ঘৃনা-বিদ্বেষের শিকার খোদ এনওয়াইপিডি মুসলিম অফিসাররা1 min read
Reading Time: 3 minutesবিশেষ প্রতিনিধি
হেইট ক্রাইম বা ঘৃনার টার্গেটে পড়েছেন নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট -এনওয়াইপিডি’র মুসলিম কতিপয় অফিসার। ব্রঙ্কস কাউন্টির ট্রানজিট ডিস্ট্রিক্ট-১১ (ইয়াঙ্কি স্টেডিয়াম এলাকা) এর কয়েকজন মুসলিম অফিসারের লকারে গত শনিবার রাতে উগ্র মুসলিম বিদ্বেষী ঘৃনাবার্তা লেখা চিরকুট পাওয়া গেছে।মোট ৫ জন অফিসারের লকারে পাওয়া গেছে ঘৃনাবার্তার চিরকুট। এরমধ্যে ৪ জনই বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত। অবশ্য চার বাংলাদেশীর মধ্যে একজন অমুসলিম অফিসার রয়েছেন বলেও জানা গেছে। খবর এনওয়াই ডেইলি এবং সিবিএস’র।
পুলিশ স্টেশনটির ভিতরেই এমন ঘটনা কে বা কারা ঘটাতে পারে সেই প্রশ্নে তোলপাড় শুরু হয় সর্বত্র। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হলো ওই পুলিশ স্টেশনের প্রধান বা কমান্ডিং অফিসার হলেন জহির আজিজ, যিনি নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম সিও বা স্টেশন প্রধান। ঘটনার পরপরই এনওয়াইপিডি’র হেইট ক্রাইম ইউনিটের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে এবং ঘটনার হোতাদের দ্রুত চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ প্রধান।
নিউইয়র্কের শীর্ষস্থানীয় গনমাধ্যম এনওয়াই ওয়ান এর ক্রাইম রিপোর্টার ডিন ম্যানিনজার টুইটারে লিখেছেন, অভ্যন্তরীন সুত্রগুলি জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী থেকে আসা পুলিশ সদস্যদের (ভেটেরান অফিসার) একটি গ্রুপ হয়তো এই ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজ করে থাকতে পারে, কেননা কতিপয় মুসলিম ডায়নামিক অফিসাররা তাদের সমান ভাল ভাল কাজের দায়িত্ব এবং ভাতা পাচ্ছেন, এটা তারা পছন্দ করছেন না।
ধর্মীয় ও বর্ণগত কারণে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ঘৃনা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ার পটভূমিতে নিউ ইয়র্ক নগরীর বাসিন্দাদেরর হেটক্রাইম বা ঘৃনাজনিত অপরাধের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্বে এনওয়াইপিডি। মেয়র ও পুলিশ কমিশনার প্রায় নিয়মিতভাবেই নগরবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে থাকেন তারা যেন যেকোনো ধরণের হেটক্রাইম বা বিদ্বেষপ্রসূত ঘটনার ব্যাপারে দ্রুত পুলিশে খবর দেন। কিন্তু এই ঘটনায় প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে যে, খোদ এনওয়াইপিডি’র মুসলিম অফিসাররাই যেখানে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নিজ বাহিনীর অভ্যন্তরে ঘৃণা-বিদ্বেষের শিকার সেখানে তারা কিভাবে অন্যদের বাঁচাবেন। যদিও ঘটনার পরপরই নগরীর মেয়র, পুলিশ কমিশনার, নগর পার্লামেন্টের স্পিকার, পাবলিক এ্যাডভোকেট এবং সিটি কম্পট্রোলার সরাসরি এনওয়াইপিডি মুসলিম অফিসার্স সোসাইটির নেতাদের সাথে কথা বলে আশ্বাস দিয়েছেন ঘটনার হোতাদের দ্রুত খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের। তারপরও এ ঘটনায় মুসলিম অফিসারদের উদ্বেগ ও বিস্ময় যেন কাটছে না।
নিউইয়র্ক মুসলিম পুলিশ অফিসারদের সংগঠন মুসলিম অফিসার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আদিল রানা সাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘটনায় গভীর হতাশ প্রকাশ করে এর যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ৮ জানুয়ারী প্রকাশিত ঐ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মুসলিম পুলিশ অফিসারদের টার্গেট করে যে ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে বাহিনীর অভ্যন্তর থেকেই তাতে আমরা গভীর ভাবে মর্মাহত। পুলিশ কমিশনার জেমস এ নীলের প্রতি আমাদের গভীর আস্থা এবং সমর্থন আছে।আশা করি, এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই গুরুত্ব সহকারে তদন্ত হচ্চে, এবং এর বিচার হবে।’
মুসিলম পুলিশ অফিসার সোসাইটির ঐ বিজ্ঞপ্তি থেকেই জানা যায়, সম্প্রতি নিউইয়র্ক ফায়ার ফাইটার্স দপ্তর এফডিএনওয়াই এর একজন মুসলিম ফায়ার ফাইটারও একই ধরনের আচারণের স্বীকার হয়েছেন তার বাহিনীর অভ্যন্তর থেকেই। সহবস্থান এবং ধর্মীয় কারণে ঘৃনা বিদ্বেষকে শুণ্য সহনশীলতায় দেখা হয় নিউইয়র্ক। সেই শহরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভেতরেই এমন আচারন, বাহিনীগুলোকে বিভক্ত করার নামান্তর এবং এ ধরনের ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটতে থাকলে অফিসারদের মনোবল ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় প্রেসিডেন্ট আদেল রানা কর্তৃক সাক্ষরিত ঐ বিজ্ঞপ্তিতে।
প্রসঙ্গত, নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ৩২ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে মুসলিম কর্মকর্তার সংখ্যা ১১ ’শ’র কিছু বেশি। এরমধ্যে একক সর্বাধিক সংখ্যক ২৬০ জন মুসলিম অফিসার বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত। অবশ্য বাংলাদেশী অরিজিনি বেশ কয়েকজন অমুসলিম পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন এনওয়াইপিডিতে এবং ঘৃনাবার্তার চিরকুট পাওয়া চার বাংলাদেশী কর্মকর্তার মধ্যে একজন প্রকৃতপক্ষে অমুসলিম। এছাড়া নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের আওতাধীন ট্রাফিক এনফোর্স এজেন্ট পদে এবং স্কুল সেফটি ইউনিটের বিভিন্ন পর্যায়ে আরও অন্তত হাজারখানেক বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন।
মুসলিম অফিসার্স সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আদিল রানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা গেছে যে, খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর সোমবার নগরীর মেয়র, পুলিশ কমিশনার, সিটি পার্লামেন্টের স্পিকার, পাবলিক এ্যাডভোকেট এবং সিটি কম্পট্রোলার সরাসরি সোসাইটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সাহস যুগিয়েছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন দোষীদের খঁফজে বের করার ব্যাপারে।
বাংলাদেশী-আমেরিকান পুলিশ অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো: হুমায়ন কবির প্রথম আলোর সাথে আলাপকালে জানান, যা বলার সেটা মুসলিম পুলিশ অফিসার সোসাইটির তরফ থেকে বলা হয়েছে। তবে, এ ধরনের ঘৃনা বিদ্বেষের ঘটনা, নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ঐতিহ্যের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এই ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক। তবে পুলিশ কমিশনার জেমস পি. ও’নেইল এবং মেয়র বিল ডি ব্লাজিওসহ নগরকর্তৃপক্ষের সকল শীর্ষকর্মকর্তা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। দ্রুত তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা নিশ্চিত যে ঘটনার হোতারা চিহ্নিত হবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে সর্বশেষ মুসলিম বিদ্বেষ এর ঘটনাটি ঘটে দুই সপ্তাহ আগে ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর ব্রুকলিনে। সাওয়াদ কিরামা নামের একজন ৫১ বছর বয়সী হিজাবধারী নারীকে কিল ঘুষি, এবং মুখে থুথু ছিটানো হয়েছিল একদল কিশোরের তরফে।পুলিশ ঐ ঘটনারও তদন্ত করছে।