বিনোদন

ভারতীয় সিরিজ পর্যালোচনা (সপ্তম পর্ব): Asur: Welcome to your dark side- অন্যায় আর পুরাণের সমন্বয়1 min read

মার্চ ৩১, ২০২০ 7 min read

author:

ভারতীয় সিরিজ পর্যালোচনা (সপ্তম পর্ব): Asur: Welcome to your dark side- অন্যায় আর পুরাণের সমন্বয়1 min read

Reading Time: 7 minutes

‘পুরাণ অনুসারে সাত ঋষির মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঋষি ছিলেন কাশ্যপ। তাঁর পত্নী সংখ্যা ছিল ১৩ জন। এর মধ্যে দিতি এবং অদিতির প্রভাব ছিল তাঁর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

উত্তম নক্ষত্রের প্রভাব এবং মিলনের ফলে অদিতির গর্ভে জন্ম নেয় তেজস্বী ও গুণবান পুত্র। অদিতির সৌভাগ্যে ঈর্ষান্বিত দিতি ঋষির কাছে সন্তানলাভের আবদার ব্যক্ত করে। কাশ্যপ নক্ষত্রের বিপরীত প্রভাব সম্পর্কে সাবধান করলেও দিতির তীব্র ইচ্ছার কাছে পরাজিত হয় সে। মিলন ঘটে কাশ্যপ ও দিতির। আর এর ফলেজন্ম ঘটে হিংসা, ক্রোধে লোলুপ সন্তান অসুরের।

কিছুকাল পরেই দেবতা ও অসুরের প্রবল যুদ্ধে পরাজিত হয় অসুর শক্তি। স্বর্গে অধিষ্ঠিত হয় অদিতির সন্তানেরা, আর অন্ধকারে ছুঁড়ে ফেলা হয় দিতির সন্তানদের।‘

এই অসুরের গল্পকে উপজীব্য করেই অনলাইন স্ট্রিমিং সাইট ভুট অরিজিনালসে মুক্তি পায় আট পর্বের সাইকোলজিকাল থ্রিলার সিরিজ ‘অসুর’। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমের মতো শক্তিশালী বিনিয়োগ না থাকা সত্ত্বেও আকর্ষণীয় ও মৌলিক কাহিনীর কল্যাণে দর্শক প্রিয়তা অর্জন করে নিয়েছে এই সিরিজ।

কাহিনী সংক্ষেপ

বছর দশেক আগেই ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ ইনভেস্টিভেশন (CBI) ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন নিখিল নায়ার। অপরাধীর মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেও তাঁর মন পড়ে থাকে ভারতেই। পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবেই আর ফেলে আসা কর্মক্ষেত্রে আর পা বাড়ায়নি নিখিল।

আচমকাই তাঁর ফোনে কে বা কারা পাঠাতে লাগলো ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের কোয়ারড্রেন্ট।  কোয়ারড্রেন্ট হলো কোন নির্দিষ্ট স্থানের নিখুঁত ভৌগোলিক অবস্থানগত পরিমাপ। প্রথমে পাত্তা না দিলেও একসময় ভীতিকর হয়ে দাঁড়ায় এই ক্ষুদে বার্তা।

পুরনো সহকর্মী লোলার্ক দুবেকে এসব ক্ষুদে বার্তার কথা জানাতেই চমকে ওঠে নিখিল। কারণ কোয়ারড্রেন্ট অনুযায়ী স্থানে গেলেই মিলছে মৃতদেহ। তবে লাশগুলোকে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছেনা কখনোই। বীভৎস ভাবে পুড়িয়ে অথবা ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে রেখে যাচ্ছে খুনি, সাথে শয়তান বা দৈত্যের একটি মুখোশও ফেলে যাচ্ছে এই চক্র। আশ্চর্যের বিষয়, প্রতিটি লাশ থেকেই খুনি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ব্যক্তির তর্জনী। যেন অশুভের প্রতিই তীক্ষ্ণ নির্দেশ দিচ্ছে কেউ।

দায়িত্ববোধ থেকেই ফের ভারতে পদার্পণ ঘটে নিখিলের। মুখোমুখি হয় প্রাক্তন প্রেমিকা নুসরাত সাইদের এবং শিক্ষক- সহকর্মী ধনঞ্জয় রাজপুতের। তদন্তের মাঝেই প্রকাশ পায় এই খুনিচক্রের হাতে প্রাণ গিয়েছে ধনঞ্জয় পত্নী সন্ধ্যার। সন্দেহের তীর রাজপুতের দিকে গেলে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে মরিয়া হয়ে ওঠে সে। এর মধ্যেই নিখিল জিম্মি হয় সেই উন্মাদের।

বাড়তে থাকে মৃত্যুর মিছিল, সাধারণ জনতা থেকে ধনকুবের- সকলেই কুক্ষিগত এই ক্রমিক খুনির হাতে। নিখিলের দক্ষতাকে পুঁজি করে আরও নৃশংস হয়ে ওঠে সে। ওদিকে ধনঞ্জয় আর তাঁর দল নতুন উদ্যমে শুরু করে তদন্ত। ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয় পুরাণ, শাস্ত্র, ইতিহাস আর মানুষের অন্ধকার দিকের উন্মোচন।

কে এই ক্রমিক খুনি? নিজেকে অসুর বলেই বা সে কেন দাবি করছে? ১০ বছর আগের সেই কিশোর শুভ জোশি,ধনঞ্জয় আর নিখিলের সাথে এর মেলবন্ধন কোথায়?  কলি যুগের সমাপ্তি কি তবে আসন্ন নাকি অসুরের শক্তি ক্রমে বৃদ্ধিই পাবে?

সার্কিট ছাড়াও ভিন্ন চরিত্রেও আলো ছড়াতে জানেন আরশাদ; Photo:Masala

পুরাণ নয় পুরনো

ভারতীয় পুরাণের সুগভীর দৃষ্টিকোণ বরাবরই দুনিয়াজোড়া আগ্রহের বস্তু। তবে খোদ ভারতেই এর আধুনিক কোন প্রকাশ নেই। সেদিক দিয়ে ‘অসুর’ অন্তত চৌকস উপস্থাপন। অতি গভীরে না গিয়েও বেদের বিচ্ছিন্ন কিছু ধারণাকে তুলে এনেছে সিরিজটি।

ঋষি কাশ্যপ ও তাঁর স্ত্রী দিতির অশুভ তিথিতে যৌন মিলনের ফলেই ভূমিষ্ঠ হয় অসুর তথা দৈত্যের। ভিন্ন ধারণা মতে সুরা পান করেনি যেসব দেবতা তারাই অসুরে পরিণত হয়। অসুর আপাদমস্তক কোন মন্দ অস্তিত্ব নয়, এটি শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার।

এদিকে কলিযুগের বিস্তার নিয়েও বিশদ আলোচনা পাওয়া যায় সিরিজের কাহিনি সূত্রে। হিন্দু শাস্ত্রমতে দুনিয়া ও বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড আবর্তিত হচ্ছে চার যুগ অনুসারে। এই চার যুগ হলো- সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি। এই চার যুগের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিমান হলো কলি। কিন্তু কলির মাঝে পাপ তিন ভাগ ও পুণ্য মোটে একভাগ। বিশাসনের যুদ্ধে এই কলি ত্রেতা ও সত্যের হাতে পরাজিত হয় এবং সময় আগমনের জন্য অপেক্ষারত থাকে।

সত্যের সময়কাল ১৭,২৮,০০০ বছর। পূণ্যময় এই পর্বের পরেই ত্রেতার আরম্ভ এবং এর আয়ুষ্কাল ১২,৯৬,০০০ বছর। তিন ভাগ পূণ্যের এই কালেই জন্ম হয় ঋষিদের। ত্রেতা শেষ হলে দ্বাপর আসে এবং ৮,৬৪,০০০ বছর পর্যন্ত ব্যাপ্তি থাকে এর। সবার শেষে আসে অন্ধকার ও নিষিদ্ধ কলিযুগ। মাত্র ৪,৩২,০০০ বছর এই সময়কাল হলেও এর মাঝেই অসত্য ও ধ্বংসের সীমায় পৌঁছে পৃথিবী। কুটিল রাজনীতি ও লোভী শাসকের এই যুগে মানুষ ক্রমে নিমজ্জিত হতে থাকে অন্যায়, পাপ , মিথ্যা ও ছলনায়। ধর্ম থেকে বিচ্যুতি ও শোষণের ফলে অযোগ্য হয়ে পড়বে বিশ্বচরাচর।

কলির ভয়ংকর সময়ে রাজাধিরাজ হবে অসুর। অসুরের প্ররোচনায় লোকে মদ, সম্পদ, যৌনতায় আসক্ত হয়ে উঠবে এবং ঘৃণার রাজত্ব কায়েম করবে। সেই রক্তগঙ্গার সমাপ্তি টানতেই আবির্ভাব ঘটবে ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতার কালকির। অসুরবধের মধ্য দিয়ে সে পুনরায় প্রতিষ্ঠা ঘটাবে সত্য যুগের।

সিরিজে অসুরের রূপকে যেমন আছে শুভর চরিত্রটি তেমনি কাল্কির দৃঢ়তায় দেখা গেছে নিখিলকে। সন্তান বলিদানের মাধ্যমেই সত্যের প্রতিষ্ঠায় তৎপর দেখা যায় নিখিলকে।

পাপপুণ্যের আপেক্ষিক ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে ‘অসুর’; Photo: Voot

চুলচেরা ভাবনা

সিরিজে দেখা যায়, খুনি একটি নির্দিষ্ট রাশি ও নক্ষত্রের অন্তর্গত ব্যক্তিকে লক্ষ্য করেই খুনের পরিকল্পনা করে। এই বিশেষ রাশি হলো- মকর ও কুম্ভ যা ধনিষ্ঠ নক্ষত্রের প্রভাবে আবদ্ধ। এই রাশিগুলো মূলত শনি, রাহু, মঙ্গল ও ইউরেনাসের সাথে যুক্ত যা নির্দেশ করে ডিসেম্বরের ২২ থেকে ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখের মধ্যে জন্ম নেয়া প্রতিটি লোক অসম্ভব ভাগ্যবান। পুরাণ অনুসারে ভীষ্মও ধনিষ্ঠ নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করে।

মকর ও কুম্ভ রাশির লোকেরা সাধারণত সৃজনশীল ও সৎকাজে উদ্যমী হয়ে থাকে। জাগতিক সৃষ্টি ও শুভ কাজে তাদেরই সর্বাগ্রে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়। এদের মধ্যেই চিত্রকর, সমাজকর্মী, শিল্পী, ব্যবসায়ী, স্থপতির উপস্থিতি বেশি। প্রত্যক্ষভাবে এরাই হলো অসুরের মূল শত্রু। এদের বিনাশ মানেই পৃথিবী থেকে সৎকর্মের বিদায়।

তাই খুনি স্বভাবতই তার টার্গেট হিসেবে বেছে নিতে থাকে সমাজকর্মী, চিত্রকর, রাঁধুনি, চিকিৎসক ও দানবীর শিল্পপতিকে। ধনিষ্ঠের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তি সাধারণত অর্থ প্রদানের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কোনরূপ চুক্তিতে আবদ্ধ হন না, ঠিক এই বৈশিষ্ট্যর উপর গুরত্ব দিয়েই শিল্পপতি ও দানবীর আদিত্য জালানকে বেছে নেয় অসুররূপী ‘শুভ জোশি’। আবার এই রাশির দাম্পত্য জীবনের বিশৃঙ্খলতার প্রতি নির্দেশ করেই বেছে নেয়া হয় ‘সন্ধ্যা রাজপুত’কে।

রসিক সিবিআই অফিসার লোলার্ক দুবে চরিত্রে দেখা গেছে শারিব হাশমিকে। তাঁর মতে এই সিরিজের অনন্যতার কারণ হলো গভীর চিত্রনাট্য-

‘ক্রমিক খুন নিয়ে অসংখ্য চলচ্চিত্র, সিরিজ আপনি পাবেন। কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতি আর পুরাণের সাথে এভাবে মিশিয়ে এর আগে এমন কোন গল্প লেখা হয়নি। ঠিক এই কারণেই লেখক গৌরব শুক্লাকে অভিবাদন জানাতে আপনি বাধ্য।‘

খুনের মনোবিজ্ঞান

গবেষণা থেকে জানা যায়, সাইকোপ্যাথেটিক খুনি ও সোসিওপ্যাথেটিক খুনির মধ্যে মোটাদাগের কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। সাইকোপ্যাথ সাধারণত কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে হত্যাকাণ্ড ঘটায় না যেখানে সোসিওপ্যাথের খুনের পেছনে কোন না কোন কারণ থাকে।

ভিক্টিমের কোন অনুভূতি বা প্রার্থনায় সাইকোপ্যাথের কোন ব্যাত্যয় হয় না, অনুশোচনা বা দুঃখবোধ স্পর্শ করে না তাকে। অন্যদিকে ভিক্টিমের আর্তনাদ প্রভাবিত করে সোসিওপ্যাথকে। সাইকোর এই বিশিষ্টতা মূলত জৈবিক বা জিনভিত্তিক। তবে সোসিওপ্যাথ খুনির আকার পায় পারিপার্শ্বিকতা থেকে। তীব্র ঘৃণা, আতঙ্ক, উপেক্ষা ও অপরাধবোধ ব্যক্তিকে সোসিওপ্যাথে পরিণত করতে পারে।

সিরিজের শুভ জোশি সে হিসেবে সোসিওপ্যাথ। পিতা রাধানাথের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনই ধীরে ধীরে তাকে ঠেলে দেয় অন্যায় ও ক্রোধের পথে। মানবমনে আজন্ম লালিত আলো-আঁধারির ভেতর থেকে তমসার নগ্ন উন্মোচন ঘটিয়ে তাকে স্বীকৃত অসুরে পরিণত করে রাধানাথ। মাতৃ ও পিতৃস্নেহ বঞ্চিত শুভকে আরও একধাপ নিশীথে নামিয়ে দেয় ধনঞ্জয়। আর তারই স্বরূপ দিবালোকে আসে ক্রমিক খুনি রূপে।

শুভর প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের জোর যদিও একইসাথে দুই ধাঁচের খুনিকে নির্দেশ করে তবে তার পরিবর্তনের পেছনের কারণ পিতার নিগ্রহই। এর ফলে পিতৃহত্যার সময় শুভর কাছে পাপপুণ্যের সূক্ষ্মতাও দূরীভূত হয়ে যায় চিরতরে। তার মতে, পাপপুণ্যের ধারণার পেছনে ঈশ্বরের ঘৃণ্য অভিসন্ধি আছে। আদতে নিজ কুরিপুকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হলো পাপ এবং একে চরিতার্থ ও ইচ্ছেমতো কাজ করাই হলো পুণ্য।  আর এই তত্ত্বই সেই চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিতে থাকে; প্রথমে জেলে কয়েদীদের মাঝে এবং পরে ওয়েবসাইট ও পোডকাস্টের মাধ্যমে।

রিধি ডোগরার সাথে আরশাদ- শুটিং এর ফাঁকে

তাক লাগানো প্লট

হলিউডে মিথোলজি তথা পুরাণ সংক্রান্ত কাজের দেখা হরহামেশাই মেলে। বিশেষত ড্যান ব্রাউনের রবার্ট ল্যাংডন সিরিজে পুরাণের চোখ ধাঁধানো ব্যবহার সবমহলের দর্শককেই চমৎকৃত করেছে। পুরাণতত্ত্বে পিছিয়ে নেই ভারতও। কিন্তু মিডিয়ায় রামায়ণ, মহাভারতের বৈচিত্র্যময় সংজ্ঞায়নের ঝুলি প্রায় শুন্যই তাদের। সেই স্থানেই ‘অসুর’ অনন্য।

বেদ, ঋগ্বেদ, ঋষি পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত চষে গৌরব শুক্লা, নিরেন ভাট ও বিনয় ছাওয়াল দাঁড় করেছেন ‘অসুরে’র চিত্রনাট্য। মনোবিজ্ঞানের সাথে পুরাণের মিশ্রণ তাক লাগিয়েছে গল্পে, সংলাপেও ছিল নিগূঢ় পূরাণের সহজ ব্যাখ্যা।

ভারতীয় ওয়েব সিরিজ নিয়ে বাংলাইনফো টিউবের অন্যান্য পর্যালোচনা পড়তে ক্লিক করুন এখানে- INDIAN WEB SERIES

পরিচালক অনি সেনও অভিভুত করেছেন তাঁর মুনশিয়ানায়। অঞ্চল শাহের সুরারোপ এতটাই যুক্তিযুক্ত ছিল যে অনায়াসে বিজিএমকে হলিউডের সাথে তুলনা দিতে পারবে দর্শক। তবে আঁধারে রহস্যময় সব দৃশ্য ধারণের পুরো কৃতিত্বটা যায় শায়ক ভট্টাচার্যের কাঁধেই। তাঁর ক্যামেরার কল্যাণেই পিলে চমকানো থ্রিলারে পরিণত হয়েছে এই ‘অসুর’।

রাহুল কারুপ, অমিত সিং ছিলেন প্রোডাকশন ডিজাইনের দায়িত্বে। বিশদ গবেষণা করেই জেল, সিবিআই অফিস ও ভৌতিক পরিবেশ তৈরি করেছে এই দল। প্রিন্স ও দীপক শিব দে ছিল ভয়ংকর সব মিথোলজিকাল চিত্রকর্ম তৈরির দায়িত্বে।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু প্লট হল, যেমন- সন্ধ্যা রাজপুত হত্যাকাণ্ডের চিত্রায়ন, কেসার ভরদ্বাজের অসম্পূর্ণ পরিচয়, রসূল শেখের আকস্মিক পট পরিবর্তন প্রভৃতি আপনাকে খানিকটা ভড়কে দিলেও মূল কাহিনীতে বড় কোন ছাপ ফেলতে পারেনি।

অভিনয়ের জয়গান

মুন্নাভাইয়ের সহকারী বা কমেডি ঘরানার ছবির বাইরেও আরশাদ ওয়ার্সি একজন বলিষ্ঠ অভিনেতা- সেকথা বলিউড ভুলতে বসেছিলো। কিন্তু মুকেশ ছাবড়া কাস্টিং কোম্পানির সাথে সৌরভ পাল, দেবেন্দ্র প্যাটেল ও হ্যারি পারমারের কাস্টিং দল সে পথে হাঁটেনি। মূল সিবিআই এজেন্ট ধনঞ্জয় রাজপুতের চরিত্রে দেখা যায় আরশাদকে। অন্যদিকে নিখিল নায়ারের ভূমিকায় ছোট পর্দার হার্টথ্রব বরুণ সোবতির কাস্টিংও নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

লেখক, পরিচালক ও অভিনেতাদের সার্থক সমন্বয়ই সিরিজের সাফল্যের কারণ

সিরিজে শারিব হাশমির মতো উঠতি তারকা থাকলেও গল্পের প্রয়োজনে সকলেই ছিলেন সমান আন্তরিক। ওয়েব সিরিজের অন্যতম চেনামুখ অনুপ্রিয়া গোয়েংকা এখানে অভিনয় করেছেন নয়না নায়ারের চরিত্রে। রসূল শেখ চরিত্রে বিস্ময়কর দ্যুতি ছড়িয়েছেন আমে ওয়াঘ। এবারই ওয়েবে নাম লিখিয়েছেন রিধি ডোগরা, এখানে গ্ল্যামারের চাইতে অভিনয়েই আকর্ষিত করেছেন তিনি দর্শককে। গৌরব অরোরা ও অর্চক ছাবড়া সুপার মডেল থেকে নিজেদের অনেকদূর টেনে এনেছেন। বিশেষত গুরুত্বহীনভাবে শুরু হলেও শেষ অঙ্কে গল্পের মোড়ই ঘুরিয়ে দেয় গৌরবের নেতিবাচক প্রতিপত্তি। এছাড়াও পাওয়ান চোপড়া, দীপক কেজরিওয়াল প্রমুখ প্রবীণ অভিনেতাও আছেন এতে।

শুভ জোশির চরিত্রায়নের জন্য খাটুনি পোহানোটা মাঠে মারা যায়নি টিম ‘অসুরে’র। সাত বছরের শুভর জন্য দেবইয়াঙ্খ টাপুরিয়াহ ও ষোল বছরের হিসেবে বিশেষ বানশালকে নির্বাচন করে পারদর্শিতার পরিচয়ই দিয়েছে তারা। বিশেষের শান্ত মেদুর ও প্রভাবশালী চরিত্রের ভারসাম্য আনাটা চ্যালেঞ্জিং হলেও উতরে গেছে এই নবীন অভিনেতা।

সিরিজের সমাপ্তি বলছে খুব শীঘ্রই এর দ্বিতীয় কিস্তি আসবে। বহু প্রশ্নের উত্তর মিলবে সেই কিস্তিতেই। আইএমডিবি রেটিং এ ৯.১ আদায় করে নেয়া এই সিরিজ নিঃসন্দেহে এবছরের অন্যতম সেরা নিবেদন। স্বল্প বাজেটেও অসামান্য সৃষ্টির নিদর্শনই বলে দেয় বলিউড দ্রুতই এগুচ্ছে এর শৈল্পিক পরিণতির পথে।

লেখক- সারাহ তামান্না

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *