বাংলাদেশ মতামত সাম্প্রতিক

প্রতি তিন আসনে একজন করে, প্রত্যক্ষ ভোটে ১০০ নারী প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবি1 min read

জুন ১৬, ২০২৫ 2 min read

author:

প্রতি তিন আসনে একজন করে, প্রত্যক্ষ ভোটে ১০০ নারী প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবি1 min read

Reading Time: 2 minutes

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে ১০০ নারী প্রতিনিধি নির্বাচনের বিধান রাখার দাবি জানিয়েছে নাগরিক কোয়ালিশন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন যেন ৩০ শতাংশ নারী পায় সেটি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ‘নারীর ক্ষমতায়নে সংসদে সরাসরি ভোটে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন: প্রয়োজনীয়তা, চ্যালেঞ্জ ও সমাধান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।

নাগরিক কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে দাবি তুলে ধরে বলা হয়, নারীর নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। ২০২৬ সালের নির্বাচনে প্রতি তিন আসনের বিপরীতে একজন—এমন হিসাবে ১০০ আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নারী প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে। তবে পরবর্তী দুই নির্বাচনে এ অনুপাত পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে সংসদের মোট আসনের ৫০ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে নারী সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের সংস্কার কমিশনগুলোর প্রায়ই গতানুগতিক বাক্সে বন্দি হয়ে আছে। এর বাইরে তারা চিন্তা করতে চাচ্ছে না। আমরা বলেছি, জনগণের তুলনায় প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে। যখন ৩০০ আসন করা হয় তখন দেশের জনসংখ্যা কত ছিল আর এখন কত? সংসদে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি সময়ের দাবি—সেটি নারী হোক বা পুরুষ। আমরা প্রস্তাব করেছি, সংসদীয় আসন পরিবর্তন করা না গেলে প্রতিটি সংসদীয় আসনে দুজন প্রতিনিধি থাকবেন। একজন পুরুষ ও একজন নারী। তবে দুজনই সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন।’

তবে একই আসনে নারী ও পুরুষ দুজন প্রতিনিধি নির্বাচনে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দ্বৈত প্রতিনিধিত্ব হলে এর সমস্যা হলো, ওই যে আমাদের গ্রামবাংলায় যে কথা আছে, এক ঘরে দুই পীর হইতে পারে না। এমনটি হবে। বর্তমান যে নির্বাচন পদ্ধতি, সেখানে অনেক সংসদীয় আসনেই সংসদ সদস্যরা নারী সংসদ সদস্যদের যেতেই দেন না। দ্বৈত প্রতিনিধিত্ব হলে নারী সদস্যদের আরো যেতে দেবেন না।’

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, তার মাধ্যমে সারা দেশে একঝাঁক নারী নেতৃত্ব বের হয়ে আসবে। তবে সংরক্ষিত আসন বাড়ালে মনোনয়ন বাণিজ্য ভয়াবহ হবে। আগের সংসদে এক নারী মনোনয়নপ্রত্যাশীর কাছ থেকে একটি দল ২৫ কোটি টাকা দাবি করেছিল। পরে তিনি ৮ কোটি টাকা দিতে রাজি হয়েছিলেন। এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিবি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নারীদের জন্য যতগুলো আসনই রাখা হোক, তারা যেন জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। নারী-পুরুষ উভয়ের সর্বজনীন ভোটে নির্বাচিত হবেন নারীরা। এখনকার কাঠামোতে সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্যরা হীনমন্যতায় ভোগেন। রাজনৈতিক দলগুলোতেও তাদের মূল্যায়ন বেশি থাকে না। তারা অনেকটা দ্বিতীয় শ্রেণীর সংসদ সদস্য হিসেবে গণ্য হন। তারা বরাদ্দ কম পান। ফলে তার সংসদীয় আসনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারেন না। তারা জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে পারে না। এতে জনগণের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কমে যায়।’

নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয় উল্লেখ করে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘দ্বৈত প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয় এবং বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এটি যেকোনো একটি নির্বাচনী এলাকায় গণ্ডগোল আরো বাড়াবে। তবে সংরক্ষিত নারী আসন একশতে উন্নীত করতে বিএনপি একমত।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা বলেন, ‘সংসদে যোগ্য নারী প্রতিনিধিত্ব প্রত্যাশা করলে অবশ্যই প্রত্যক্ষ ভোট দিতে হবে। এমনটি করলে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। কেউ আত্মীয় বা কাছের মানুষ এ বিবেচনায় নমিনেশন পেয়ে সংসদে গেছেন—সেই কথা শুনতে হবে না।’

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও ড. আসিফ সাহান। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এবি পার্টির সাধারণ ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনুভা জাবিন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *