‘এই ভাষাটা আমার’ নিশ্চই অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটেছে এই ভাবনা? নিউইয়র্কের চলতি পথে রাস্তায় রাস্তায় কিছু ইলেক্ট্রনিক্স স্ক্রিন ওয়ালা দন্ডায়মান বাক্স আছে। এই বাক্স গুলোর নাম ‘লিঙ্ক এনওয়াইসি’। নিউইয়র্ক শহরকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের শহরে পরিনত করার মানসে ২০১৭ সাল থেকে এর যাত্রা শুরু। সেখানে একটু পর পরই, ভেসে উঠে কিছু বাংলা লাইন। পরক্ষনেই মিলিয়ে যায়।
এ্যাস্টোরিয়ার গ্রিনপয়েন্ট দিয়ে গাড়ির চালানোর সময় হটাৎ একদিন এই লেখা দেখে পিলে চমকে গিয়েছিল ভালো লাগায়। দুর থেকে দেখলাম ঐ বাক্সে লেখা উঠলো, ‘একবার লগ-ইন করুর, সংযুক্ত থাকুন সবগুলো লিঙ্ক ওয়াইফাই এর সাথে’। এর পর নিচেও যথারীতি বাংলায় লেখা ‘ আপনার মোবাইল ডিভাইসটির সেটিংস এ যান, সেখানে গিয়েই সংযুক্ত হওয়ার জন্য নির্বাচন করুন’।
মনে হলো গাড়ীটা রাস্তায় রেখেই একটা ছবি তুলে ফেলি। কিন্তু পরে মতিভ্রম হলো। এটা ঢাকা নয়, নিউইয়র্ক, নিয়ম ভাঙার দায়ে জরিমানা হতে পারে। তাই ছবি তোলা হলো না। ঐ বাক্সের কাছে যেতে যেতেই চলে আসলো অন্য একটি বিজাতীয় ভাষা।
এমন করে আরো একদিন হয়েছে কুইন্স এর রিচমন্ড হিলে। ট্রাফিক লাইটে সবুজ বাতির জন্য অপেক্ষা করছি, এমন সময় এ লেখা দেখলাম কিন্তু মোবাইল হাত করে নিয়ে ছবি তোলার বাটন চাপ দেয়ার আগে উধাও। আবার কখন দেখা মেলে এই লেখার, ওদিকে সবুজ বাতি জ্বলে উঠায় পেছন থেকে হর্নের শব্দে আক্ষেপ আরো বাড়লো।
নিশ্চই আমি একা নই, এই ভাবনা আরো অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটেছে। বাংলা শব্দের ঝলকানিতে যত বাংলাদেশী এবং বাংলাভাষাভাষী মানুষ আছে তাদের মনে একটা বাক্য কি উকি দেয় না? ‘এই ভাষাটা আমরা’।
হ্যা, সম্প্রতি নাজিম উদ্দীন নামের একজন ব্যাক্তি নিজের ফেসবুকে ঐ ঝলকানির বিরল ছবিটাই তুলেছেন। এর পর লিখেছেন ‘এই ভাষা’টা আমার।
নিউইয়র্কে বাংলা ভাষার প্রচলন হয়েছে গেল বেশ কয়েব বছর ধরে। গত ২/৩ বছর ধরে এটাকে বেশি ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে নানা সরকারী প্রচারণায়। ভোটের প্রচারণায় বড় বড় সব প্রার্থী হিলারী, বার্নি স্যান্ডার্স সবার পোস্টার ছেপেছিল বাংলায়। ভোটের দিন, ব্যালট পেপার ছিল বাংলায়। আর ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগে পরে নানা নির্দেশনাও ছিল বাংলায়। নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় ছিল এই বাংলার প্রাধান্য। এর বাইরে নিউইয়র্কের স্কুল গুলোতে বাংলা শেখানো হয়। স্কুলের দেয়ালে দেয়ালে অনন্য ১০ ভাষার একটি হিসেবে বাংলা অক্ষরের দেখা মেলে সব খানেই। একদিন রেলের ভিতরে একটি নগর প্রসাশনের বাংলা পোস্টার দেখে লিখেছিলান, নিউইয়র্ক এবং আমার বাংলা মা’ শিরোনামের একটি লেখা।
নিউইয়র্ক বাংলা ভাষাভাষীদের আপন করে নিতে ক্রমশই বাড়িয়ে তুলছে তার বাংলার ব্যাবহার। যখনই কোথাও বাংলায় প্রচারণার দেখা মেলে, মন নিজের অজান্তেই গেয়ে উঠে ‘এই ভাষাটা আমার’।
অবস্য এটার কিছু ত্রুটি দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে। নগর অফিসের যেসব অভিবাসন সংক্রান্ত প্রচার প্রচারণা আছে সেখানকার লিফলেট এ বাংলা বানানের ভুল ত্রুটি ধরা পড়েছে সম্প্রতি। সেটা নিয়ে কিছুটা নাখোশ বাংলা বানান রীতির শুদ্ধ চর্চার ধারকরা। নিজ উদ্যোগে মেয়র অফিসে চিঠি লিখে জানিয়েছেন কয়েকজন তাদের অসন্তোষের কথা। বিশ্বাস করা যায়, এটা নিয়ে টনক নড়বে। অর্থাৎ নগর অফিসের প্রচার প্রচারণা দপ্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট যারা তারা আরো বেশি যত্নবান হবেন।
তার আগ পর্যন্ত চলুক না, আরো ব্যাপ্তি। আর আমরা গর্ব করে বলি ‘এই ভাষাটা আমার’।