featured বিশ্ব

আসাম সঙ্কট: চাপের মুখে বিব্রত বিজেপি ও আসাম রাজ্য সরকার1 min read

সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯ 2 min read

author:

আসাম সঙ্কট: চাপের মুখে বিব্রত বিজেপি ও আসাম রাজ্য সরকার1 min read

Reading Time: 2 minutes

অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন(আসু) এর আন্দোলনের ফলে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে ভিত্তিবর্ষ ধরে ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তিতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তৈরির কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে নাগরিক পঞ্জি তৈরিতে বিলম্ব হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে আসাম সরকার ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন অব সিটিজেন বা এনআরসি তৈরির কাজ হাতে নেয়।

এনআরসির প্রাথমিক তালিকায় আসামের মোট ৩ কোটি ২৯ লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৮৯ লক্ষ বাসিন্দার নাম উঠেছিল। পরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাদ পরা প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষকে নাগরিকত্বের বৈধ প্রমাণপত্র দেখিয়ে তালিকায় নাম উঠানোর শেষ সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় নতুন করে জায়গা পায় মোট ৩ কোটি ১১ লাখ বাসিন্দা, তালিকা থেকে বাদ পড়ে ১৯ লাখ ৬ হাজার মানুষ।  তবে বাদ পড়া উদ্বিগ্ন জনগণকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেয়াল ও রাজ্য পুলিশ  অভয় দিয়ে জানিয়েছে এনআরসিতে নাম না ওঠার মানেই বিদেশি নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হওয়া নয়।  নাগরিক পঞ্জিতে নাম না ওঠা জনগণরা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বা এফটিতে আবেদনের জন্য ১২০ দিন সময় পাবেন। এমনকি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে অনাগরিক চিহ্নিত হলেও কেউ বিদেশি নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হবেন না। তালিকায় নাম ওঠাতে ব্যর্থ নাগরিকেরা তারপরে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারবেন।  এই পুরো আইনি প্রক্রিয়া শেষ হবার আগে কাউকেই  অনাগরিক বলা হবে না বা ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে না।

অপরদিকে এনআরসি প্রকাশের পর থেকেই চাপের মুখে রয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় লাখ লাখ হিন্দু বাঙ্গালির নাম নেই, কিন্তু লাখ লাখ মুসলমান বাঙ্গালির নাম জায়গা পেয়েছে। বিজেপির নেতাদের বিস্ময় ও ক্ষোভ মূলত একারণেই। বিজেপির নেতারা এখন বলছেন আসামের এই চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা ভুলে ভরা। অথচ তারাই কিনা ভারতের সব রাজ্যে নাগরিক পঞ্জি তৈরির দাবি জানিয়েছিলেন। তাদের মতে হিন্দুস্থানে কোনো হিন্দু কখনো বিদেশি হতে পারে না।

তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আসামের নাগরিক পঞ্জি তৈরি একটি স্বচ্ছ, বিধিসম্মত ও আইনি প্রক্রিয়া। যা কিছুই হয়েছে সবকিছুই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও তদারকিতে। সরকার যা করছে তা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী। সরকারের ইচ্ছায় কিছু হচ্ছে না।”

এনআরসি নিয়ে পশিমবঙ্গের রাজনীতিবিদরাও কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস দুই দিন ব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচীও পালন করেছে। পশিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় এনআরসি বিরোধী সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জি প্রকাশ হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক টুইটে লেখেন, “রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছিল ওরা। এবার তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে এই এনআরসি বিপর্যয়।”

এখন সব আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়েই চলছে এফটিতে আবেদন করার কাজ। আসামের গোয়াল পাড়া জেলার মাটিয়ার চলছে ৩ হাজার মানুষ ধারণযোগ্য বন্দিশালা তৈরির কাজ। এই ধরণের আরও ১০টি ডি-ক্যাম্প খোলার কথা রয়েছে। এই কাজে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি রুপি। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার আসাম সরকারকে মানসম্পন্ন বন্দিশালা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষা সংগঠন কোনো রকম প্রশ্ন না তুলতে পারে।

এইআরসির চূড়ান্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষে ১৯ লাখ মানুষের মধ্যে কতজন অনাগরিক বলে গণ্য হতে পারেন সেই সম্পর্কে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় কোনো সরকারেরই স্পষ্ট ধারণা  নেই। চূড়ান্তভাবে বাদ পড়া জনগণের কোথায় ঠাই হবে, কি পরিণতি হবে এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত কারও কাছেই নেই।

লেখক- হাসান উজ জামান 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *