বিশেষ প্রতিনিধি
ব্রঙ্কস এর বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নার্স ৩০ বছর বয়সী মাহফুজা রহমান সম্ভবত বেচে নেই বলে মনে করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকেই নিখোজ মাহফুজার খোজে অভিযান চলেছে নিউইয়র্ক পুলিশের তরফ থেকে। মাহফুজা রহমানের স্বামী মোহাম্মাদ চৌধুরীও দেশে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। তবে তার স্বামীর কর্মকান্ড,যেমন, মাহফুজা নিখোজ হওয়ার আগেরদিন একটি কুড়াল এবং বস্তাবন্দী করার পর, মোড়ানো টেপ ক্রয় করার প্রমান পেয়েছে ব্রঙ্কস পুলিশ। এমনকি বেলভ্যু হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মাহফুজা ৯ তারিখ সন্ধায় বাসায় ফিরে আসেন বলেও নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তার পর থেকেই তার হদিস পাওয়া যায়নি। সব আলামতকে সামনে নিয়ে, ব্রঙ্কস এর একজন গোয়েন্দা পুলিশ ম্যালকম রেমন জানিয়েছেন, ‘সে সম্ভবত মৃত’। পিক্স ১১ নিউজকে এ্ই সংবাদ দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে বেডফোর্ড পার্ক এলাকার ৯ বছর বয়েসী কন্যা সন্তানের মা মাহফুজা (৩০) ম্যানহাটানের বেলভ্যু হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজের পাশাপাশি হান্টার কলেজেও লেখাপড়া করছিলেন। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকেই মাহফুজা নিখোঁজ। ডিটেকটিভ পুলিশ তন্নতন্ন করে অনুসন্ধানের পর জানতে সক্ষম হন যে, মাহফুজা বাংলাদেশে যাননি। কারণ, তার পাসপোর্স, ক্রেডিটকার্ডসহ ওয়ালেট, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডক্যুমেন্ট বাসায় পাওয়া গেছে। যদিও মাহফুজার স্বামী পুলিশকে প্রথম দিনেই জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশে মা-বাবা গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হবার সংবাদ পেয়েই তড়িঘড়ি করে মাহফুজা বাংলাদেশে গেছেন এবং একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে নিজেও দুদিনের মধ্যে বাংলাদেশে যাচ্ছেন। এতে তদন্ত কর্মকর্তারা কিছুটা আস্থা পেলেও নিজেরা বাংলাদেশে মাহফুজার বাবার সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন যে, দুর্ঘটনার কথা সত্য নয় এবং ৯ ডিসেম্বরের পর মাহফুজার সাথে তাদের কোন কথাও হয়নি।
এমন তথ্য জানার পর ডিটেকটিভ পুলিশ মাহফুজার বাসায় তল্লাশীর পাশাপাশি কংক্রিকেটর আঙ্গিনা এবং মেঝে খুড়েও সন্ধান করা হয় মাহফুজার দেহ। কিছুই পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত মাহফুজার লাশ কিংবা দেহের খন্ডিত অংশও খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশ হত্যা-মামলাও রজু করতে পারেনি।
২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর যেদিন মাহফুজা নিখোঁজ হন, তার একদিন পর ১০ ডিসেম্বর সকাল ৮.০৯ মিনিটে তার স্বামী নিজের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নিকটস্থ একটি স্টোর থেকে ধারালো ১৬ইঞ্চি কুড়াল ক্রয় করেছেন। একইসাথে বস্তাবন্দি করার কাজে ব্যবহৃত ট্যাপও ক্রয় করেছেন।
২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর অপরাহ্ন সাড়ে ৪টায় মাহফুজা তার কর্মস্থল বেলভ্যু হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এর ৩ মাস পরও মাহফুজা কাজে না ফেরায় কর্তৃপক্ষ দুশ্চিন্তায় পড়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে।
মাহফুজার ব্যাপারে কেউ যদি কিছু জানেন তা যেন সরাসরি ১-৮০০-৫৭৭-৮৪৭৭ নম্বরে ফোন করে তদন্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেন-এ আহবানও জানানো হয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে।
প্রথমে দিকে অনেকেই মনে করেছিলেন, মাহফুজা হয়তো তার গোপন প্রেমিকের হাত ধরে অন্যত্র গা ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু এটি এখন আর ধোপে টিকছে না। কারণ, তার পাসপোর্ট, আইডি, ক্রেডিট কার্ড সবকিছুই বাসায় পাওয়া গেছে। নতুন করে কিছু করাও সম্ভব নয়। আশপাশের কোন দেশে বিনা পাসপোর্টে গেলেও কোন না কোনভাবে তার হদিস পাবার কথা। বিশেষ করে ৯ বছর বয়েসী একমাত্র সন্তানের জন্যে একবার হলেও তার যোগাযোগের চেষ্টা করার কথা। অথবা দেশে মা-বাবাকেও নিজের অবস্থান জানানোর কথা। এখন পুলিশ বিশ্বাস করছে, যে, স্বামীই তার নিখোঁজের জন্যে দায়ী বলে পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজেও বাংলাদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। মাহফুজার নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনে তার স্বামীকে বাংলাদেশ থেকে ধরে আনার পরামর্শও দিয়েছেন কেউ কেউ।