কী আছে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের গাড়িতে?1 min read
Reading Time: 4 minutesবিশ্বের প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীদের বহনকারী যানবাহনগুলো একটু বিশেষ হয়ে থাকে। তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বহনকারী “ক্যাডিলাক–১” গাড়িটি নিয়ে মানুষের আগ্রহ যেনো একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। আর এই অতিরিক্ত আগ্রহের পেছনে অবশ্য বেশ কিছু কারণ লুকিয়ে আছে। মিলিয়ন ডলার মূল্যের এই গাড়িটিকে সাক্ষাত দুর্গপ্রাচীর বললেও কম হয়ে যায়।
প্রতি ১০ বছরে একবার করে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের গাড়ির মডেল পরিবর্তন করা হয়।পরিবর্তনের ধারায় সর্বশেষ সংস্করণ হিসেবে ২০০৯ সালে ক্যাডিলাক সার্ভিসে আসে। গাড়িটি সাধারন মানুষের কাছে ক্যাডিলাক নামে পরিচিত হলেও ইউএসএ সিক্রেট সার্ভিসে এটি দ্যা বিস্ট নামে পরিচিত। সিক্রেট সার্ভিসের ডিজাইন করা উক্ত গাড়িটির মুল্য প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ক্যাডিলাক গাড়িটিতে ব্যাবহার করা হয়েছে ৮ ইঞ্চি পুরু যুদ্ধ ট্যাংকের বডি। hardwarezone.com এ প্রকাশিত একটি ব্লগ থেকে জানা যায় “দ্যা বিস্ট” এর জানালা ৫ ইঞ্চি বুলেটপ্রুফ কাচের ৫ টি লেয়ার দ্বারা আবৃত। গাড়িটির একেকটি দরজা বোয়িং ৭৫৭ এয়ারক্রাফটের দরজার ওজনের সমান। গাড়িটিতে শুধুমাত্র একটি জানালা রয়েছে যা ড্রাইভার সিটের পাশে।এটি শুধুমাত্র অর্ধেক খোলা যায়।
“দ্যা বিস্ট” এ রয়েছে নাইট ভিশন ক্যামেরা যা দিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারেও গাড়িটি নিরাপদে চালিয়ে নেওয়াটা খুব সহজ হয়ে যায়। “ক্যাডিলাক –১” এ ব্যবহার করা টায়ারটি লিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে দুর্ঘটনাবশত লিক হয়ে গেলেও গাড়িটি অনায়েসে রিমের উপর ভর করে চলতে পারে। নির্দিষ্ট কোড ব্যাবহার করে গাড়িটির দরজা খোলা যায়। এই কোড শুধুমাত্র সিক্রেট সার্ভিসের নির্দিষ্ট কিছু সদস্যরাই জানেন। “ক্যাডিলাক –১” এর ফুয়েল ট্যাংক মিলিটারি গ্রেড আর্মড দ্বারা পরিবেষ্টিত যা এটিকে যেকোনো ধরনের বিস্ফোরন থেকে রক্ষা করতে প্রস্তত। এছাড়া গাড়িটির দরজা এমন ভাবে সিল করা যাতে কোনো রাসায়নিক বিষাক্ত গ্যাস গাড়ির মধ্যে ঢুকতে না পারে। পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির নিজস্ব গ্যাস ফিল্টারিং এর মাধ্যমে গাড়িতে সবসময় পরিষ্কার বাতাস প্রবাহিত হয়।
শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা নয়, শত্রুকে প্রতিহত করার ক্ষমতাও রয়েছে “ক্যাডিলাক –১” এর। leftlanenews.com এর একজন স্টাফ রিপোর্টার বলেছেন,গাড়িটিতে সব ধরনের ফায়ার ফাইটিং যন্ত্র ছাড়াও গ্রেনেড লঞ্চার ,শর্টগান, টিয়ার গ্যাস ক্যানিস্টার সহ বেশ কিছু হেভী ও লাইট আর্মস রয়েছে।
এছাড়াও এটিকে একটি চলন্ত হাসপাতাল বললে ভুল হবেনা। এতে প্রেসিডেন্টের ব্লাড গুপের সাথে ম্যাচ করা ৪ ব্যাগ ব্লাড, ছোট ইসিজি মেশিন এবং অক্সিজেন ট্যাংক ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু এইড কিট (Aid Kit)।
ক্যাডিলাক ১ মডেলের মোট ১২ টি গাড়ি রয়েছে। গাড়িগুলো সিক্রেট সার্ভিসের হেডকোয়াটারের গ্যারেজে থাকে। প্রতিবার প্রেসিডেন্ট যখন রাস্তায় বের হয়,তখন শত্রুকে ফাকি দেয়ার জন্য তার বহরে হুবহু একই রকম দুইটি ক্যাডিলাক থাকে।
“ক্যাডিলাক –১” সর্বোচ্চ ৭ জন প্যাসেঞ্জার ধারন করতে পারে। তবে সাধারনত প্রেসিডেন্ট শো ডাউনে গাড়িটিতে তিনজন মানুষ থাকে। সামনে ড্রাইভার, মাঝের সিটটিতে প্রেসিডেন্ট নিজে এবং একজন সিক্রেট সার্ভিসের লোক। গাড়িটিতে প্রেসিডেন্টের গেস্টের জন্য রয়েছে আলাদা ডেস্ক।
“দ্যা বিস্ট” এ ভ্রমনের সময় প্রেসিডেন্ট যাতে দুনিয়ার সাথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ বজায় রাখতে পারে সেজন্য গাড়িটিতে রয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত ওয়াইফাই কানেকশন এবং একটি ল্যাপটপ। এছাড়াও আছে একটি স্যাটেলাইট ফোন যা সরাসরি ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পেন্টাগনের সাথে সংযুক্ত। আর এই যোগাযোগগুলোতে সম্পূর্ন নিরাপত্তা প্রদান করে হোয়াইট হাউজ কমিউনিকেশন এজেন্সী।
“দ্যা বিস্ট” এর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ক্ষমতা হচ্ছে এতে বসে প্রেসিডেন্ট নিজেই পুরো আমেরিকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন। Ranker.com এর মতে “ক্যাডিলাক–১” এ রয়েছে Limousine Control Package সুবিধা যার মাধ্যমে গাড়িতে বসে প্রেসিডেন্ট প্রতিরক্ষা বিভাগের স্যাটেলাইটে মেসেজ পাঠানো ছাড়াও যেকোনো কমান্ড দিতে পারবে। ইমারজেন্সি কোনো প্রয়োজনে সে গাড়িতেই বসেই ডিফেন্স সেন্টারে থাকা পারমানবিক অস্ত্র ও নিক্ষেপ করতে পারবে।
বারাক ওবামার ভারত ভ্রমনের সময় দ্যা বিস্ট কে সাথে করে নিয়ে আসায় অনেকে অবাক হয়েছেন। আবার এটা নিয়ে অনেকে হেসেছেনও। তবে হাস্যকর হলেও সত্যি যে ‘ক্যাডিলাক–১’ মডেলের এই গাড়িটিকে বহনের জন্য রয়েছে একটি C-17 Globemaster III মডেলের একটি বিশেষ এয়ারক্রাফট। অর্থাৎ যদি প্রেসিডেন্ট চায়,তাহলে সে সহজেই দেশ থেকে দেশান্তরে নিয়ে যেতে পারে তার প্রিয় গাড়িটিকে।
গাড়িটি নিয়ে হয়তো আপনাদের মনে একটি সুপিরিয়র বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এইবার আপনাদের একটি দুঃসংবাদ দিতে যাচ্ছি। “দ্যা বিস্ট” ও দুর্ঘটনা মুক্ত নয়। ২০০৯ লন্ডন ভ্রমনের সময় পার্কিং এর সময় বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয় “দ্যা বিস্ট” । এরপর ২০১১ সালে আয়ারল্যান্ডে একটি র্যাম্পের সাথে আটকে যায় গাড়িটি এবং ২০১৩ সাথে ইসরায়েল ভ্রমনে গাড়িটি আশ্চর্যজনক ভাবে ফেটে যায়।
স্বভাবতই এতো প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা উপকরন বহন করা গাড়িটির মাইলেজ খুব বেশি হওয়ার কথা না। ‘দ্যা বিস্ট” এর গতিবেগ সর্বোচ্চ ৯৭কিমি/ঘন্টা। প্রতি গ্যালন ফুয়েলে এটি ৩ মাইল থেকে সর্বোচ ৮ মাইল যেতে পারে।
আশা করি দ্যা বিস্ট সমন্ধে আপনাদের চমকপ্রদ সকল তথ্যই দিতে পেরেছি। আর্টিকেলটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করার পর আপনারা অনেকেই হয়তো মনে মনে ভাবছেন, “আহা! এরকম একটি গাড়ি আমার হতো!”। আপনাদের সে আশায় গুড়ে বালি। কারণ আপনি যতই ক্ষমতাধর অথবা যতই ধনী হোন না কেনো, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ছাড়া এ গাড়ির টিকিটাও কেউ ধরতে পারেনা।