তরুণ বয়সে এমবাপে থেকেও ভালো খেলতেন যে পাঁচ ফুটবলার1 min read
Reading Time: 4 minutesএইতো গত বিশ্বকাপেই সারা বিশ্ব অবাক চোখে এই তরুণ খেলোয়াড়ের খেলা দেখেছে। ফ্রান্সের জাতীয় দলে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলা মাত্র ১৯ বছর বয়সেই কিলিয়ান এমবাপে ফ্রান্সের ঘরে এনে দিয়েছিলেন স্বপ্নের বিশ্বকাপ। ফ্রান্সের এই বিজয় রথের সঙ্গী হয়ে বিশ্বকাপে চারটি গোল করেছিলেন তিনি এবং চারটি গোলই ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে। এমনকি ফাইনাল ম্যাচেও তার পা থেকে আসে একটি গোল। তবে বিশ্বকাপ খেলেই থেমে যান নি এই তরুণ তারকা, বিশ্বকাপের পর লীগ-১ এ ২৫ ম্যাচে ২৭ গোল করে পিএসজিকে শীর্ষ তালিকায় রেখেছেন তিনি। এছাড়া বিশ্বের সর্বকালের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল খেলোয়াড় হিসেবে দামী খেলোয়াড়ের তালিকায় স্থান দখল করে আছেন বর্তমান সময়ের দারুণ জনপ্রিয় এই খেলোয়াড়।
আসুন দেখে নেই, এমবাপের মতো তরুণ বয়সে বিশ্ব ফুটবলকে তাদের পায়ের ঝড়ে কাঁপিয়েছিলেন যে পাঁচজন বিশ্বসেরা খেলোয়াড়-
লিওনেল মেসি
-জন্ম ১৯৮৭; খেলা শুরু করেছিলেন ২০০৪ থেকে
বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের যদি কোন তালিকা করা হয় তবে সেই তালিকায় মেসির নাম থাকবেনা, সেটা কখনো হতে পারে না। মেসি এই তালিকায় হুট করেই জায়গা করে নেন নি, মাত্র ১৬ বছর বয়সের সময়েই তখনকার সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় রোনালদিনহো মেসিকে তার চেয়েও ভালো ফুটবলার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। রোলানদিনহোর কথা সত্যি প্রমাণ করতেই যেন পরবর্তী তিন বছরের মধ্যেই বার্সেলোনার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে আবির্ভূত করে নিয়েছিলেন তরুণ মেসি। এ পর্যন্ত মেসি তার ক্লাব বার্সেলোনার জন্য ৫৫০ টির বেশি গোল করেন এবং এনে দেন প্রায় ৩০টিরও বেশি ট্রফি।
মাইকেল ওয়েন
-জন্ম ১৯৭৯; খেলেছেন ১৯৯৭ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত
১৯৯৭ সালে যখন মাইকেল ওয়েন লিভারপুল ক্লাবে যোগ দেন, তখন তৎকালীন ফুটবল বিশেষজ্ঞ কার্ল হেইঞ্জ মাইকেল ওয়েনের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, “মাত্র ১৭ বছর বয়সে এত অসাধারণ খেলা, সত্যিই অবিশ্বাস্য।” তিনি আরো বলেছিলেন যে দুই সিজন খেলা হলে না হতেই মাইকেল ওয়েন একজন তারকা খেলোয়াড় হয়ে যাবেন।
মাইকেল ওয়েনও যেন ঠিক তেমনই খেলা শুরু করেন এবং তার প্রথম খেলাতেই গোল করেন। পরবর্তী বছর মাইকেল ওয়েন লীগে একাই ১৮টি গোল করে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই মাইকেল ওয়েন ইংল্যান্ডের জাতীয় দল থেকে ডাক পান এবং ইংল্যান্ডের সর্ব কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় দলে খেলা শুরু করেন। যদিও সেই বছর পেনাল্টি শুটে ইংল্যান্ড হেরে যায়, তবুও মাইকেল ওয়েন বিশ্বের অন্যতম একজন খেলোয়াড় হিসেবে ইতোমধ্যেই চিহ্নিত হয়ে যান।
১৯৯৯ সালে লীগে তিনি দ্বিতীয় বারের বল গোল্ডেন বুট অর্জন করেন এবং মাত্র ২১ বছর বয়সেই তিনি সেরা ফুটবলার হিসেবে ব্যালন ডি’অর জিতে নেন। তবে দুঃখের বিষয় এই যে প্রতিনিয়ত ইনজুরিতে ভোগার কারণে এর পর থেকেই তার এই বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের পতন হয়েছিল।
পেলে
-জন্মঃ ১৯৪০ সালে; খেলেছেন ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই ফুটবলার তার খেলা শুরু করার প্রথম থেকেই রাজত্ব করা শুরু করেছিলেন ফুটবল জগতে। যদিও প্রথম দুই বছরের মধ্যেই সানটোস ক্লাবের হয়ে প্রায় একশরও বেশি এবং জাতীয় দলের হয়ে পাঁচটি গোল করে ফেলেছিলেন, তবুও ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত পেলেকে কেউ তেমন একটা চিনত না।
তবে সেই বিশ্বকাপের পর কি হয়েছিল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পেলে আসলে কি ছিলেন? তিনি কেমন ফুটবল খেলতেন সেটা তার ৯২ টি হ্যাট্রিক, ব্রাজিলের সর্বচ্চ গোলদাতা হওয়া এবং ক্যারিয়ারের ১২৮৩টি গোল আসলে খুব সামান্যই উপস্থাপন করতে পারে। তবে তিন তিনবার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন পেলে এটুকুই তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে আসার জন্য যথেষ্ট। পেলে শেষ খেলেছিলেন সেই ১৯৭০ এর দিকে, তবুও আজ অবধি সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পেলের নামই প্রথমে আসে ফুটবলের রাজ্যে তার সেই রাজত্বের কারণেই।
১৯৬২, ১৯৬৬ এবং ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ বিজয়ী সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় পেলে মূলত স্ট্রাইকার পজিশনে খেললেও তিনি ছিলেন একজন দুর্দান্ত প্লে মেকার। এছাড়া দলের প্রয়োজনে হুট করে ডিফেন্সে গিয়েই গোল বাঁচিয়েছেন অনেকবার। ১৯৬৯ থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলিয়ান কোচকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার দলের সবচেয়ে সেরা গোলকিপার কে? তখন তিনি মজার এক উত্তর দিয়েছিলেন। হ্যাঁ! তিনি নাম বলেছিলেন পেলের। তার মতে ব্রাজিলিয়ান দলে যে কোন পজিশনের জন্যই সবচাইতে সেরা খেলোয়াড় হলেন এই পেলে। তবে পেলে সম্পর্কে সবচাইতে ভক্তি সহকারে কথা বলেছিলেন হাঙ্গেরিয়ান লিজেন্ড ফেরেংক পুসকাস, তিনি বলেছিলেন, সর্বকালের সবচাইতে সেরা খেলোয়াড় হচ্ছেন আলফ্রেডো ডি স্টেফেনো। তবে আমি পেলেকে কখনই এই তালিকায় আনব না, কারণ আজ পর্যন্ত এমন কোন তালিকা হয়নি যেখানে পেলেকে ধারণ করা সম্ভব। তিনি এসব কিছুরই ঊর্ধ্বে।”
ডানকান এডওয়ার্ডস
-জন্ম ১৯৩৬; খেলেছেন ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত
যদিও ১৯৫৮ সালে মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি বছর ফুটবল খেলতে পেরেছিলেন তিনি, তবুও বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় যেহেতু তার নামটা সবসময় থাকে তবে আপনাকে বুঝে নিতে হবে কি অসাধারণ একজন খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। মাঝমাঠ কাঁপানো এই ফুটবলার মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলা শুরু করেছিলেন। তবে এই খেলোয়াড় তার প্রথম গোল করেন ক্যারিয়ারের ৩৫ তম ম্যাচে এসে।
মাঝমাঠে অসাধারণ নৈপুণ্যের কারণেই তাকে সবাই “দ্য বিগ ডানকান” বলে ডাকা শুরু করেছিল। মাত্র পাঁচ বছর খেলতে পারার পরই একটি প্লেন ক্রাশে মৃত্যু বরন করেন এই কিংবদন্তি ফুটবলার।
ওয়েন রুনি
-জন্ম ১৯৮৫ সালে; খেলা শুরু করেছিলেন ২০০২ সাল থেকে
জাতীয় দলের হয়ে ৫৩টি গোল করে ইংল্যান্ডের সবচাইতে বেশি গোলদাতা ওয়েন রুনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখেন মাত্র ১৬ বছর বয়সেই। এত অল্প বয়েস হওয়ার পরেও ২০০৪ সালের মধ্যে মাত্র দুই বছরে তিনি এভার্টন ক্লাবের হয়ে ৭৭টি ম্যাচ খেলে ফেলেছিলেন। ইউরোপের ইতিহাসে সর্ব কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে তিনি প্রথম গোল করেছিলেন সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে।
২৫৩টি গোল করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে সর্বচ্চ গোলদাতার তালিকায় প্রথম স্থানটি দখল করে রেখেছেন এই ফুটবলার। এছাড়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অর্জনের ঝুড়িতে ১৬টি ট্রফি এনে দিয়েছেন এই রুনি। প্রিমিয়ার লীগে ক্লাবের হয়ে সর্বচ্চ একক গোলদাতার রেকর্ডটিও এই তারকা খেলোয়াড়ের দখলে।
ইউরোপের ইতিহাসে এবং ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় সবসময় জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকবে ওয়েন রুনির নাম।