‘যদি না পারি, সাধারণ জনগণকে সব জানিয়ে চলে যাব’1 min read
Reading Time: 3 minutesআগামী ১৫ আগস্ট শেষ হবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ। এই কমিশনের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ। ‘রাষ্ট্র সংস্কারের এসব ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দলকে একই প্ল্যাটফর্মে আনতে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করব। যদি না পারি, দায়িত্ব থেকে চলে যাওয়ার আগে জনগণকে সব জানিয়ে যাব।’
বুধবার (২১ মে) জাতীয় সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে খবরের কাগজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনী।
বাংলা ইনফোটিউব পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি হুবহু প্রকাশ করা হলো।
খবরের কাগজ: দায়িত্ব নেওয়ার পর কাজের যে পরিকল্পনা করেছিলেন তার কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন?
আলী রীয়াজ: সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র-কাঠামোয় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করছি। নির্বাচন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই ছয় কমিশনের সুপারিশ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। কয়েক শ প্রস্তাব পেয়েছি। এসব প্রস্তাব থেকে বাস্তবায়নযোগ্য ১৬৬ প্রস্তাব বাছাই করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনা চলবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজের অগ্রগতিতে আমি সন্তুষ্ট।
খবরের কাগজ: ১৬৬ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কী?
আলী রীয়াজ: সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা আগ্রহ নিয়ে সংস্কার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তারা নিজেদের মতামত দিয়েছেন, দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। তবে সবাই সব সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। আবার অনেক বিষয়ে একমত হয়েছেন।
খবরের কাগজ: বেশির ভাগ প্রস্তাবে কি একমত হয়েছেন?
আলী রীয়াজ: ১৬৬ সংস্কার প্রস্তাব দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১০০টির মতো আশু করণীয় এবং বাকিগুলো দীর্ঘ মেয়াদে করণীয়। সংস্কারের অধিকাংশ প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। তবে কিছু বড় ইস্যুতে ভিন্নমতও রয়েছে। এখনো যেসব ইস্যুতে ভিন্নমত রয়েছে, তা নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু করা হবে।
খবরের কাগজ: অনেকে বলেছেন সংস্কার বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে। তাদের মতে সময় লাগবে। অনেকে আবার এও বলছেন যে সংস্কার আদৌ সম্ভব হবে না…
আলী রীয়াজ: আমরা আশু করণীয় সংস্কারগুলো চিহ্নিত করে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি; যা এরই মধ্যে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
খবরের কাগজ: বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে সংস্কারের প্রশ্নে বিএনপির মতামতকে কি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন?
আলী রীয়াজ: আমাদের কাছে সব রাজনৈতিক দল সমান ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিএনপির মতামতকে অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
খবরের কাগজ: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন করা হয়। সংস্কার প্রশ্নে দলটির অবস্থান কী?
আলী রীয়াজ: আমার কাছে এনসিপি একক একটি দল। আর দশটি দলের মতো। তবে এটা তো অস্বীকার করা যাবে না যে দলটি তরুণ প্রজন্মের চাওয়াকে সামনে রেখে রাজনৈতিক আদর্শ ধারণ করছে।
খবরের কাগজ: সংবিধান সংশোধন, নাকি নতুন সংবিধান- ঐকমত্য কমিশন কী ভাবছে?
আলী রীয়াজ: সংবিধান নিয়ে এখনো তেমন কিছু কমিশন ভাবেনি। এটা একটা বড় কাজ। সংবিধানে সব বয়সী মানুষের চিন্তাচেতনাকে ধারণ করতে হবে।
খবরের কাগজ: কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি?
আলী রীয়াজ: রাষ্ট্র পরিচালনা কাঠামো কী হবে; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পদে একজন ব্যক্তি কতবার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন; সংসদ কি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হবে, সংসদে নারীরা কি সরাসরি নির্বাচনে যাবেন; যদি নির্বাচন হয়, তবে কী পদ্ধতিতে হবে- এসব ইস্যুতে এখনো ঐকমত্য হয়নি।
খবরের কাগজ: যদি এমন হয় যে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং তরুণ প্রজন্মের দল এনসিপি অনেক সংস্কার বিষয়ে একমত হতে পারছে না; সে ক্ষেত্রে কী করবেন?
আলী রীয়াজ: দায়িত্বে থাকার শেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টা করব সবার সম্মতিতে জুলাই সনদ প্রণয়ন করতে। যদি না পারি, তবে সাধারণ জনগণকে সব জানিয়ে দায়িত্ব থেকে চলে যাব।
খবরের কাগজ: জুলাই সনদ নিয়ে কিছু বলুন।
আলী রীয়াজ: জুলাই সনদে থাকবে বড় ধরনের পরিবর্তনগুলো। কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা হবে, কীভাবে নির্বাচন হবে, কোন পদ্ধতির সরকার থাকবে, বারবার একই ব্যক্তি কি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হবেন- এ সবকিছুই থাকবে জুলাই সনদে। এটা সংবিধানের বাইরের বিষয়। এসব নিয়েই জুলাই সনদ হবে। সব দলের সম্মতি থাকতে হবে এখানে।
খবরের কাগজ: আপনি তো দেশে-বিদেশে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। পাশাপাশি নতুন দায়িত্ব কেমন লাগছে? আপনি তো ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন।
আলী রীয়াজ: নতুন দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর হিসেবে দীর্ঘদিন রাষ্ট্র ও সরকার নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি করছি। আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের (এআইবিএস) সভাপতি ও আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র অনাবাসিক ফেলো হিসেবে আছি। এখন দেশের জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগবে।
খবরের কাগজ: আপনার কাছে রাষ্ট্র সংস্কার কতটা জরুরি বলে মনে হয়?
আলী রীয়াজ: আমি জরুরি মনে করি। এটা তো সাধারণ মানুষের দাবি। নতুন সরকার হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাষ্ট্র-কাঠামোয় ব্যাপক সংস্কারের দাবি জানান। এরই ধারাবাহিকতায় গঠন করা হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। এসব কমিশন থেকে পাওয়া সুপারিশ যাচাই-বাছাই করে আলোচনার জন্য গঠন করা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।