বিশ্ব

আরব বিশ্বে তেল না থাকলে কী হবে সারা দুনিয়ায় 1 min read

আগস্ট ১৫, ২০১৯ 3 min read

author:

আরব বিশ্বে তেল না থাকলে কী হবে সারা দুনিয়ায় 1 min read

Reading Time: 3 minutes

তেল সম্পদকে আরব বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে ধরা হয় বিশ্বের অধিকাংশ তেলকূপগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এই আরব বিশ্বে এবং বিশ্বের প্রায় ৭৫% তেলের উৎপাদন ওপেকভুক্ত দেশসমূহের দখলে; অথচ এই আরব বিশ্বকেই কি না ভবিষ্যতে তেল সংকটে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক গবেষকেরাযদি এইসব গবেষকদের চিন্তা-ভাবনা ও মন্তব্য সঠিক হয় তবে বিশ্বজুড়ে কি ঘটতে পারে কিংবা বৈশ্বিক পরিস্থিতি কেমন হতে পারে! তাই তুলে ধরার চেষ্টা করবো এই লেখাটির মাধ্যমে

আরব বিশ্ব ভবিষ্যতে জটিল তেল সংকটে পড়তে পারে; এমন ধারণাটি প্রথম নিয়ে আসেন সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোর অনুসন্ধান ও উৎপাদন বিভাগের প্রধান ও তেল বিশেষজ্ঞ সাদাত আল হোসাইনী। তিনি গত ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন তেলকূপ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং প্রায় ২৫০টির মতো তেলকূপের বিভিন্ন পরিসংখ্যানিক তথ্য অনুসন্ধান করে বলেন, যেসব কোম্পানিগুলো বলছে তেলের সংকট হবে না কিংবা যারা বলে বেড়াচ্ছে তেলের উৎপাদন বেড়েই চলছে; তারা আসলে মিথ্যা আশার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেতিনি গবেষণা করে দেখেছেন তেলের উৎপাদন প্রতিবছরই বাড়ছে না, বরং উৎপাদন ও চাহিদা বর্তমানে সমান সমান আছে; কিন্তু অচিরেই এই সমান অবস্থা থাকবে না বরং আগামী ১৫ বছর পরেই চাহিদার তুলনায় উৎপাদন হার কমতে শুরু করবে ফলে আরব বিশ্ব তেল শূন্যতার সম্মুখিন হওয়ার দিকে এগুতে থাকবে

তার এই গবেষণাকে অনেকেই পাত্তা দিতে চাচ্ছে না, কিন্তু তারাও সাদাত আল হোসাইনির মন্তব্য ও রিপোর্টকে একেবারে ফেলে দিতেও পারছেন না, কারণ পরিস্থিতি ও বাস্তবতা অনেকটাই সাদাত আল হোসাইনির রিপোর্টের সত্যতা প্রমাণ করছে

পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত তেল উৎপাদন হয়েছে তার প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ সংরক্ষিত আছে সৌদি আরামকো প্রতিষ্ঠানটিতে; যার পরিমাণ প্রায় ২৬০ বিলিয়ন ব্যারেল কেউ কেউ আবার জোর দিয়েই বলার চেষ্টা করেছেন, এতো পরিমান রিজার্ভ তেল থাকা সত্বেও বিশ্বকে তেল শূন্য পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে এমনটা অকল্পনীয় তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন রিজার্ভের পরিমাণ যদি অর্ধেক খালি হয়ে যায় তবে তেলকূপ থেকে তেল উত্তোলন কঠিন হয়ে যাবে; অপরদিকে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিনই তেলের চাহিদা ক্রমাগ বেড়েই চলছে, যদিও উৎপাদন বেড়েছে আগের তুলনায় বহুগুণ; যেখানে ১৯০০ সালে উৎপাদিত তেলের পরিমাণ ছিল প্রতিদিন মিলিয়ন ব্যারেলের কিছু বেশি সেখানে এখন ৮৫ মিলিয়ন ব্যারেলের বেশি তেল উৎপাদিত হচ্ছে। 

তেল নিয়ে আশাবাদী ও নিরাশাবাদী কেউ আসলে তেলের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তিসংগত যুক্তি ও প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারছেন না কারণ মাটির নিচে কি পরিমাণ তেল আছে তা আসলে কারো পক্ষে সঠিকভাবে আন্দাজ করা সম্ভব নয় যদিও বর্তমানে কম্পিউটারাইজড ইমেজিং সিস্টেম আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মাধ্যমে ভূকম্পন পরিমাপ করে মাটির নিচে থেকে তেলের ছবি পর্যন্ত দেখা সম্ভবঅথচ তেলকূপের সংখ্যা ও তেলের পরিমাণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না তেল বিশেষজ্ঞরা

তেলের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম বেড়ে চলছে কিন্তু নতুন তেলখনি আবিষ্কার হচ্ছে না বললেই চলে ব্রাজিলের উপকূলবর্তী স্থানে আবিষ্কৃত টুপি তেলকূপটিকে গত দশকের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, অথচ এই কূপটিতে যে পরিমাণ তেল আছে তা সৌদি আরবের বিখ্যাত গাওয়ার কূপের মাত্র ১৫ ভাগের এক ভাগ যদিও প্রচুর ছোট ছোট তেলের খনি পাওয়া যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এই সব ছোট ছোট তেলকূপ থেকে বড় বড় তেলখনির ন্যায় তেল উত্তোলন করা সম্ভব হয় না, অথচ ছোট কূপ খননেও ঠিকই প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় করতে হয় এই কারণে তেল কোম্পানিগুলো ছোট ছোট তেলকূপ আবিষ্কারের দিকে নজর দিতে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে না

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বর্তমানে বিশ্বের তেলকূপ থেকে তেলের উৎপাদন প্রতি বছরে শতাংশ হারে কমছে এবং প্রতি বছরে ১.৫ শতাংশ হারে তেলের চাহিদা বাড়ছে ফলে চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তেল কোম্পানিগুলোকে প্রতিদিনই বেশ কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন অবশ্যই বাড়াতে হবে অথচ তেলের উৎপাদন সেই অর্থে বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না; ফলে যারা বলছেন পৃথিবী তেল শূন্যতার দিকে এগিয়ে চলছে তাদের মন্তব্য যে সঠিক হতে চলছে, তা অনেকটাই নির্দ্বিধায় বলা যায়। 

যদি বিশ্ব তেল শূন্যতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে তাহলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তেলসমৃদ্ধ অঞ্চলের প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা কারণ ইতিপূর্বে বিশ্ব দেখেছে উনবিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যখন তেল অবরোধ শুরু করেছিল তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব সামরিক অভিযান চালিয়ে আরব বিশ্বের তেলকূপ দখলের পরিকল্পনা পর্যন্ত করেছিল বিশ্বব্যাপী তেল সমস্যা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আমাদের এখনই বাস্তবসম্মত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে, অন্যথায় আগামীর মানুষ দেখবে বিপর্যস্ত এক পৃথিবীকে

লেখক- আমিনুল ইসলাম 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *