউট হয়ে যায়; ফলে বাংলাদেশের ৬২ রানের জয় নিশ্চিত হয়। পরপর দুই ম্যাচে জয়লাভ করে প্রথম বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ বেশ সুনাম অর্জন করে। অলরাউন্ডার পারফরমেন্সের জন্য ম্যাচ সেরা পুরস্কার পান খালেদ মাহমুদ।
৩. বাংলাদেশ বনাম ভারত
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ কুইন্স পার্ক ওভাল, পোর্ট অব স্পেনে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামে। এই ম্যাচে ভারত প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৩ ওভারে ১৯১ রান সংগ্রহ করে। তারপর বাংলাদেশ জবাব দিতে নেমে অনেকটা হেসে-খেলেই ৪৮.৩ ওভারে ৫ উইকেটে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। আর এই লক্ষ্যে পৌঁছার মাধ্যমে বাংলাদেশে সুনিশ্চিত করে ভারতের বিপক্ষে তাদের ঐতিহাসিক জয়।
৪. বাংলাদেশ বনাম বারমুডা
২৫ মার্চ ২০০৭ সালে কুইন্স পার্ক ওভাল, পোর্ট অব স্পেনে বাংলাদেশ বারমুডার বিপক্ষে খেলতে নামে। বৃষ্টিবিঘ্নিত এই ম্যাচে বাংলাদেশ সাত উইকেটে জয় লাভ করে। এই ম্যাচে মোহাম্মদ আশরাফুল ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হোন।
৫. বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
জর্জ টাউন, গায়ানা ৭ এপ্রিল ২০০৭ সালে বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সুপার এইট পর্বের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫১ রান করে। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করতে এসে ৪৮.৪ ওভারে ১৮৪ রান করেই অলআউট হয়ে যায়। বাংলাদেশ তুলে নেয় ৬৭ রানের একটি বিশাল জয়। এই ম্যাচে ৮৭ রান করে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হোন আশরাফুল।
৬. বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড
শের-ই- বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মিরপুরে ২০১১ সালের ২৫ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৪৯.২ ওভারে ২০৫ রান করে অলআউট হয়। জবাবে আয়ারল্যান্ড ৪৫ ওভারে ১৭৮ রান করেই সব উইকেট হারিয়ে ফেলে। ফলে বাংলাদেশ ২৭ রানে জয়লাভ করে। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হোন তামিম ইকবাল।
৭. বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড
২০১১ সালের ১১ই মার্চ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচে ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৪ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৫ রান করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভারেই ৮ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই উইকেটের এই জয় বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে নতুন ভাবে মেলে ধরে। ইমরুল কায়েস এই ম্যাচের নায়ক নির্বাচিত হোন।
৮. বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডস
২০১১ সালের ১৪মার্চ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামে বাংলাদেশ খেলতে নামে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। এই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৬.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৬০ রান করতে সক্ষম হয়। তারপর বাংলাদেশ ব্যাট করতে নেমে ৪১.২ ওভারে ৪ উইকেটে নির্ধারিত টার্গেটে পৌঁছে যায়। এতে খুব সহজেই ৬ উইকেটে বাংলাদেশের জয় লাভ সুনিশ্চিত হয়। ম্যাচ সেরা হোন ইমরুল কায়েস।
৯. বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্থান
১৮ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সালে ক্যানবেরায় বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ২৬৭ রান করে। জবাব দিতে নেমে আফগানিস্থান ৪২.৫ ওভারে ১৬২ রান করে অলআউট হয়ে যায়; ফলে বাংলাদেশ ১০৫ রানে জয় লাভ করে। ম্যাচ সেরার পুরস্কার লাভ করেন মুশফিকুর রহিম।
১০. বাংলাদেশ বনাম স্কটল্যান্ড
৫ই মার্চ ২০১৫ সালে স্যাক্সটন ওভাল, নেলসনে বাংলাদেশ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে। এই ম্যাচে স্কটল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩১৮ রান করে। ৩১৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খেলতে নেমে বাংলাদেশ ৪৮.২ ওভারেই ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। ক্রিকেট বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এটি ছিলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়।
১১. বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড
অ্যাডিলেডে ৯ই মার্চ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে। এই ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৭৫ রান করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নেমে ৪৮.৩ ওভারে ২৬০ রানে অলআউট হয়ে যায়। ফলে ১৫ রানে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় লাভ করে। এই ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হোন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
আসন্ন ২০১৯ সালের ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ তাদের জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে এমনটিই সবার প্রত্যাশা।