ইহুদি জাতি: বিদ্বেষ আর গণহত্যার কিংবদন্তি 1 min read
Reading Time: 6 minutesঅ্যাবি মানের রচনায় অস্কার জয়ী চলচ্চিত্র “জাজমেন্ট অ্যাট নুরেমবার্গ” দেখা হয়েছে? মার্কিন প্রসিকিউটর চরিত্রে রিচার্ড ওয়াইল্ড মার্কের সাক্ষ্য প্রদানের সময়কার কনসানট্রেশন ক্যাম্পের চিত্রটা দেখে একবারও কি মনে হয়নি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিতে যা কিছু হয়েছিল তার সবই যুদ্ধ নয়, বরং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা? কিংবা আইনমন্ত্রী আর্নস্ট ইয়ার্নিং যখন বলছিলেন, জার্মানিতে কি ঘটছিল তার কিছুই কেউই জানতো না। তখন সাধারণ মানুষ কি একবার অন্তত জানতে চায় নি কেন এই নির্মমতা?
“জাজমেন্ট অ্যাট নুরেমবার্গ” এর মতো এমন আরো হাজারো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। যার অনেকগুলোই সারা বিশ্বকে বারবার ভাবিয়েছে। “দ্য পিয়ানিস্ট”, “শিন্ডলার্স লিস্ট” কিংবা “লাইফ ইজ বিউটিফুল” এর মত বিশ্ব বিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলো বারবার একটা প্রশ্নই সবার সামনে রেখে গিয়েছে, এতটা নির্মম কেন ছিলেন এডলফ হিটলার?
অ্যান্টি সেমিটিসম বা ইহুদি বিদ্বেষ কি এবং কেন?
ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাব সব সময়ই সবখানে পরিলক্ষিত হয়। এটা যে খুব বড় ধরনের অন্যায় তা কোনভাবেই বলা চলে না। ইহুদি জাতির জন্ম থেকেই তাদের এক রকম উত্থান পতনের মাঝ দিয়ে যেতে হয়েছে। ইহুদিদের নেতা মোজেস বা ইসলামে যিনি মূসা (আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তার প্রস্থানের পর থেকেই মূলত ইহুদিদের দূর্ভোগের সূচনা হয়। মোজেস বা মূসা নবীর নীতি অনুসারে সুদ খাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। সেই সাথে চিরস্থায়ী সুখ ভোগের কোন উপায় ছিল না। ৫০ বছর পরপরই হাত বদল হতো সম্পত্তির। কিন্তু মূসা নবীর প্রস্থানের পরই তারা নিজেদের রাজকীয় ক্ষমতায় আসীন করার লক্ষ্যে আবারো ফিরে আসে সুদের ব্যবস্থায়। সুদের ক্ষেত্রে তারা কোনভাবেই ছাড় দিতে রাজি ছিল না।
এক সময় তারা মোজেসের প্রবর্তিত সব নীতিই বদলে ফেলে “রুলস অফ স্ট্রেনজার” হিসেবে। শুরু করে ভোগবাদের নতুন নীতি। নিজ সম্প্রদায়ের বাইরে চড়া সুদে ব্যবসা ও একের পর এক নির্মম ব্যবস্থা নিয়ে এক সময় আশপাশের সবার বিদ্বেষের কারণ হয়ে উঠে ইহুদি জাতি।
এক পর্যায়ে ঈসা নবীর আগমন হলে খ্রিষ্টধর্ম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। একদিকে সামাজিক অনুশাসন মেনে চলা জনপ্রিয় খ্রিস্ট ধর্ম, অন্যদিকে সম্পূর্ণ সুদ ব্যবস্থা আর ভোগবাদী মানসিকতার ইহুদিরা। তাই একের পর এক রাষ্ট্র শুরু করে ইহুদিদের নির্বাসন। ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫৫০ সালের মাঝেই ইহুদিদের নির্বাসিত করে ফেলা হয়।
এক পর্যায়ে ইহুদিরা পুরো বিষয়টাকে ‘অ্যান্টি সেমিটিজম’ নাম দিয়ে প্রচার করা শুরু করে। পুরো বিষয়টাকেই এমনভাবে প্রচার করা হয় যেন ইহুদিদের বিপক্ষে কথা বলাই বড় এক অন্যায়, মানবতার বিরোধী এক অপরাধ। অ্যান্টি সেমিটিসমে যুক্তি-তর্ক কিংবা সত্য-মিথ্যার কোন ধার ধরা হয়না। এখানে ইহুদি বিরুদ্ধাচরণই বড় অন্যায় হিসেবে দেখা হয়।
হলোকাস্ট এবং হিটলার
সব কিছু প্রকট আকারে ধরা পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর তার পরবর্তী সময়ে। এখানে স্মরণ রাখা দরকার, আজকের দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে ভিত্তি তার প্রায় পুরোটাই নির্বাসিত ইহুদিদের গড়ে দেয়া। একইভাবে ১৯১৭ সালে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবটাও শুরু করেছিল এই ইহুদিরাই। তবে অবাক করা ব্যাপার হলো, হিটলার এবং তার নাজি বাহিনী ক্ষমতায় আসার বেশ আগেই হিটলারের মাঝে ইহুদি বিদ্বেষ প্রবলভাবে দেখা যায়। ১৯১৯ সালে হিটলার লিখেছিলেন, “যৌক্তিক এই ইহুদি বিদ্বেষ অবশ্যই আইনত বৈধ করা উচিত… এটার সবশেষ পদক্ষেপ হওয়া উচিত, সমস্ত ইহুদিদের মুছে ফেলা।“
হিটলার পরবর্তীতে তার ইহুদি বিদ্বেষ মনোভাবকে ধর্মের চেয়ে রাজনীতিতে অনেক বেশি সক্রিয় করে ফেলেছিলেন। এক সময় প্রচার করা হয় যে, ধর্মীয় ক্ষেত্রে ইহুদি বিদ্বেষ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হলেও, রাজনৈতিকভাবে ইহুদি বিদ্বেষ মোকাবিলার একমাত্র সমাধান তাদের বিনাশ করা।
জুইশ হলোকাস্ট কি?
হলোকাস্ট শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে। গ্রিক “হলুস” অর্থ সম্পূর্ণ এবং ‘কস্টুস’ অর্থ পুড়িয়ে ফেলা। এই শব্দটি দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে কোন প্রকার উৎসর্গকৃত কিছু পুড়িয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ১৯৪৫ সালের পর থেকে আমূল বদলে যায় এর অর্থ। নাজি শাসনামলে ইউরোপে লাখ লাখ ইহুদিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হত্যার ঘটনাইই প্রচার পেতে থাকে হলোকাস্ট হিসেবে।
ইহুদীদের উপর এডলফ হিটলারের অত্যাচার আর হত্যাযজ্ঞ আগে থেকে থাকলেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে “সবশেষ সমাধান” প্রশ্নে হিটলারের বর্বরতা সব কিছুকেই ছাপিয়ে যায়। কিন্তু হিটলারের কেন এই ইহুদী বিদ্বেষ?
হিটলারের অ্যান্টি সেমিটিজম
পূর্বেই যেমন বলা হয়েছিল, নিজেদের নীতির কারণে পঞ্চদশ শতকেই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিগৃহীত হতে শুরু করে ইহুদিরা। তবে জাতিগত ঐক্য আর নিজেদের রাজকীয় ক্ষমতার উচ্চ বাসনার কারণে পরের ৪০০ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় জায়গায় চলে আসে ইহুদি নেতৃত্ব।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির অন্য সব অ্যান্টি সেমিটিস্টদের মতো হিটলারও বিশ্বাস করতে শুরু করেন, বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের সবচেয়ে বড় কারণ ইহুদিদের বিশ্বাসঘাতকতা। নিজের বই মাইন ক্যাম্পে (Mein Kampf) তিনি লিখেছিলেন, ইউরোপে সাধারণ আরেকটি যুদ্ধ আসন্ন, যার ফলাফল হবে জার্মানি থেকে ইহুদিদের উচ্ছেদ।
বিশুদ্ধ জার্মান চেতনায় হিটলার মনে করতেন, ইহুদিরা কোনভাবেই জার্মানির নাগরিক নয়, তারা হয় বহিরাগত অথবা নির্বাসন আদেশের অমান্যকারী। এছাড়া বসবাসের জায়গা বৃদ্ধির অজুহাতে তিনি জার্মানির সীমানা বৃদ্ধি করতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন। ফলাফল হিসেবে ইহুদি প্রবণ পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইহুদি নিধনের ব্যাপক পাঁয়তারা শুরু করেন হিটলার।
হলোকাস্টের প্রথম পর্ব
১৯৩৩ সালের জানুয়ারির ৩০ তারিখ জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন এডলফ হিটলার। আর ১৯৩৪ সালে পল ভন হাইডেনবার্গের মৃত্যু হলে নিজেকে জার্মানির সর্বাধিনায়ক “ফুয়েরার” ঘোষণা করেন তিনি।
হিটলার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমেই লক্ষ্য হিসেবে নেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে। কমিউনিস্ট আর সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসীদের শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে মিউনিখের কাছেই ডাকাউ অঞ্চলে খোলা হয় প্রথম কনসান্ট্রেশন ক্যাম্প। পরবর্তীতে এসব হয়ে উঠে ইহুদি নিধনের ক্ষেত্র।
১৯৩৩ সালে হিটলারের ক্ষমতা গ্রহণের সময় জার্মানিতে ইহুদি ছিল ৫ লাখ ২৫ হাজারের কাছাকাছি। যা সে সময়ের জার্মান জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ। পরে বিশুদ্ধ জার্মানি গঠনের চিন্তায় ইহুদিদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়। ইহুদিদের দোকান, ইহুদি আইনজীবী, ডাক্তার সহ সব সেবা কাজেই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
১৯৩৫ সালে নুরেমবার্গ আইন নামে এক অদ্ভুত আইন করেন হিটলার। এই আইন অনুসারে যে কারো ৩য় বা ৪র্থ উর্ধ্বতন পুরুষ পর্যন্ত ইহুদি থাকলে সে খ্রিস্টান বা জার্মান নাগরিক হলেও ইহুদি হিসেবে বিবেচিত হবে। আর কারো দুই পুরুষের মাঝে কেউ ইহুদি থাকলে সে অর্ধইহুদি হিসেবে বিবেচিত হবে।
নুরেমবার্গ আইনের কারণে ইহুদিরা জার্মানিতে নিয়মিত শিকারে পরিণত হতে শুরু করে। ১৯৩৮ সালের নভেম্বরে “নাইট অফ ব্রোকেন গ্লাস” এর রাতে ইহুদিদের উপর প্রথম তান্ডব চালায় জার্মানরা। সে রাতে জার্মানিতে ইহুদিদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ আর ব্যাপক লুটপাট করে সাধারণ জার্মানরা। প্রায় ১০০ ইহুদি মারা যায় আর হাজারখানেক ইহুদিকে আটক করা হয়। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত হাজারে হাজারে ইহুদি জার্মানি থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিল। যাদের অনেকেই সফল হয়েছিল বাঁচার জন্য। আর অনেককেই বরণ করতে হয়েছিল আনা ফ্রাঙ্কের পরিণতি। আর যারা জার্মানিতে থেকে গিয়েছিল, তাদের কপালে জুটেছিল নির্যাতনের সর্বোচ্চ মাত্রা।
২য় বিশ্বযুদ্ধ এবং জার্মানির বাইরে হলোকাস্টের সূচনা
২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পর হলোকাস্টের প্রথম শিকার হয় পোলিশ ইহুদিরা। পোল্যান্ড আগে থেকেই কিছুটা ইহুদি প্রবণ অঞ্চল ছিল। ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে পোল্যান্ড দখল করে জার্মানি। দখল করার পর প্রথম ধাপেই ইহুদিদের সম্পত্তি জার্মানদের হাতে দিতে থাকে নাজি বাহিনী। বলে রাখা ভাল, দখলকৃত অঞ্চলে যারা ইহুদি ছিল না, তাদের সবাইকেই জার্মান নাগরিক বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। পোল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে স্থাপন করা হয় ইহুদিপাড়া। উঁচু দেয়াল, তারকাটার বেড়া দিয়ে জার্মানদের সাথে ইহুদিদের সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা হয়।
১৯৩৩ থেকে ১৯৩৯ সালের মাঝে প্রায় ৭০ হাজার জার্মান ইহুদি নাগরিক বন্দিদশায় থেকে মানসিক ভারসাম্য হারান কিংবা গ্যাস চেম্বারে মারা যান। যদিও বেশ কিছু প্রতিবাদের মুখে ১৯৪১ সালের আগস্টে এটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৭৫ হাজার মানুষকে আটক করেছিল হিটলারের নাজি বাহিনী।
দ্য ফাইনাল সল্যুশন
১৯৪০ সাল আসতে আসতেই ডেনমার্ক, নরওয়ে আর নেদারল্যান্ডস দখল করে নেয় জার্মানি। আর এই সব এলাকার ইহুদিদের এনে জড়ো করা হয় পোল্যাণ্ডের ইহুদিপাড়ায়। অতিরিক্ত ছোট জায়গায় লাখ লাখ ইহুদির বেঁচে থাকাই হয়ে যায় অত্যন্ত দূরহ এক ব্যাপার।
১৯৪১ সালের জুনে সোভিয়েত আক্রমণ করে বসে জার্মানি। এই আক্রমণই হলোকাস্টের ভিত মজবুত করে। জার্মানির কিলিং ইউনিট প্রায় ৫ লাখ সোভিয়েত ইহুদিদের হত্যা করে। ১৯৪১ সালের ৩১ অগাস্ট এক চিঠিতে হিটলারের শীর্ষ কমান্ডার হারমান গোরিং, সিকিউরিটি সার্ভিসের প্রধান রেইনার্ড হেড্রিচকে “ইহুদি প্রশ্নে সবশেষ সমাধান” করার জন্য তাগাদা দেন।
১৯৪১ সালের সেপ্টেম্বরে জার্মান অধিকৃত অঞ্চলের সব ইহুদিদের হলুদ তারকা সম্বলিত প্রতীক দিয়ে দেয়া হয়। এই হলুদ তারাই পরবর্তীতে ইহুদিদের চিহ্নিত করা আর নির্যাতন করার সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। হাজারে হাজারে ইহুদিদের ঠাই হতে থাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর পোল্যাণ্ডের ইহুদি পাড়ায়।
গ্যাস চেম্বারের আবিষ্কার
১৯৪১ সালের জুনের আগে পর্যন্ত বিভিন্নভাবে গণহত্যা নিয়ে গবেষণা করে আসছিল জার্মানি। আর এর সবই চলছিল অসউইচের কনসান্ট্রেশন ক্যাম্পে। সেই বছর অগাস্টে জার্মানরা প্রায় ৫০০ ইহুদিকে জিকলন বি গ্যাস প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করে।
১৯৪১ সালের শেষ দিকে পোল্যান্ডে ব্যাপক পরিমাণ ইহুদি চালান শুরু করা হয়। তাদের মোট তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। অসুস্থ, বৃদ্ধ ও দূর্বল এবং শিশু। প্রথম গণহত্যা চালানো হয় লুবিনের কাছে স্থাপিত বেলজেক কনসান্ট্রেশন ক্যাম্পে। তারিখ মার্চ ১৭, ১৯৪২ সাল। পরবর্তীতে পোল্যান্ডেই আরো ৫টি বড় আকারের গণহত্যা চালানো হয়। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সালে প্রতি মুহুর্তেই জার্মানি অধিকৃত এবং মিত্র দেশগুলো থেকে ইহুদি আসতে থাকে পোল্যান্ডে। ধারণা করা হয় শুধুমাত্র ১৯৪২ এর গ্রীষ্মের আগেই পোল্যান্ডের ওয়ারশ থেকে ৩ লাখ ইহুদিদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন ক্যাম্পে হত্যা করার উদ্দেশ্যে।
এক পর্যায়ে ওয়ারশ ইহুদি পাড়ায় ক্ষুধায় আর রোগে জর্জরিত ইহুদিরা বিদ্রোহ করে বসে। স্বশস্ত্র সেই বিদ্রোহ ইহুদিদের কিছুটা আশার আলো দেখালেও ফলাফল ছিল খুবই নেতিবাচক। ১৯৪৩ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ১৬ মে পর্যন্ত চলা এই বিদ্রোহে ৭ হাজার ইহুদির মৃত্যু হয় আর এই ২৭ দিনেই প্রায় ৫০ হাজার ইহুদিকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় কনসান্ট্রেশন ক্যাম্পের দিকে। আর ইহুদিদের মৃত্যু এই সময়টা যতটা কনসান্ট্রেশন ক্যাম্পে হচ্ছিল ততটাই হচ্ছিল ক্ষুধায় আর রোগে ভুগে।
হলোকাস্ট পরবর্তী ইহুদিসমাজ
১৯৪৪ সালের শেষ দিকেই জার্মানি বুঝতে পারে তাদের পরাজয় আসন্ন। এই সময় বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ইহুদিদের জার্মানিতে ফিরিয়ে আনা শুরু হয়। ৩০ এপ্রিল, ১৯৪৫। এইদিনেই আত্মহত্যা করেন হলোকাস্টের মূল নায়ক এডলফ হিটলার। ১৯৪৫ সালেই প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার ইহুদির মৃত্যু হয় বিভিন্ন কনসান্ট্রেশন ক্যাম্পে।
পরবর্তীতে যুদ্ধ শেষে ইহুদিদের জন্য ফিরে আসা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। প্রথমত তারা ছিল সর্বস্বান্ত। এবং প্রচন্ড দূর্বল স্বাস্থ্যের।। পুনর্বাসনও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেই ক্রান্তিকাল থেকেই ১৯৪৮ সালে উদ্ভব হয় ইসরায়েল রাষ্ট্রের। যেখান থেকে পরবর্তীতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইহুদিরা। তবে সেটা অস্ত্রে নয়। বরং ক্ষমতা আর অর্থের দিক থেকে। হেনরি ফোর্ডের লেখা “সিক্রেটস অফ জয়েনিজম” যার বড় দলিল।
কিন্তু ততদিনে ইহুদিরা পেয়ে যায় সব অন্যায়কে বৈধ করার নতুন এক শব্দ। নাম তার অ্যান্টি সেমিটিজম।
লেখক- জুবায়ের আহম্মেদ