বিশ্ব মতামত

যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বিভাগে যোগদান সহজ!1 min read

মার্চ ৭, ২০১৮ 3 min read

যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বিভাগে যোগদান সহজ!1 min read

Reading Time: 3 minutes

যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বাহিনীর একজন সদস্য হওয়াটা অনেকটাই সহজ একটি প্রক্রিয়া মনে হয়েছে আমার কাছে। কেননা, আমি নিজে মেয়ে, শারীরিকভাবে কিছুটা মোটা এবং কম উচ্চতার হওয়া স্বত্বেও প্রায় আমার চাকুরীটা হয়েই গিয়েছিল। হ্যাঁ, যাদের গ্রিনকার্ড আছে এবং যারা চ্যালেন্জ নিতে চান, তাদের জন্যেই লিখছি নিজের অভিজ্ঞতার কথা।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি দেবার আগে স্বপ্ন ছিল অনেক কিছুই করবো। পারিবারিক অভিবাসনের ফলে এখানে চলে আসলাম ঠিক-ই গ্রিনকার্ড নিয়ে, কিন্ত এসে দেখি এখানে তো কেউ আমার জন্য ফুলের ডালা নিয়ে অপেক্ষা করছে না। বরং জীবন ধারণের তিক্ত বাস্তবতাই টের পাচ্ছিলাম দিন দিন। হাতের কাছে টুকটাক কাজের ব্যবস্থা আছে যার প্রতিটিই নিম্ন আয়ের, এই দেশীরা সেটাকে বলে অড জব। তো এই অড জব করে কতদিনই বা টিকে থাকবো? তাই একদিন, ইউএস আর্মি’র ওয়েবসাইট এ গেলাম কৌতুহল বসত। দেখলাম, ওদের স্থানীয় নিয়োগকেন্দ্র আমার বাসা থেকে মাত্র ১০ টি রাস্তার পরেই।

পরের দিন অফিসে চলে গেলাম, একটু ভয় ভয় করছিল যদিও। বললাম আমি সৈনিক হিসেবে যোগ দিতে চাই। আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমার গ্রীন কার্ড আর হাইস্কুল ডিপ্লোমা আছে কিনা? ব্যাস এটুকু । উচ্চতা, বয়স কোন ব্যাপার না, এরা শুধু দেখবে বয়স ও উচ্চতার সাথে ওজন এর সামন্জস্যপূর্ণ  কিনা। আমার ওজন এবং উচ্চতা মেপে বললো আমার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ২৫ পাউন্ড বেশি। আমি হেসে বললাম ২৫ পাউন্ড কমানো তো প্রায় অসম্ভব আমার জন্য। ওরা আমাকে আশ্বস্ত করলো যে ২৫ পাউন্ড ওজন খুব সহজে তিন মাসে কমাতে পারবো যদি ওদের রুটিনে চলি। আমি বেশি কিছু না ভেবেই বললাম, বললাম রাজি।

নিউইয়র্ক পুলিশে যোগ দেয়ার সময়ে এক সহকর্মীর সাথে পাপিয়া শারমিন।

আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি ফুল টাইম /পার্ট টাইম কিভাবে কাজ করতে চাই? আমি একটু অবাক হলাম , আর্মিতে আবার ফুল টাইম/ পার্ট টাইম কি? এতক্ষনে লোকটা আমাকে বলে দিয়েছে সবাই তাকে সার্জেন্ট ভি বলে ডাকে। সার্জেন্ট ভি আমাকে বললো ফুল টাইম হলে বেতনের পাশাপাশি পড়ার খরচ, বাসাভাড়া,খাবার খরচ পাবো আর আমেরিকার  বাইরে যেতে হতে পারে যে কোন সময়। আর পার্ট টাইম হলে বেতনের বাইরে অন্য কোন সুবিধা পাব না , শুধু নিউইর্য়কে কাজ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘন্টার চাকুরী।

