বিশ্ব

ইউরোপের নামকরণ করা হয়েছে যেভাবে1 min read

জুলাই ১২, ২০২০ 2 min read

author:

ইউরোপের নামকরণ করা হয়েছে যেভাবে1 min read

Reading Time: 2 minutes

ইউরোপ নামকরণের পেছনে, গ্রীক মিথোলোজিতে চমৎকার একটি গল্প রয়েছে। কথিত আছে যে ফিনিশিয়া সাম্রাজ্যের রাজকুমারীর নাম ছিল ইউরোপা—আর তিনি ছিলেন রূপে গুণে রীতিমতো অনন্য। ইউরোপার সেই রূপে শুধু মানুষই মুগ্ধ ছিল না, এমনকি দেবতা সম্রাট জিউস পর্যন্ত তার রূপে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পরে যান। জিউস একটি চমৎকার ষাঁড়ের রূপ নিয়ে রাজকুমারী ইউরোপাকে ক্রিট নামক একটি দ্বীপে নিয়ে যান। সেখানে তিনি রাজকুমারীর কাছে নিজের স্বরূপ উন্মোচন করেন। নিজের প্রেম নিবেদন করার পাশাপাশি জিউস ইউরোপাকে ক্রিট আইল্যান্ডের রাণী বানিয়ে দেন।

সেই ষাঁড়ের পিঠে করে রাণী ইউরোপাকে নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ঘুরতে বের হন দেবতা জিউস। আর তারা ঠিক যতটুকু এলাকা ভ্রমণ করেছিলেন, পুরো জায়গাকে জিউস ইউরোপার নামে নামকরণ করে দেন। আর এভাবেই চলে আসে ইউরোপ নামটি!

হ্যাঁ! বেশ চমৎকার একটি গল্প শোনা হল, আসুন এবার জেনে নেয়া যাক আসলেই ইউরোপ নামকরণটি কিভাবে এসেছে। আদতে ইউরোপ নামের উত্থান মোটেও গ্রীক রূপকথার মত এতটা সহজ ছিল না। তবে তার আগে একটু বলে নেয়া যাক, প্রাচীন গ্রীকরা সমগ্র পৃথিবীকে মোট তিন ভাগে ভাগ করেছিলেনঃ ইউরোপ, এশিয়া এবং লিবিয়া। এরমধ্যে শেষ অংশটি অর্থাৎ লিবিয়া বলতে আফ্রিকার উত্তর অংশটি বোঝানো হয়েছিল।

খৃষ্টপূর্ব দুইশ বছর আগে টলেমি যখন পৃথিবীর একটি মানচিত্রের ধারণা প্রবর্তন করতে চাচ্ছিলেন ঠিক তখনও সেই মানচিত্রে ইউরোপ শব্দটিকে দেখা যায়। এখান থেকে বোঝা যায় যে, ইউরোপ শব্দটি আদতে কোন আধুনিক অথবা উত্তর আধুনিক সময়ের দেয়া নাম নয়। বরং এই শব্দটি আদি কাল থেকেই মানুষের কাছে প্রচলিত ছিল।

এখন আসি এর নামকরণ নিয়ে, ভাষাগত দিক থেকে দেখা যায় ইউরোপ শব্দটি কোন ভাষা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে তা নিয়ে একাধিক মত আছে। প্রাথমিকভাবে প্রাচীন গ্রীক ভাষায় দুটো আলাদা শব্দ দেখা যায়, প্রথমটি “Eurys” যার অর্থ হল “প্রশস্ত” এবং অপর শব্দটি “ops” যার অর্থ চোখ। ধারণা করা হয় ইউরোপের প্রশস্ত তীররেখার যথাযথ বর্ণনা করার জন্য এই শব্দ দুটি প্রাচীন গ্রীক সামুদ্রিকরা প্রায়শই ব্যবহার করতেন।

অন্যান্য ঐতিহাসিকদের মতে, ইউরোপ শব্দটি সেমিটিক আক্কাদিয়ান ভাষায় পাওয়া যায়, যে ভাষাটি প্রাচীন মেসোপটেমিয়াতে ব্যবহৃত হত। আক্কাদিয়ান ভাষায় “erebu” শব্দের অর্থ হল সূর্যাস্ত। এখন মেসোপটেমিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দেখা যায় সেই অঞ্চলের পশ্চিম দিক অর্থাৎ সূর্য অস্তমিত হওয়ার দিকটি ছিল ইউরোপ। ঐতিহাসিকদের এই যুক্তিটি বেশ প্রবল, কেননা এই আক্কাদিয়ান ভাষার আরেকটি শব্দ “Asu” এর দিকে দেখলে দেখা যায়, এই শব্দটির অর্থ হল সূর্যোদয়। মেসোপটেমিয়া থেকে যেই দিক দিয়ে সূর্য উদয় হত সেই জায়গাটিই ছিল “Asia”। আর তাই বহু প্রাচীন ভাষাবিদগণের মতে এশিয়া এবং ইউরোপ উভয় শব্দটিই প্রাচীন আক্কাদিয়ান ভাষা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।

পরিশেষে প্রাচীন গ্রীক ও ইউরোপ নামকরণ নিয়ে আরো একটি বিষয় না বললেই নয়। অনেক ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীন গ্রীসের কৃষি এবং মাটির দেবী ডেমিটার অন্য একটি নাম ছিল ইউরোপা। তবে অনেকে বলে থাকেন যে গ্রীক সভ্যতারও আগে থেকেই সেই অঞ্চলের মানুষেরা ইউরোপা নামে কোন এক নৃ দেবীর পুজো করত।

লেখক- ইকবাল মাহমুদ ইকু 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *