অর্থনীতি

সফলতার ১০ সূত্র : বিল গেটস1 min read

মার্চ ১৪, ২০১৯ 3 min read

author:

সফলতার ১০ সূত্র : বিল গেটস1 min read

Reading Time: 3 minutes
যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস ম্যাগাজিনে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকায় গত ২২ বছরে টানা ১৭ বছর যার নাম শীর্ষে ছিল, তিনি বিল গেটস। তিনি একাধারে ১৩ বছর ধরে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন টেকজায়ান্ট প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। তিনি পার্সোনাল কম্পিউটার বিপ্লবেরও একজন পথিকৃৎ। বিল গেটস যুক্তরাষ্ট্রের ২য় মহান ব্যক্তি যিনি বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে মোট ২৮ বিলিয়ন ডলার দান করেন।
আজকের আয়োজন- বিল গেটস এর সাফল্যের ১০ সূত্র নিয়ে। চলুন, দেখে নেয়া যাক, তার সাফল্যের ১০ মূলমন্ত্র।
১. শক্ত মনের জোর থাকতে হবে:
মাইক্রোসফট আজ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠান হলেও শুরুর দিকের গল্পটা কিন্তু এমন ছিল না।
মাইক্রোসফট শুরু করার সময় যেসব বন্ধুদের নিয়োগ দিয়েছিলেন, তাদের মাসিক বেতন কোথা থেকে আসবে, সেটা নিয়েই বিচলিত থাকতে হতো তাকে। তবে মাইক্রোসফটের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি খুবই উত্তেজিত ছিলেন। এমনকি তিনি যে বড় একটি ঝুঁকি নিয়েছেন সেটিও তার মাথায় ছিল না। কিন্তু নিজের দক্ষতার ওপর পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই তিনি কাজ শুরু করেন। তিনি মনে করেন, একজন ব্যবসায়ীকে খুবই শক্তিশালী মনের অধিকারী হতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে তাকে এতটাই প্রস্তুত থাকতে হবে যে, বিশ্রাম নেয়ার মানসিকতা থেকেও তাকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিল গেটস জানান, মাইক্রোসফটকে স্বাভাবিক আয়ে পৌঁছতে ৩ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
২. বাজে পরিস্থিতির শিকার হওয়া:
পৃথিবীর অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও প্রচলিত পড়াশুনায় বিল গেটসের আগ্রহ ছিল না। কম্পিউটার নিয়েই তিনি বেশিরভাগ সময় পরে থাকতেন। ফলে যা হবার তাই হলো। অকাশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়লেন তিনি। বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বললেন।
জানালেন, নিজেই কিছু করতে চান। উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবার তার আবদার মেনেও নিলো। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ার ৩৩ বছর পর ২০০৭ সালে সম্মানসূচক ডিগ্রি পান বিল গেটস। সেদিন ভাষণে বিল গেটস বলেন-
“যারা ফেল করেছে, তাদের মধ্যে আমিই সেরা। অবশেষে আমার সিভিতে একটি কলেজ ডিগ্রি যুক্ত হলো।”
অর্থাৎ, বিল গেটস মনে করেন, জীবনে বড় ধাক্কা খাওয়া বা বাজে পরিস্থিতির শিকার হওয়াও সাফল্যের অন্যতম মূলমন্ত্র।
৩. কঠোর পরিশ্রম করুন:
মাইক্রোসফটের শুরুর দিকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কঠোর পরিশ্রম করেছেন বিল গেটস। সেসময়ে বছরে মাত্র দুই সপ্তাহ বিশ্রাম নিতেন তিনি। আর সেই দুই সপ্তাহ তিনি ব্যয় করতেন বই পড়া ও ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার কাজে। তাই বলাই যায়, সাফল্য অর্জনে কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতেই হবে। পৃথিবীর সব সফলতার পেছনেই আছে কঠোর পরিশ্রমের গল্প। বিল গেটসও তার ব্যতিক্রম নন।
৪. ভবিষ্যতকে তৈরি করুন:
ভবিষ্যতের চাহিদার কথা মাথায় রাখুন। প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত আপডেট করুন। নতুন নতুন আইডিয়াকে সামনে নিয়ে আসুন। মাইক্রোসফট অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে বিল গেটস তখনকার বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত চাহিদা মিটিয়ে ছিলেন। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোফট এক্সেলের মতো শক্তিশালী অফিস এপ্লিকেশন সফটওয়ার ছিল বাজারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
৫. নিজের কাজ উপভোগ করুন:
আপনি যে কাজটি করছেন সেটি আপনাকে উপভোগ করতে হবে। বিল গেটসের মতে, স্মার্ট মানুষদের সঙ্গে কাজ করা, সাফল্য নিয়ে চিন্তা করা, নতুন সমস্যা নিয়ে কাজ করা খুবই উপভোগ্য একটা ব্যাপার। আর আপনি নিজের কাজকে যদি উপভোগই করতে না পারেন, তবে আপনি কাজকে ভালোবাসতে পারবেন না। আর কাজকে ভালোবাসতে না পারলে সফল হওয়া মোটামুটি অসম্ভব। তাই কাজকে ভালবাসুন, নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন।
৬. কার্ড খেলুন:
বিল গেটসের প্রিয় খেলা কার্ড। তার মতে, ব্রিজ খেলার বেশ কিছু ভালো দিক রয়েছে। এই খেলা আপনাকে চিন্তা করতে সাহায্য করে। যে ব্যক্তি ব্রিজে ভালো সে অন্য অনেক কিছুতেও ভালো।
৭. অন্যের কাছে পরামর্শ চান:
যেকোনো ব্যবসায়ীক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে, অন্যের কাছে পরামর্শ চাওয়ার ব্যাপারে, বিল গেটস এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
“আমি আমার বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। আমি ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার স্ত্রী মেলিন্ডার সঙ্গে কথা বলেছি। আমার আশেপাশে অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা আমাকে জানেন। আমি অনেক সময় কোনো কিছু নিয়ে খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে যাই। আবার অনেক কিছু নিয়ে ভাবতেও ভুলে যাই। তখন আমার বন্ধু ও উপদেষ্টারা আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেন। ”
হতে পারে আপনার কাছে কিছু আইডিয়া আছে যেটা আরেকজনের কাছে নেই। আবার, আরেকজনের কাছে যে আইডিয়াটা আছে সেটা হয়তবা আপনার কাছে নাই। তাই কাছের লোকদের সঙ্গে আলাপ করা ও পরামর্শ চাওয়া বুদ্ধিমান ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক।
৮. ভালো মানুষ নিয়োগ দিন:
এমন ব্যক্তিদেরই আপনি আপনার ব্যবসায় সংযুক্ত করুন, যাদেরকে আপনি পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে পারেন। পল অ্যালেনের সঙ্গে বিল গেটসের পার্টনারশিপে যাওয়া, বা বন্ধুদের নিয়োগ দেয়ার পেছনে তাদের উপর বিল গেটসের আস্থাই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। তিনি মনে করেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন, যাদের সঙ্গে আপনার কমন ভিশন অাছে, যদিও আপনাদের দক্ষতার ক্ষেত্র ভিন্ন হতে পারে। বিল গেটস বিশ্বাস করেন, কোনো ব্যবসায় সঠিক পার্টনার খুঁজে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একটা প্রতিষ্ঠানে কাস্টমারদের পরে সবচেয়ে বড় সম্পদ হল কর্মচারীরা। তাদের পরিশ্রমের বলেই কোম্পানিটি ধীরে ধীরে সবল হতে শুরু করবে। তাই নিয়োগের সময়ও অবশ্যই সৎ ও পরিশ্রমী লোক নিয়োগ দিতে হবে।
৯. গড়িমসি করবেন না:
বিল গেটস বলেন, “আমি যখন কলেজে ছিলাম,পরীক্ষার প্রস্তুতি বা ক্লাস ধরার ক্ষেত্রে আমি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম। কিন্তু যখন আমি ব্যবসায় নামলাম, সম্পূর্ণ পাল্টে গেলাম। ”
তাই কোনো কাজেই আজ না কাল, কাল না পরশু এমন করা যাবে না। যখন যে কাজটি করার প্রয়োজনবোধ করবেন তখনই সেটি করে ফেলবেন।
১০. নিজের মধ্যে রসবোধ জীবিত রাখুন:
আপনি যদি নিজের জীবনের প্রতি রসবোধ খুঁজে না পান তাহলে আপনার জীবন বিমর্ষ হয়ে উঠবে। আর যদি রসবোধ খুঁজে পান তাহলে আপনার কাছে সকল কিছুই করা সম্ভব বলে মনে হবে। তাই নিজের রসবোধ জীবিত রাখুন। তাই বলি, লেগে থাকুন, হাসতে থাকুন, নিজের ভবিষ্যতকে গড়তে থাকুন।
Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *