বাংলাদেশ

বিপাকে মেনন1 min read

অক্টোবর ২৩, ২০১৯ 2 min read

author:

বিপাকে মেনন1 min read

Reading Time: 2 minutes

একজন ঝানু রাজনীতিবিদ হিসেবে রাশেদ খান মেননের বেশ পরিচিতি হয়েছে।কখন কোথায় কি বলতে হবে দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় মেনন তা ভালো করেই জানেন। কিন্তু সকল ঝড়ের পূর্বাভাস শুধু অভিজ্ঞতা দিয়ে আঁচ করা যায়না। যেমনটি মেনন আঁচ করতে পারেননি গত ১৯ অক্টোবর ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলা শাখার সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে তার বক্তব্য দেয়ার আগে।

সেই সম্মেলনে মেনন বলেন, “একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এর বড় সাক্ষী আমি নিজেই। আজ মানুষ তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমি নিজেও আন্দোলন–সংগ্রাম করেছি। অথচ আজ সেই ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারছে না। এমনকি উপজেলা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোটের অধিকার হারাচ্ছে মানুষ।”

স্বাভাবিকভাবেই মেননের এই বক্তব্য দেশের রাজনীতি সচেতন মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ  করে। প্রতিপক্ষ দল বিএনপি মেননের বক্তব্যে আনন্দিত হলেও, সরকার ও ১৪ দলীয় জোট যে এতে বিব্রত তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “নিশিরাতের সরকারের সঙ্গী রাশেদ খান মেনন যে কোনো কারণেই হোক, এবার নিজের মুখে মহাসত্যটি স্বীকার করেছেন।”

রিজভীর মতো আরও অনেকেই মেননের এই সত্য বচনের আকুণ্ঠ প্রশংসা করলেও, নির্বাচনের দীর্ঘ ১০ মাস পরে কেন তিনি হঠাৎ প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন সেই প্রশ্নও তোলেন  অনেকে। যেমনটি তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কাদের বলেন, ‘তিনি (মেনন) যদি বলেই থাকেন, আমার প্রশ্ন হচ্ছে এত দিন পরে কেন? এই সময়ে কেন? নির্বাচনটা তো অনেক আগে হয়ে গেছে। আরেক প্রশ্ন সবিনয়ে, মন্ত্রী হলে কি তিনি এ কথা বলতেন? আর কোনো কিছু বলতে চাই না।’

বরিশালের সেই সম্মেলনে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি রাজধানীর ক্যাসিনো ব্যবসা ও বিদেশে অর্থ পাচার নিয়েও নীতি কথা বলেন মেনন। তিনি বলেন, “ক্যাসিনো পরিচালনাকারীরা শত শত কোটি টাকা কামাই করে ও খেলাপি ঋণের টাকা বিদেশে পাঠিয়ে সেকেন্ড হোম বানিয়েছে। দেশের কোটি কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।”

পাঠক আপনারা হয়ত ইতিমধ্যে অবগত আছে যে, কাসিনো ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র “ইয়াংম্যানস ক্লাব” এর সভাপতি ছিলেন কিন্তু এই মেননই। যদিও তিনি দাবি করেছেন ক্যাসিনো ব্যবসার সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্যে ক্যাসিনো ব্যবসার সুবিধাভোগী হিসেবে বরাবরই উঠে এসেছে তার নাম।

দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা  “জুয়ার টাকায় বিলাসী জীবন, জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে মেননকে” শিরোনামে একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায় র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট যাদের নাম উল্লেখ করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন রাশেদ খান মেনন। সম্রাট প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা মেননকে দিতেন। ইয়াংম্যানস ক্লাব থেকে উদ্ধার করা চাঁদাবাজির খাতায় মেননের নাম ৫ নাম্বার সিরিয়ালে ছিল। গত জাতীয় নির্বাচনে মেননকে দেড় কোটি টাকা দেয়ার পাশাপাশি, মেননের নির্বাচনী পোষ্টার ছাপানো, মাইকিং করার সকল ব্যবস্থাও সম্রাট করে দিয়েছিল। এছাড়া ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের আরেক নায়ক “সন্ত্রাসী খালেদকে যুবলীগের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন মেনন” বলে আরেকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুগান্তর

সব মিলিয়ে রাশেদ খান মেনন এবার বেশ শক্ত একটি প্যাঁচের মধ্যে পড়েছেন। যদিও এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি থাকাকালে মেনন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ভিকারুননিসা ও আইডিয়াল কলেজে ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মেননের শক্তিশালী লবিং এর কাছে সে যাত্রায় এসব নিয়ে তেমন কোন খবর আসেনি। তাই এবার ক্যাসিনো কাণ্ডের জল কত দূর গড়ায় সেটিই এখন দেখার বিষয়।

লেখক- হাসান উজ জামান 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *