অভিবাসন সংকট ও সম্ভাবনার বছর ২০১৮1 min read
Reading Time: 3 minutesনিসন্দেহে যে বছরটি আমরা পার করলাম সেটি বিশ্ববাস্তবতায় একটি কঠিন বছর। ২০১৬ সালের এই সময়টিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উথ্বানের নানা শঙ্কা আর সম্ভাবনার জল্পনা কল্পনা দিয়ে শুরু হয়েছিল নতুন বছর ২০১৭। এই এক বছরে অনেক কিছুই ওলট পালট করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বয়ং। আগামি বছরেও তার রেশ থাকবে, সাথে আরো অনেক কিছুই যোগ হতে পারে।যেমন, অভিবাসনের সংষ্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের সংকট আরো ঘনিভুত হতে পারে। তবে নতুন সম্ভাবনাও তৈরী হতে পারে। সংকটটিকে আলোচনায় নিয়ে, সম্ভাবনার কথা বলছি পরে।
অভিবাসনের সংকটের কথা শুরু হয়েছে বাংলাদেশী এক কুলঙ্গারের অপকর্মের মাধ্যমে। আকায়েদ উল্লাহ যেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে মোক্ষম অস্ত্রটিই তুলে দিয়েছেন। ম্যানহাটানের পাতালপথে একটি স্ব-প্রযুক্তিতে তৈরী বোমা বিষ্ফোড়ন ঘটিয়ে কিছু মানুষকে আহত করেছেন, শারিরীকভাবে।তবে তার পরিকল্পনা ছিল আরো বড় ভাবে আমেরিকার গায়ে আঘাত দেয়া। সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর, তাকে নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সে মনে মনে আমেরিকার ধ্বংশই চেয়েছে। যেটি তার পাসপোর্টে লেখা আছে। তো, যেসব মানুষ আমেরিকার ধ্বংশ চায় তাদেরকে আমেরিকা কেন আপন করে নেবে? সেটাকেই বড় যুক্তি হিসেবে দাড় করিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পারিবারিক বা চেইন অভিবাসন বন্ধ করার ঘোষনা দিয়েছেন। এর আগে অনেক ঘোষনাই বড় বাধার মুখে পড়লেও শেষ পর্যন্ত কিছুটা তিনি বাস্তবায়ন করেই ছেড়েছেন।
যেমন, ইমিগ্রেশন পুলিশ দপ্তর-আইসকে তিনি যথেষ্ট বেগবান করেছেন।এক বছরে সোয় দুই লক্ষ মানুষকে তিনি দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের ১১ টি পরিবার প্রাথমিক ভাবে, পরে আরো ২৭ জন মানুষ দেশে ফিরেছে সেই প্রক্রিয়ায়। এক, রিয়াজ তালুকদারের ফেরত নির্দেশনা সাময়িকভাবে হয়তো আটকে দেয়া গেছে, কিন্তু এমন দেশে ফেরার প্রক্রিয়ায় আছে আরো হাজারো মানুষ। অনেকেই হয়তো আইনী ম্যারপ্যাচে পড়ার আগে নিজে নিজেই চলে গেছেন। এর পর আসতে পারে, ট্রাভেল ব্যান ইস্যু। তিনি সেটি ৩ বার আ্ইনী বাধার মুখে পড়েও বাস্তবায়ন করেছেন।ট্যাক্স কাট, ডেফার্ড এ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড এ্যারাইভাল-প্রকল্পের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেয়ার আদেশ দিয়ে রেখেছেন। এর কতগুলোর বিরোধিতা করবে ডেমোক্রাট দল? সেটাই আসলে, দর কষাকষির অস্ত্র হিসেবে হাতে রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কি সেই দরকষাকষি? ডাকা প্রকল্পে যে প্রায় ৮ লক্ষ শিক্ষার্থীকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলে রেখেছেন, সেখানে বেশ কিছুটা নমনীয় হয়তো তিনি হবেন। তবে, তার বিনিময়ে ডেমোক্রাট দল থেকে তিনি সমর্থন আদায় করতে চাইবেন, পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করার জন্য। আর সেটা নিয়ে কিছুটা মতৈক্য তৈরী হয়ে আছে বলেই ক দিন আগে ফক্স নিউজের একটি আলোচনায় দেখছিলাম। সেটা যদি হয়, কিছু পরিবার যারা ডাকা প্রকল্পের সুবিধাভোগী তাদের অধিকার রক্ষার সুযোগ হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু পারিবারিক অভিবাসন বন্ধের বলি যারা হবেন, সেই সংখ্যা হবে লক্ষ লক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে সাড়ে পাচ লক্ষ করে গ্রিনকার্ড প্রদান করে, যার মধ্যে পারিবারিক অভিবাসন খাতে যায় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ। ৫ ভাগ ডিভি লটারীতে, আর দক্ষ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে যাচ্ছে মাত্র ২ ভাগ। এই ৬৫ ভাগ আভিবাসন যদি বন্ধ হয়ে যায় বা সীমিত হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বলিতে পড়বেন, বেশ কয়েক লক্ষ বাংলাদেশী যারা ডিভি লটারী সহ অণ্যন্য উপায়ে এই দেশে এসেছিলেন, এবং স্বপ্ন দেখছিলেন, একদিন তাদের আত্বীয় স্বজনেরা আসবেন, সুখি পরিবারের রেশ পাবেন, তাদের জীবন যাবন উন্নত হবে। এমন হাজার হাজার মানুষ যাদের আগমন বন্ধ হয়ে যাবে হয়তো। তবে এর বাইরে সম্ভাবনা তৈরী হতে পারে, এতদিন যারা সাইডলাইনে বসে ছিলেন তাদের জন্য। ঐযে ২ শতাংশ বেড়ে ২০ শতাংশ হতে পারে।
২ শতাংশ অর্থাৎ যারা আইটি অথবা অন্য খাতে দক্ষ হিসেবে আছেন, কিন্তু আমেরিকায় পাড়ি দিতে গিয়ে নানা রকম জটিলতা আর ভোগান্তি ছিল তাদের ক্ষেত্রে সুদিন আ্সতে পারে। কেননা, ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই ঘোষনা দিয়েছেন, যে অভিজ্ঞ এবং দক্ষদের নেয়ার ক্ষেত্রে পয়েন্ট সিন্টেম চালু করবেন তিনি কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মত। তবে, কানাডা আর অস্ট্রেলিয়ার থেকে বহুগুনে বেশি মানুষ এখানে ঐ প্রকল্পে আসতে পারবেন, কেননা, এ্ই দেশটি অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য অভিবাসন লাগবেই। নতুন মানুষ লাগবেই এদেশে। সেটাই বড় বাস্তবাতা। সুতরাং চাই্লেই অভিবাসন বন্ধ হয়ে যাবে না, তবে আকায়েদ আর সাইফুল্লাহ সাইপভ যিনি ডিভি লটারীতে এসেছিলেন-এই দুজনের কারনে ডিভি লটারী আর পারিবারিক অভিবাসন দুটিতেই ছেদ বসাতে চান ট্রাম্প। তাতে যেই সংকট তৈরী হবে সেটা হয়তো পুষিয়ে নিতে পারবেন না যারা তাদের স্বজনদেকে আনার জন্য আবেদন করে রেখেছেন। তবে দুয়ার খুলতে পারে অন্যদিকে, সেটাই হোক সম্ভাবনা।সেটার প্রস্তুতি নিতে সকল বাংলাদেশীদেরকে।