আমেরিকায় মসজিদ নির্মাণের পেছনের কঠিন প্রক্রিয়া1 min read
Reading Time: 2 minutesইলিনয়- এর শিকাগো, মিশিগানের ডেট্রোয়েট আর ইন্ডিয়ানা রাজ্যের ইন্ডিয়ানাপোলিস-এই তিন শহর মানচিত্রে ত্রিভুজ আকৃতির সীমারেখায় অবস্থিত। শিকাগো আর ডেট্রোয়েটের মধ্যভাগের শহর ইন্ডিয়ানাপোলিস এর কারমেল -এ বসবাস করেন বেশ কয়েক হাজার মুসলিম অভিবাসী। এদের মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যা হবে কয়েক শত। বাংলাদেশী এবং অন্যান্য দেশের মুসলিমরা মিলে এই শহরে প্রথমবারের মত একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমতি পেয়েছেন শহরের ল্যান্ড এন্ড জোনিং কমিটির শুনানীতে। সবকিছু ঠিকা ঠাক থাকলে অচিরেই শুরু হবে মসজিদ নির্মানের কাজ। তবে এই মসজিদ নির্মানের জন্য অনুমোদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত লড়াইটা মনে রাখার মত।
কারমেল শহরে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত এক গণশুনানিতে মসজিদ নির্মাণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। মুসলিম কমিউনিটি দীর্ঘদিন যাবৎ একটি ভাড়া করার স্থানে মসজিদ পরিচালনা করে আসছিল। আল সালাম ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই কার্যক্রম চলছে। এই শহরে একটি স্থায়ী মসজিদ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা ছিল দীর্ঘদিনের। ইতোপূর্বে কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি নানামুখী জটিলতা এবং বিভিন্ন মহলের বাধার কারণে।
কমিউনিটির মুসলিম নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন সিটি মেয়র, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সিভিল সোসাইটির সঙ্গে মতবিনিময় এবং আলোচনার পর একটি সম্ভাব্য স্থান নির্বাচন করে স্কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় কিছু বাসিন্দা । তারা নির্ধারিত স্থানে কোনোভাবেই মসজিদ নির্মাণ করতে দিতে রাজি নয় । এমনকি মসজিদ নির্মাণ বিরোধী স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যাক্তিগত ভাবে, সামাজিক প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারণা চালায় এবং বাসিন্দাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত হয়। মসজিদ নির্মাণ বিরোধী জনমত তৈরি করে এক পর্যায়ে শহর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন তারা।
রীতি অনুযায়ী মসজিদ বা প্রতিষ্ঠান নির্মান করার জন্য নগর কর্তৃপক্ষ একটি গনশুনানীর ডাক দেয় ২৬ ফেব্রুয়ারি।
শহরের জোনিং বোর্ডের ডাকা এই শুনানীতে মসজিদ নির্মানের পক্ষে নিজেদের অবস্থান ঘোষনার জন্য, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই প্রায় এক হাজারেরও অধিক স্থানীয় বাসিন্দা উপস্থিত হন। আর শুনানিতে অংশ নিতে দুই শতাধিক লোক নাম তালিকাভুক্ত করে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য । দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা শুনানিতে তথ্য এবং বিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন চলে । বিরোধিতাকারীদের মধ্যে ভারতীয় এবং চায়নিজ অভিবাসীর সংখ্যা রীতিমত অবাক করার মতো মনে হয়েছে অনেকের কাছে । তারা লিখিতভাবে এবং তথ্য প্রমাণাদি নিয়ে ঐ শুনানীতে হাজির হন, মসজিদ নির্মান বন্ধ করার জন্য।
তবে, সর্বশেষ শুনানীতে জয় হয় মসজিদ নির্মানকারীদেরই। উপস্থিত মুসলিমরা নিজেদের ধর্মীয় আগেব এবং সম্প্রদায়গত সম্প্রতি বজায় রাখার জন্য আবেগি বক্তব্য দেন অনেকেই। পরে, পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বোর্ডের ৩ জন সদস্য মসজিদ নির্মাণের আবেদন অনুমোদন করে, বিপক্ষে ভোট দেন ২ সদস্য।
এই মসজিদ প্রতিষ্ঠার পেছনে, কমিউনিটির বাংলাদেশী অভিবাসীরা কঠোর পরিশ্রম করছেন সকলকে একত্রিত করতে এবং কর্তৃপক্ষের নিকট নিজেদের সমর্থন বার্তা পাঠাতে। শহরের বিশিষ্ট বাংলাদেশি অভিবাসী বল স্টেট ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রফেসর ড. মাসুম আলী এক ক্ষুদে বার্তায় জানিয়েছেন, ইন্ডিয়ানার মুসলিমদের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক বিজয়। আমাদের এ বিজয় থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি বিজয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান। আল সালাম ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন শহর কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষ হলেই তারা এই মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মান শুরু করতে পারবেন এখন।