একদিন সার্জেন্ট কে জিজ্ঞেস করলাম বিবাহিতরা জয়েন করতে পারে কি না? আমার প্রশ্ন শুনে বিরক্তির সাথে বললো, হ্যাঁ কেন নয়? আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম অবিবাহিত কেউ জয়েন করলে কত দিন পর বিয়ের পার্মিশন পায়? আমি প্রশ্ন করে বোকা হয়ে গেলাম। আর্মিতে জয়েন করার পরের দিনও বিয়ে করতে পারবেন এটা আপনার ইচ্ছা। আমি বাংলাদেশ আর্মিতে জয়েন করার শর্ত গুলো বললাম। বিয়ের জন্য অনুমতি নিতে হয়, এটা শুনে সার্জেন্ট শুধু জিগেস করলো  “তুমি কি মজা করছো?”। একজন তার উচ্চতা আর বৈবাহিক অবস্থার জন্য দেশের হয়ে কাজ করার সুযোগই পাবে না এটা কেমন কথা!

সার্জেন্ট ভি সাহেব, ঐ দিন ই একটা পরিক্ষা নিল অংক আর ইংরেজি এর উপর। আর বলে দিল ওজন কমলে চুড়ান্ত পরীক্ষা নেবে। বাসায় কিছু না জানিয়েই আর্মি রুটিন ফলো করতাম। ছুটির দিনে নিয়মিত ওদের সাথে মাঠে যেতাম।আমাদের দলে ২০ জন ছিল। আমি বংলাদেশি,একজন আর একজন ইন্ডিয়ান , কোরিয়ান , স্পানিশ আর কিছু আফ্রিকান আমেরিকান। তো কাজ হলো, আমি ২ মাসে কমিয়ে ফেললাম ২০ পাউন্ড ওজন।

ই্‌উএস আর্মির নিয়োগ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী সার্জেন্ট তখন আমাকে একটি US ARMY লেখা টি শার্ট আর টাওজার দিল। অর্থাৎ টেনিং প্রাপ্ত ২০ জনের আর্মিতে যোগ দেয়ার প্রাথমিক ধাপটি আমরা পার করেছি। এখন বাদ বাকী আনুষ্ঠানিকতা এবং যোগদান পরবর্তী প্রশিক্ষন এবং অন্যকিছু।

টি শার্ট পাওয়ার পর আমার বাসায় বললাম আমি আর্মিতে জয়েন করবো। বাসার সবাই হেসে উড়িয়ে দিল। কয়েকজন তো বলেই দিল, আমার মত মোটা আর খাটো মেয়েকে আর্মিতে নেবে কোন হিসেবে? যদিও তারা ২০ পাউন্ড কমে যাওয়া বিষয়টি খেয়াল করেছে। টি শার্ট দেখে বিশ্বাস করলো আমি সিরিয়াস।

যাই হোক, একজন মেয়ে হিসেবে আমি আমার আগ্রহের সীমাটাকে বাড়াতে গিয়ে আর্মি’তে যোগ দিয়ে দেশ সেবার কাজ করতে চেয়েছিলাম। তবে, সামর্থ আর বাস্তবতার সীমারেখাটাতে মাড়াতে পারিনি। অর্থাৎ, কিছু পারিবারিক আপত্তি আর পিছুটান এর কারনে শেষ মেষ আমার যোগ দেয়া হয়নি আর্মিতে। আমারা যারা ২০ একত্রে অনেকদিন ট্রেনিং করে ওজন কমিয়েছিলাম আর প্রস্তুতি নিয়েছিলাম তাদের অনেকেই এখন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্য। আর আমাদের সেই সার্জেন্ট আমার যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত শুনে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন যদিও, তবে তিনি আমাকে বলে রেখেছেন, যখনই আমি মনস্থির করবো, তখনই যেন যাই আর্মিতে যোগ দিতে। আমি সেই সুযোহ হয়তো কোন একদিন নেব-ই ভবিষ্যতে।

লেখক- পাপিয়া শারমিন,  নিউইয়র্ক পুলিশের ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশী অভিবাসীদের একজন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *