ইতিহাস

এজেন্ট গার্বো- কৃষক থেকে বৃটেনের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ডাবল এজেন্ট?1 min read

এপ্রিল ৭, ২০১৯ 6 min read

author:

এজেন্ট গার্বো- কৃষক থেকে বৃটেনের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ডাবল এজেন্ট?1 min read

Reading Time: 6 minutes

মাদ্রিদ। ১৯৪১ এর বসন্ত। ছোটখাট দর্শনের একজন স্প্যানিস ব্যাক্তি ধীর পায়ে হেঁটে গেলেন জার্মান এম্ব্যাসির ভেতর এবং বদলে দিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভাগ্য! তাঁর নাম সিনর লোপেজ। এটি ছিল তাঁর প্রথম মিথ্যা। জানালেন তিনি তাঁর পিতৃভূমির জন্য কাজ করতে চান, আরেকটি মিথ্যা। কিন্ত জার্মান সিক্রেট সার্ভিস কোন এক দৈব কারণে তাঁর কথা বিশ্বাস করে ফেলল। হয়তো এর কারণ তাঁর সরল মুখে মিথ্যা বলার ক্ষমতা। মিথ্যা বলায় তিনি অদ্বিতীয়। তাঁর সুচারু কৌশল আর ধোঁকা দেয়ার ক্ষমতায় যে স্বয়ং হিটলার বোকা বনে যাবেন তা কে বা ভেবে ছিল। কিন্ত আসল সত্য হল তিনি ছিলেন একজন ব্রিটিশ ডাবল এজেন্ট যিনি একটি আস্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন, যার সমস্তটাই ছিল বানোয়াট। তাঁর মিথ্যার এই খেলায় ৩৫০,০০০ জার্মান সেনা বেরিয়ে পড়েছিল কাল্পনিক এক সৈন্যদলের বিরুদ্ধে, যার আদতে কোন অস্তিত্বই ছিলনা।

এই গল্প একজন মাস্টার মাইন্ড মিথ্যাবাদীর, একজন দারুণ অভিনেতার, একজন ডাবল এজেন্টের যিনি একাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছিলেন।

শুরুটা খুব সাধারণ

১৯১২ সালে স্পেনের কাতালুনিয়ার বার্সালোনায় এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম নেন হুয়ান পুজোল গার্সিয়া। বংশানুক্রমে একজন কৃষক হিসেবে তিনি মোটামুটি একটি স্বচ্ছল, স্বাধীন এবং অনাড়ম্বর জীবন পেয়েছিলেন। তবে তার সেই জীবন স্থায়ী হয় ১৯৩৬ সাল পর্যন্তই যখন স্পেন সিভিল ওয়ারে জড়িয়ে পড়ে।

স্প্যানিস সিভিল ওয়ার

২৪ বছর বয়সী পুজোল গার্সিয়া সারাজীবনই রাজনৈতিক চরমপন্থীদের ঘৃণা করে এসেছেন। তাই মিলিটারিতে যোগদানের কথা ভাবেননি কখনো। কিন্ত গল্পের মোড় ঘোরে তখনই যখন তাঁকে বামপন্থী রিপালিকান দলে যোগ দিতে হয়। কিন্ত কখনোই মন থেকে তাদের মেনে নিতে পারেননি। এর পেছনের কারণ হল এই রিপাবলিকানরাই তাঁর বোনের জামাইকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, গ্রেপ্তার করেছিল তাঁকে আর তাঁর মাকে। তাই বাধ্য হয়ে রিপাবলিকানদের সাথে কাজ করলেও তাঁর চোখ ছিল জেনারেল ফ্র‍্যাংকো এর White Nationalist দলের দিকে। তাই সুযোগ বুঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নকল কাগজপত্র তৈরি করে এক সময় যোগ দেন ন্যাশনালিস্ট দলে। বলতে গেলে তাঁর দ্বৈত চরবৃত্তি জীবনের হাতেখড়ি হয় এখানেই।

পরবর্তীতে জেনারেল ফ্র‍্যাংকো একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলে তাদের মনোভাবেও বিরক্ত হয়ে দল ত্যাগ করে চলে যান পুজোল। আবার গিয়ে তাঁর পুরনো পেশাতেই মনোনিবেশ করেন।এই দুই দলের আচরণ তাঁকে ফ্যাসিস্ট আর কমিউনিস্ট দুই পক্ষের প্রতিই বিরুপ করে তোলে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা

যখন পুজোল তাঁর সাধারণ জীবন যাপন করছিলেন, ঠিক তখনই একজন স্বৈরশাসক তার ক্ষমতার দাপটে পৃথিবী জয় করার স্বপ্ন দেখছিলেন জার্মানিতে-এডলফ হিটলার। ১৯৩৯ এর সেপ্টেম্বরে নাৎসিবাহিনী পোল্যান্ড দখল করে। তার দুদিন পর গ্রেট ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। স্পেনের ছোট শহরে বসে খামার চালানো পুজোল দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে দেখছিলেন এই যুদ্ধ শুরুর দামামা। স্পেনের সিভিল ওয়ারের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বুঝতে পারছিলেন ইউরোপের ভবিষ্যৎ কি হতে চলেছে। তিনি জানতেন এই যুদ্ধ না থামালে ধ্বংস হয়ে যাবে মানব সভ্যতা।

১৯৪০ সালে জার্মানরা নর্দার্ন ফ্রণ্টে ব্রিটিশ বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল। পুজোল যুদ্ধে উদারপন্থী ব্রিটেনকে একা হারতে দেখে ব্যথিত হচ্ছিলেন। আর না! এবার পুজোলকে কিছু একটা করতেই হতো। কিন্ত একা পুজোল কি বা করতে পারেন?

প্রথম পদক্ষেপ

পুজোল একবার না, তিন তিনবার মাদ্রিদে অবস্থিত ব্রিটিশ এম্ব্যাসিতে গিয়ে সাহায্য করতে চেয়েও ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসেন। একজন অনভিজ্ঞ নগণ্য ব্যক্তিকে কেইবা ভরসাকরবে। কিন্ত পুজোল হাল ছাড়ার মানুষ নন। তিনি নিলেন এক পাগলাটে সিদ্ধান্ত।

পুজোল চলে গেলেন মাদ্রিদে অবস্থিত জার্মান এম্ব্যাসিতে। সেখানে গিয়ে পরিচয় দিলেন একজন চরমপন্থী ফ্যাসিস্ট হিসেবে আর সাহায্য করতে চাইলেন জার্মান পক্ষকে। জার্মানি মরিয়া হয়ে ছিল ব্রিটেনে তাদের চোখ-কান রাখতে। সিদ্ধান্ত হলো পুজোলই হবেন তাদের সেই চোখ আর কান।

পুজোল একজন স্প্যানিস অফিসারের বেশ ধরে পপ্রিন্টার ম্যানকে বোকা বানিয়ে তৈরি করেন নকল ডকুমেন্টস যা হুবুহু ডিপ্লোমেট পাসপোর্টের মতই। এরপর তাঁকে দেয়া হয় ছোট একটা এসপিওনাজ কোর্স, অদৃশ্যকালি, একটা কোড বুক, কিছু টাকা আর একটা নতুন নাম- এনরিখ। যেই পুজোল ব্রিটিশদের সাহায্য করতে চাইছিলেন, তিনি হয়ে গেলেন জার্মান চর।

এরপর শুরু হল তাঁর যাত্রা। তিনি সরাসরি ব্রিটেনে না গিয়ে চলে গেলেন তৎকালীন নিরপেক্ষ পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে। লিসবন ছিল বিশ্বে তাবত স্পাইদের আস্তানা। যেই মানুষ জীবনে কোন দিন ব্রিটেন চোখে দেখেননি, তিনি বিভিন্ন গাইডবুক, ম্যাগাজিন, ব্রোশিয়ের আর লিফলেট ইত্যাদি এবং একটি ব্রিটিশ ডিকশনারির সাহায্য নিয়ে নিজেকে একজন ব্রিটিশ হিসেবে শুধু পরিচিতই করেন নি, সেইসাথে গড়ে তুলেছিলেন ভুয়া এজেন্টদের একটি বিশাল ও নিখুঁত নেটওয়ার্ক যাদের অস্তিত্ব ছিল শুধুমাত্র পুজোলের মাথায়। এই নেটওয়ার্ক এর সূত্র দিয়ে জার্মান ইনটেলিজেন্সকে পুজোল পাঠাতে থাকেন একের পর এক তথ্য। তথ্যগুলী এতটাই বিশ্বাসযোগ্য করে পুজোল উপস্থাপ  করতেন যে, ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স MI5 পর্যন্ত ধোঁকায় পরে বিশাল এক স্পাই হান্ট করে বসে। ফলাফল শূন্য। এতে করে জার্মান ইন্টেলিজেন্স এর কাছে পুজোল হয়ে ওঠেন অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য।

জার্মান ইন্টেলিজেন্স পুজোলের ফাঁকি বুঝতে না পারলেও, বুঝতে পেরেছিলেন আমেরিকান এক নেভাল অফিসার লেফটেন্যান্ট প্যাট্রিক ডেমোরেস্ট। তিনি আঁচ করছিলেন কেউ একজন জার্মানদের ভুল তথ্য পাঠাচ্ছে। তিনি তাঁর ব্রিটিশ কাউন্টার পার্ট এজেন্সিকে জানান। ততদিনে MI5  তাঁর মূল্য বুঝতে পেরেছিল।কেননা কিছুদিন আগেই শুধুমাত্র পুজোলের মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতেই জার্মানরা এক কাল্পনিক সেনা বহরকে আক্রমন করতে সৈন্য পাঠায়। কিন্ত আদতে সেই বহরের কোন অস্তিত্বই ছিল না।

MI5 এ যোগদান

অবশেষে ১৯৪২ এর এপ্রিলে তাঁকে ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স স্বীকৃতি দান করে। তাঁকে লন্ডনে নিয়ে আসা হয়।পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রী আর সন্তানকেও লন্ডনে নিয়ে আসা হয়।

এবার শুরু হয় পুজোলের আসল কাজ। সেই সময়ের জনপ্রিয় একজন অভিনয় শিল্পীর নামানুসারে তাঁর নাম রাখা হয় গার্বো। কারণ অভিনয়ে তিনিও যে কম যান না। এখান থেকে ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স এর সহায়তায় সাড়ে তিনশ এর বেশি বার্তা পাঠান গার্বো। এতটাই বুদ্ধিমত্তার সাথে বানানো তথ্য পাঠাতেন গার্বো যে জার্মান ইনটেলিজেন্স ব্রিটেনের মাটিতে আর কোন স্পাই পাঠানোর প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেনি।

তবে গার্বো কিছু মিথ্যা আর কিছু সত্য তথ্য মিশিয়ে পাঠাতেন, যাতে ক্রস চেক করার সময় তাদের সন্দেহ না হয়। যেমন-বলা যায় অপারেশন টর্চলাইট এর কথা।গার্বো জার্মান ইন্টেলিজেন্সকে জানান যে জাহাজ ভর্তি সৈন্য এবং অস্ত্র নিয়ে ব্রিটিশ নৌবহর রওনা হতে যাচ্ছে, যার গায়ে ভূমধ্যসাগরীয় ক্যামোফ্ল্যাজ রয়েছে। যা একেবারেই সত্যি তথ্য। কিন্ত গার্বো যা করেন তা হলো চিঠির গায়ে জাহাজ ছাড়ার আগের তারিখের স্ট্যাম্প লাগিয়ে দেন কিন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে পাঠান নৌবহর ত্যাগের অনেক পরে। যেহেতু এয়ার মেইলে চিঠি পাঠানো হতো, তাই জার্মান ইনটেলিজেন্স এটাকে বিমান কোম্পানির ভুল মনে করে তাঁর পাঠানো তথ্যে খুবই আপ্লুত হয়ে তাঁকে বোনাস দিয়ে বসেন। বেতনও বাড়িয়ে দেন ৫০%।

কিন্ত এই এয়ার মেইলের সময় বিভ্রাট কমাতে জার্মান ইন্টেলিজেন্স ব্যবস্থা করে রেডিও ট্রান্সমিশনের। গার্বোর উপর বিশ্বাস করে জার্মান ইনটেলিজেন্স তাঁকে পাঠায় একটি গোপন রেডিও ট্রান্সমিশন প্ল্যান এর ১৭ টি মাইক্রো ডট ছবি।সেইসাথে পাঠায় ১টি টপ সিক্রেট সাইফার টেবিল যাতে রেডিও ট্রান্সমিশনগুলো এনকোড করা যায়। MI5 সেটি তাড়াতাড়ি ব্লেচলি পার্কে কোড ব্রেকারদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এখন ব্রিটিশ কোড ব্রেকাররা খুব সহজেই তাদের আভ্যন্তরীণ বার্তাগুলোকে এনকোড করে ফেলতে পারছিল যা জার্মানদের একেবারেই অজানা।

অপারেশন ফর্টিটিউড

১৯৪৪ এর জুনে ডি-ডেতে আক্রমণের জন্য যে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল তার নাম দেয়া হয়েছিল অপারেশন ওভারলর্ড। আর এই মিশন সফল করার মূখ্য চালক ছিলেন গার্বো, যার মিশন ছিল ধোঁকার মাধ্যমে অপারেশন ওভারলর্ডকে সফল করা।গার্বোর এই মিশনের নাম দেয়া হয়েছিল অপারেশন ফর্টিটিউড।

কমান্ডার জেনারেল আইজেন হাওয়ার এবং ফিল্ড মার্শাল মন্টগোমারি জানতেন এটি হবে যুদ্ধের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও ঝুকিপূর্ণ মুহুর্ত। এটি অনেকটা ডু ওর ডাই পরিস্থিতি। এই জুয়ায় হার মানে পুরো যুদ্ধে হেরে যাওয়া।

অপরদিকে তাদের জন্য অপেক্ষায় ছিল জার্মানির শ্রেষ্ঠ সৈনিক ফিল্ড মার্শাল রোমেল।যিনি তার দূরদর্শিতা আর বিচক্ষণতার জন্য বিখ্যাত। তিনি ছিলেন আটলান্টিক ওয়ালের দায়িত্বে। তিনি হাজার হাজার মাইল সমুদ্রতট পরিখা আর দুর্বোধ্য বাঁধা সৃষ্টি করে সেটিকে মৃত্যুপুরী করে তুলেছিলেন। সেই সাথে ছিল মাইলের পর মাইল মাইন, সৈন্য আর অস্ত্রশস্ত্র। কারণ রোমেল বিশ্বাস করতেন যে মিত্রবাহিনীর আক্রমণ সমুদ্রেশেষ করে দিলেই জয় হাতের মুঠোয় আনা যাবে। কিন্ত এত প্রস্তুতির পরও রোমেল শুধু জানতেন না আক্রমণ হবে কখন। আর এই সুযোগটাই প্রয়োজন ছিল গার্বোর।

গার্বোর মূল কাজ শুরু হল এখন।তাঁর মিশনের মূল অংশ হল জার্মান ইনটেলিজেন্সকে বিশ্বাস করানো যে মিত্র বাহিনীর মূল আক্রমণন রম্যান্ডিতে না হয়ে হবে স্ট্রেইট অব ডোভারে। নরম্যান্ডির আক্রমণ শুধুই একটি ডাইভার্শন। তাঁর এই তথ্যের ভিত্তিতেই জার্মান বাহিনীর ২১ ডিভিশন সৈন্যকে অন্য জায়গায় রাখা হয়।

মিত্রবাহিনী নরম্যান্ডির ৫টি সৈকতে একযোগে আক্রমণ করে এবং আঙ্গুলের তুড়িতেই তা দখল করে নেয়। কিছুটা হতভম্ব হয়ে হিটলার ডেকে পাঠান তাঁর প্যানযার ডিভিশন, যা ছিল মিত্র বাহিনীর সবচেয়ে বড় ভয়।

গার্বোর পক্ষ থেকে আসল বার্তাটি পাঠানো হয় ৯ জুন। এটি ছিল সেইদিন, যেদিন হিটলার এবং হাই কমান্ড নিজেদের মধ্যে তর্ক করছিলেন যে নরম্যান্ডিই আসল আক্রমণ কিনা,  এবং সকল রিসার্ভ বেলজিয়াম আর ফ্র‍্যান্স থেকে সরিয়ে এনে নরম্যান্ডি পুনরায় দখল করা উচিত হবে কিনা। ঠিক সেসময় গার্বো পাঠালেন তাঁর তাসের টেক্কা।বললেন “নরম্যান্ডি আক্রমণ শুধু একটি ধোঁকা, বিশ্বাস করুন আমাকে”।

তাঁর এই কথাটির উপর ভরসা করেই হিটলার বার্তা পাঠিয়ে তাঁর প্যানযার ডিভিশনকে ফিরে যেতে বললেন, যারা ইতিমধ্যেই রওনা হয়ে গিয়েছিল। ঠিক এই মূহুর্তটিতেই রচিত হয়েছিল নরম্যান্ডির ভবিষ্যৎ, যুদ্ধের ভবিষ্যৎ আর পুরো মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ – আর এর রচয়িতা স্বয়ং গার্বো।

এরপর সবটুকুই ইতিহাস।

সম্মান দু’তরফ থেকেই

যুদ্ধকালীন তাঁর এই অসাধারণ অবদানের জন্য ব্রিটিশ পক্ষ থেকে তাঁকে MBE সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। অপরদিকে জার্মানিও তাঁকে Iron Cross Second Class মেডেলে সম্মানিত করে। এর ফলে হুয়ান পুজোল গার্সিয়া হয়ে যান পৃথিবীর ইতিহাসের একমাত্র ডাবল এজেন্ট যিনি দুইপক্ষ থেকেই পেয়েছিলেন পুরস্কার!

নকল মৃত্যুর সাজানো নাটক

যুদ্ধ শেষ হবার পর MI5 এর সহায়তায় পুজোল এঙ্গোলা ফিরে যান। সেখানে তিনি ১৯৪৯ সালে নিজের মৃত্যুর ঘটনা সাজান। তিনি এটা মূলত নিরাপত্তার স্বার্থেই করেন।তাঁর মনে হয়েছিল বেঁচে যাওয়া কিছু উগ্রপন্থী নাৎসি তাঁকে খুঁজে বের করে মেরে ফেলতে পারে। এরপর তিনি ভেনিজুয়েলা গিয়ে খামার আর বইয়ের দোকান দিয়ে সাধারণ জীবন যাপন করতে শুরু করেন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি হলে আবার বিয়ে করে সংসারও পেতে বসেন।

তাঁর বেঁচে থাকার খবর সামনে না আসত যদিনা তিনি ১৯৮৪ সালের দিকে ডি-ডের এর বার্ষিকী উৎযাপন করতে লন্ডনে এসে পুরোনো সতীর্থদের সাথে দেখা করতেন! এর কিছু বছর পর কারাকাসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই অসাধারন এজেন্ট এবং তাঁকে ভেনিজুয়েলায় সমাধিস্থকরাহয়।

তথ্যসূত্রঃ Nigel west এর Operation Garbo: The Personal Story of the Most Successful Spy of World War IIবইঅবলম্বনে

লেখক- Farzana Labiba

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *