বাংলাদেশের ইমরান খানের হাত ধরে স্ন্যাপচ্যাটের আকাশচুম্বী সাফল্য!1 min read
Reading Time: 3 minutesবর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে অনেক ধরনের প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় খবর আমরা দেখতে পাই। তবে বাঙ্গালী হিসেবে, একজন বাংলাদেশী হিসেবে যেগুলো আমাদের সত্যিকার অর্থে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে পারে এমন খবর আমরা ঠিক কয়জনই বা রাখি? পুরো পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে হাজারো বাঙ্গালী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যারা বিশ্বের দুয়ারে বাংলাদেশের নাম স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল করছেন। আর ঠিক তেমনই একজন হলেন স্ন্যাপচ্যাট নামক বিশ্ব বিখ্যাত কোম্পানির সাবেক চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার ইমরান খান!
স্ন্যাপচ্যাট এবং ইমরান খান সাফল্য!
আমরা জানি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় টেকনোলজি সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয় সিলিকন ভ্যালিতে বিশ্বের সবচাইতে মেধাবী কিছু মানুষ কাজ করে থাকেন। সেই সিলিকন ভ্যালিতেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে কাজ আসছেন বাংলাদেশের ইমরান খান।
অনেক বড় বড় কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ থাকলেও ইমরান বেঁছে নিয়েছিলেন তখনকার সময়ে স্ন্যাপচ্যাট নামের ছোট একটি কোম্পানিতে। হয়ত জীবনের সাফল্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতেই বড় কোম্পানি রেখে স্ন্যাপচ্যাটে তার যোগদান। ইমরানের হাত ধরে মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কোম্পানিটি প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানের রূপ ধারণ করে। কোম্পানিটির এই বড় সাফল্যের অন্যতম কারিগর ছিলেন। মাত্র দুই বছর কাজ করার মধ্যেই সেখান থেকে তিনি উপার্জন করে নেন প্রায় ১৪৫ মিলিয়ন ডলার। ভাবা যায় একজন বাঙালি সিলিকন ভ্যালির মতো বিখ্যাত একটি জায়গায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের একটি কোম্পানিতে কাজ করে ১৪৫ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন?
জন্ম এবং বৃত্তান্ত
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া বিশ্ব বিখ্যাত এই মানুষটির জন্ম ১৯৭৭ সালে। বাংলাদেশে শুধুমাত্র কলেজ পর্যন্ত পড়াশুনা করে পাড়ি জমান আমেরিকায়। সেখানে তিনি বিখ্যাত একটি বিশ্ববিদ্যালয় ডেনভার ডেনিয়েলস কলেজ অফ বিজনেস থেকে গ্রাজুয়েশনের পাঠ শেষ করেন।
আর দশটা মানুষের মতো ইমরান খান তার কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন একদমই সাদামাটা ভাবে। প্রাথমিক দিকে তিনি একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে যোগ দিলেও খুব বেশীদিন সেখানে কাজ করেননি। অতঃপর জেপি মর্গান নামক একটি ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানিতে বেশ কয়েক বছর কাজ করে অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সেই কোম্পানির হেড অফ রিসার্চ পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এছাড়া সেই প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে তিনি বেশ কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু ইমরান সেই কোম্পানিতেই নিজেকে থামিয়ে রাখতে চাননি। তিনি সেখান থেকে কাজ ছেড়ে আলিবাবার মত আরেকটি জায়ান্ট কোম্পানিতে যোগ দেন। পূর্বের অভিজ্ঞতা ঝুলি সমৃদ্ধ হওয়ায় আলিবাবাতেও খুব দ্রুত উন্নতি করেন তিনি।
ইমরান ততদিনে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। গুগল, ফেসবুক, ইয়াহুর মত বড় বড় অনেকগুলো কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ ছিল তার। কিন্তু সেগুলোতে যোগদান না করে বরং সদ্য শুরু হওয়া স্ন্যাপচ্যাটে যোগ দেন তিনি। পরবর্তীতে স্ন্যাপচ্যাটে তার সাফল্যের কথা তো রূপকথার মতোই।
কিছুদিন হল তিনি স্ন্যাপচ্যাট কোম্পানি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার এই পদত্যাগের খবর বিভিন্ন বড় বড় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে, সবার প্রশ্ন ছিল একটিই ‘আগামীতে কি করতে যাচ্ছেন ইমরান খান?’ এরপর কোন কোম্পানিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন তিনি?
ই-কমার্স সাইট “ভ্যারিশপ” প্রতিষ্ঠা
অন্য কোন কোম্পানিতে যোগ না দিয়ে ইমরান নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন ভ্যারিশপ নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। অনেকেই যেটিকে বর্তমান ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজনের পরবর্তী শক্ত প্রতিযোগী মানছেন। নতুন এই অনলাইন শপটির নেতৃত্বে ইমরান খান একা নন, তার সাথে রয়েছেন তার স্ত্রী কেট খান। উল্লেখ্য যে কেট খান দীর্ঘদিন ধরে আমাজনের বেশ কয়েকটি বড় পোষ্টে কাজ করেছেন। ইমরান খানের স্ট্রাটেজি এবং কেট খানের আমাজনের সাথে দীর্ঘদিনের কাজ করার অভিজ্ঞতা মিলিয়ে আমরা হয়ত কিছুদিনের মধ্যেই দারুণ কিছু পেতে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই ভ্যারিশপের সাথে একত্রে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিশ্বের অনেক নামীদামী ব্র্যান্ড।
ভ্যারিশপের বিশেষত্ব
অ্যামাজন, ই-বের মত বড় বড় ই-কমার্স সাইটে আমরা অনেকেই পছন্দের পন্য খুঁজে পাই না। এসব সাইটে অনেক রিটেইলার নিবন্ধন করে নিজেরা পন্য বিক্রয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন ধরে অনেকেই অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন যে আসল পণ্যটি কিনতে যেয়ে নকল পণ্য কিনে ফেলছেন তারা। এমনটা অভিযোগ নামীদামী বড় বড় ব্র্যান্ডশপগুলোরও। তাদের তৈরি পণ্যের মতোই হুবুহু নকল পণ্য আমাজনে অনেক কম দামে পাওয়া যায়, যার ফলে গ্রাহক যখন বাজে পন্য কিনে ঠকছেন তার সাথে সাথে নিজেদেরও ব্র্যান্ড ভ্যালু কমে আসছে বলে তারা মনে করছেন।
আর ঠিক এখানেই অ্যামাজনের সাথে ভ্যারিশপের পার্থক্য হতে যাচ্ছে। ভ্যারিশপে শুধুমাত্র ব্রান্ডের পণ্যগুলোই থাকছে। এর মাধ্যমে তারা সুনিশ্চিত করবে যাতে করে তাদের সাইটে কোন ধরনের নকল ও সস্তা পন্য না আসতে পারে। ইমরান খান মনে করছেন, গ্রাহকরা যখন সুনিশ্চিত হবেন যে তারা কোন ভুল পন্য অথবা নকল পন্য ক্রয় করে ঠকতে যাচ্ছেন না তখন তারা ভ্যারিশপ বাদ দিয়ে অন্য সাইটগুলোর মাধ্যমে পন্য ক্রয় করা কমিয়ে দিবেন।
এছাড়াও নতুন এই শপটিতে থাকছে ফ্রি শিপিং এর ব্যাবস্থা। অর্থাৎ আপনি যত টাকার পণ্যই কেনেন না কেন, আপনি উপভোগ করতে পারবেন এই ফ্রি শিপিং! এছাড়াও আরো অনেক নতুন ধরনের ফিচার সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছেন ইমরান খান। দেখা যাক, বর্তমান বাজারে অ্যামাজনের একচেটিয়া দখলের দিন কি অবশেষে শেষ হতে চলল?