Site icon Bangla Info Tube

স্মার্টফোনগুলো কি গোপনে আমাদের সব কথা শুনছে?

স্মার্টফোনগুলো কি গোপনে আমাদের সব কথা শুনছে?

Reading Time: 3 minutes

আপনি কি কখনো লক্ষ্য করেছেন, আপনি যখন অপরিচিত কারো সাথে বন্ধুত্ব করেন বা পরিচিত হন সেই মানুষটিই আপনার ফেসবুকের “পিপল ইউ মে নো” সাজেশনে চলে আসে? অথবা কখনো কি এমন হয়েছে যে আপনি আপনার পরিবাবের সাথে বাসার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কেনা নিয়ে কথা বলেছিলেন এবং কিছু সময় পরে সেই পণ্যেরই বিজ্ঞাপন চলে এসেছে আপনার স্মার্টফোনে? অধিকাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরই এমন অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু বিষয়টি আমাদের ভালো লাগার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল সবসময়, অথবা আমরা প্রযুক্তির নিছক একটি নিদর্শন হিসেবেই দেখেছি। কিন্তু মূলত এর পিছনে লুকিয়ে আছে অতিবুদ্ধিমত্তা সমৃদ্ধ কিছু অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার। যা কিনা আপনার তথ্য সংগ্রহের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই বরং আপনি কি কথা বলছেন সেটাও বুঝতে সক্ষম। 

বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণের নাম Artificial Intelegence। কেবল প্রযুক্তিই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক, অর্থনৈতিক নানা ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী স্মার্টফোন ও ব্যক্তিগত কম্পিউটারও এর ব্যতিক্রম নয়। আজকের দিনে স্মার্টফোন আমাদের নিত্যসঙ্গী। সম্ভবত আমরা সবচেয়ে বেশি সময় কাটাই আমাদের স্মার্টফোনের সাথে। আর কাটাবেনই বা না কেন? কতই না আয়োজন নিয়ে আপনাকে এন্টারটেইন করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ব্যবহার করা যায় লক্ষ লক্ষ অ্যাপ্লিকেশন। গ্রাহককে ত্রিমাত্রিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে চলে এসেছে নানা ধরণের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সুবিধাযুক্ত অ্যাপ।

ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের বিষয়ে আমরা কম বেশি সবাই জানি। এদের মধ্যে অ্যাপলের সিরি ও গুগল হোমের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে মাইক্রোসফটের করটানা ও স্যামসাং এর বিক্সবি। ব্যবহারকারীর ভয়েস কমান্ড থেকে এরা নানা রকম কাজ সম্পাদন করতে পারে। প্রতিটি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট কিছু নির্দিষ্ট কী-কম্যান্ডের মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে থাকে। যেমন গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর জন্য কি কম্যান্ড “ওকে গুগল”, অ্যাপল সিরি’কে একটিভ করতে বলতে হয় “হেই সিরি”। এই কি-ওয়ার্ডগুলো শোনার সাথে সাথে এরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর নির্দেশনা নেওয়া শুরু করে। 

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কাজ কেবল কথা শোনা ও আদেশ পালন করার মাঝেই সীমাবদ্ধ না। এই প্রযুক্তি বর্তমানে এমন কিছু ফিচার আমাদের সামনে নিয়ে হাজির হচ্ছে যা ইতিপূর্বে অসম্ভব বলে মনে হত। এখন ভাবনার বিষয় হচ্ছে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ছাড়াও আরো অনেক এআই সম্বলিত সিস্টেম রয়েছে যা নিয়মিত আমাদের কথা শুনছে। অন্যদিকে স্মার্টফোনে ব্যবহারের জন্য রয়েছে লক্ষ লক্ষ অ্যাপস। এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে যা বিনা অনুমতিতে ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে আমাদের কথা শুনে যাচ্ছে। অনেক সময় আমরা নিজেরাও নানা দিক উপেক্ষা করে এসব অ্যাপকে আমাদের কথা শোনার অনুমতি দিয়ে দিচ্ছি।

অনেক অ্যাপ্লিকেশন স্মার্টফোনে ইনস্টল করার সময় বা ওপেন করার সময় দেখবেন এটি আপনার স্মার্টফোনের গ্যালারি, মাইক্রোফোন ইত্যাদিতে এক্সেস অনুমতি চায়। আমরা অনেকেই ঝোঁকের বশে সব ‘ওকে’ ও করে দেই। এভাবে বিভিন্ন অ্যাপ আমাদের ফোনের মাইক্রোফোন এক্সেস নিয়ে আমাদের কথোপকথন থেকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে। 

মানুষের গলার আওয়াজ বিশ্লেষণের জন্য ইতোমধ্যে নানা গবেষক কাজ করে যাচ্ছেন। এগুলোকে অডিও অ্যানালাইসিস অ্যালগরিদম সম্পর্কে বলা হয়। এসব অ্যালগরিদম মানুষের কথা থেকে তার মানসিক অবস্থা বুঝতে সক্ষম হয়। উক্ত ব্যক্তি মানুসিক বিষণ্ণতায় ভুগছে কিনা, মাদকাসক্ত কিনা, এমন কি দাম্পত্য কলহে জর্জরিত কিনা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য বের করে আনতে পারে এসব আধুনিক এআই সিস্টেম। তবে শুধুমাত্র মানুষের মুখের আওয়াজ নয় তার পারিপার্শ্বিকের নানা শব্দ থেকে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এতটা সূক্ষ্মভাবে শব্দ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার পুরো কৃতিত্ব যায় মেশিন লার্নিং এর কাছে। মূলত এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারই একটি ধরন। মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে কোটি কোটি তথ্য বিশ্লেষণ করা যায়। এসব তথ্যের মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় তারা নানা মিল বা প্যাটার্ন খুঁজে বের করে। এই প্যাটার্ন অনুযায়ী অ্যালগরিদমগুলো নিজেরাই নিজেকে হালনাগাদ করে এবং তাদের ফলাফল হয় নির্ভুল ও নিখুঁত। 

মূলত মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা সম্পর্কে জানার জন্যই বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিবিদদের সাহায্যে এরকম অ্যাপ্লিকেশন বানাচ্ছে। প্রায় প্রত্যেক বড় বড় ইন্টারনেট সুবিধাযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে কিছু বিজ্ঞাপনী সংস্থা কাজ করে। একজন নির্দিষ্ট গ্রাহক কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে নির্দিষ্ট কী কী পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখবে তা বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো এভাবে নির্ধারণ করে ফেলে। এই বিপণন নীতি এখন প্রায় সব প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স ওয়েবসাইট ব্যবহার করছে। গুগল অ্যাডস এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ যার নজরদারির ফলেই আপনি কোনো বিদেশী ওয়েবসাইটে দেশী পণ্যের বিজ্ঞাপণ দেখতে পান। 

কিছুদিন আগের একটি জরিপ অনুযায়ী, প্রতি দশটি স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে কমপক্ষে সাতটি অ্যাপ্লিকেশন তৃতীয় কোনো পক্ষের সাথে গ্রাহক তথ্য বিনিময় করছে। অ্যাপগুলো ফোনে ইনস্টল করার পর আলাদা আলাদাভাবে কাজ করে ঠিকই তবে কিছু ক্ষেত্রে এগুলো একত্রিত হয়ে আপনার ব্যক্তিগত জীবনের পরিপূর্ণ চিত্র গঠন করতে পারে। তাই আপনার নিরাপত্তার স্বার্থে সার্টিফাইড এবং বিশ্বস্ত অ্যাপ ব্যবহার করুন। 

লেখক- সালেহীন সাকিব 

Exit mobile version