বিশ্ব

ভয়াবহ কোনো সংক্রামক ভাইরাস সম্পর্কে বারবার সতর্ক করেছিলেন বিল গেটস1 min read

মার্চ ২৪, ২০২০ 3 min read

author:

ভয়াবহ কোনো সংক্রামক ভাইরাস সম্পর্কে বারবার সতর্ক করেছিলেন বিল গেটস1 min read

Reading Time: 3 minutes

করোনাভাইরাস! এই মুহূর্তে পুরো পৃথিবীকে চমকে দেয়া একটি শব্দ! আমরা এতটাই চমকে গিয়েছি যে সামান্যতম প্রস্তুতি নেয়ার সময়ও পাইনি। তবে করোনা কি এতটাই আকস্মিক ভাবে এসেছে? আমাদের অনেকের কাছে এটি আকস্মিক হলেও কয়েকজন মানুষ বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে এমন একটি ভয়াবহ সংক্রামক ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করে যাচ্ছিলেন।

তাদের বক্তব্য ছিল ঠিক আমাদের বর্তমান অবস্থার অনুরূপ, তাদের মতে নতুন কোন ভয়াবহ মহামারী সামলানোর কোন প্রস্তুতিই আমাদের মধ্যে নেই। অন্যান্য মহামারী বিশারদ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি বিলগেটসও দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছিলেন, যে কোন মহামারী সামলানোর জন্য আমরা কতটা দীনতায় ভুগছি। আসুন এক নজরে দেখে নেই এতদিন ধরে আমাদের উপলব্ধি করতে না পারা সেই কথাগুলো অর্থাৎ মহামারী নিয়ে ঠিক কিই বা বলে যাচ্ছিলেন বিল গেটস।

২০১০ সাল 

২০০৯ সালে H1N1 নামক এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যাওয়ার পর ২০১০ সালেরর দিকে বিল গেটস তার একটি ব্লগে লিখেছিলেন,

  “H1N1 নামক এই ভাইরাসটি কতটা বাজে ধরনের ভাইরাস সেটা মূলত গুরুত্বপূর্ণ নয়, কেননা এই ভাইরাসটি হয়ত আরো বেশি ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারতো। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো যদি কোন ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করে তবে সেটি সামাল দিতে আমাদের মোটেও কোন প্রস্তুতি নেই।”

এছাড়া তিনি ২০০৯ সালের এই প্রাদুর্ভাবকে আদতে আমাদের জন্য হুশিয়ারি হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। তিনি তখনই বলেছিলেন আমাদের উচিৎ পৃথিবীকে আরো ভয়ানক কোন মহামারী আক্রমণ করলে সেটা থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিস্তর গবেষণা শুরু করা। কেননা পরবর্তীতে আমাদের ভাগ্য ২০০৯ সালের মত এতটা ভালো নাও হতে পারে।

আরও পড়ুন- চীন থেকে কেন নতুন সব ভাইরাস ছড়ায়

২০১৫ সাল 

আমেরিকান একটি মিডিয়া সংস্থা টিইডি (TED) কনফারেন্সের বার্ষিকীতে বিল গেটস একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন, আর সেই বক্তব্যের শিরোনাম ছিল “পরবর্তী ভাইরাস সংক্রমণের জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত নই”। বিল গেটস এই বক্তব্যটি যখন দেন, তখন পুরো বিশ্ব সবেমাত্র ইবোলা ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছিল। আর ইতোমধ্যেই বিলগেটস পরবর্তী সংক্রমণ নিয়েও আশংকা শুরু করেছিলেন। তিনি সেই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন,

“আগামী কয়েক দশকে কোনো কারণে যদি লাখ লাখ মানুষ মারা যায়, তাহলে কারণটি মোটেও যুদ্ধ হবে না,   বরং ভীষণ সংক্রামক কোনো ভাইরাসের কারণেই এমনটা হতে পারে!”

তিনি আরো বলেন, আমরা এখন মোটেও প্রস্তুত নই। পরবর্তী সংক্রমণ ইবোলা থেকেও আরো বেশি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ভবিষ্যতে আমরা হয়ত এমন কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হব যে আমাদের একটুও শরীর খারাপ লাগবে না আর আমরা নিজেদের অজান্তেই হাট-বাজারে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে বেড়াবো।

কি পাঠক বিল গেটসের এই বক্তব্য কি আমাদের বর্তমান অবস্থার সাথে কিছু হলেও মিলে যাচ্ছে? ঠিক এই কারণেই কিন্তু করোনাভাইরাস এতটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। করোনাভাইরাস কোন লক্ষণ প্রকাশ না করেই মানবদেশে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তি কমপক্ষে চৌদ্দ দিন অতিক্রম হওয়ার আগে বুঝতেই পারবেন না যে তিনি ভাইরাসে আক্রান্ত আর নিজের অজান্তেই তিনি ভাইরাসকে আরো ছড়িয়ে দিতে পারেন।

আরও পড়ুন- চীন যেভাবে করোনাভাইরাস জয়ের পথে

আরও পড়ুন- স্প্যানিশ ফ্লুঃ পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল যে ভাইরাসে

২০১৬ সাল 

বিবিসিতে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেছিলেন,

“আমি চাইনা বড় ধরনের কোন ফ্লু মহামারী আকারে আগামী দশ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে আসুক। কেননা ইবোলা আর জিকরা এর দুটো ফ্লু ভাইরাস আমাদের দেখিয়ে গিয়েছে যে আমরা এই ধরনের ভাইরাস থেকে কতটা সুরক্ষার অভাবে ভুগছি। আর তাই যে কোন একটি মহামারী সামাল দেয়ার জন্য আমাদের বর্তমান পৃথিবী মোটেও প্রস্তুত নয়!”

২০১৭ সাল 

বৈশ্বিক প্রতিরক্ষার নীতি নির্ধারণ মূলক একটি বার্ষিক কনফারেন্সে (মিউনিক সিকিউরিটি কনফারেন্স) বিল গেটস তার বক্তব্য শুরু করেছিলেন স্বাস্থ্য আর প্রতিরক্ষার মধ্যে যোগাসাযোগ নিয়ে। তিনি বলেন, এই দুটি বিষয় ঠিক কতটা একে অন্যের সাথে অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে সেটা আমরা কেউই ঠিক বুঝতে পারছি না। সেখানে তিনি বিভিন্ন মহামারী বিশেষজ্ঞদের উদাহরণ টেনে বলেছিলেন, এই বিশেষজ্ঞরা আমাদের বারবার সাবধান করে যাচ্ছেন যে বাতাসের দ্বারা সংক্রমণ হতে পারে এমন ভাইরাস আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যেই আমাদের আক্রমণ করবে এবং প্রায় ত্রিশ লাখেরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে মৃত্যু বরণ করবেন। বিল গেটস বলেন,

“নিউক্লিয়ার যুদ্ধ এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের পাশাপাশি মহামারী নিয়েও আমাদের শঙ্কা থাকা প্রয়োজন। আমরা ঠিক যেভাবে নিউক্লিয়ার যুদ্ধ নিয়ে চিন্তা করছি এবং আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে চিন্তা করছি ঠিক তেমনই বৈশ্বিক মহামারী নিয়েও আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরী।”

২০১৮ সাল   

২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে ম্যাসাচুসেটস মেডিক্যাল সোসাইটির স্বাস্থ্য বিষয়ক বার্ষিকী “শ্যাটাক লেকচারে” বিল গেটস সবাইকে আরো একবার মনে করিয়ে দেন একটি মহামারীর কথা। তিনি বলেন, বিশ্ব প্রযুক্তিগতভাবে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই উন্নতি আমাদের জীবনযাত্রা অনেক সহজ করে দিলেও কোন একটি মহামারী ঠেকানোর ব্যাপারে পৃথিবী আদতে কোন উন্নতি করেনি। তাই আমাদের এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ কর উচিৎ। কেননা ইতিহাস যদি আমাদের কোন কিছু নিয়ে সতর্ক করে থাকে সেটা হল আরেকটি মহামারী।

তিনি এর সাথে যোগ করেন, ২০১৪ সালে ইবোলার মত একটি ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতেই আমাদের যে নাজেহাল অবস্থা হয়েছে তাতেই পুরো বিশ্বের একত্রীত হয়ে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করা উচিৎ।

এর কিছুদিন পরেই স্ট্যাট নামক একটি মিডিয়াতে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে আমি ইতোমধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আলাপ করেছি। উল্লেখ্য যে ২০১৮ সালের মে মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের মহামারী বিষয়ক দপ্তরটি বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন।

এখন পর্যন্ত বিল গেটস ফাউন্ডেশন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য বেশ কয়েকটি গবেষণায় অর্থায়ন করেছে। এছাড়াও ২০১৭ সালে এই ফাউন্ডেশনটির অর্থায়নে মহামারী বিষয়ক প্রস্তুতি নেয়ার জন্য একটি জোট বা ঐক্য সংগঠিত হয়। পরবর্তী মহামারী আক্রমণ করলে কীভাবে সেটাকে প্রতিহত করা সম্ভব সে বিষয়েও বিলগেটস একটি পরিকল্পনা করে যাচ্ছিলেন।

বিল গেটসের মতো নগ্ন চোখে মহামারীর প্রাদুর্ভাব কেউ দেখতে পায়নি বলেই নোবেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় দেখা গেল পুরো বিশ্ব একদমই অপ্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে।

লেখক- ইকবাল মাহমুদ ইকু 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *