বিশ্ব

মালালা ইউসুফজাইঃ শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন তিনি?1 min read

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০ 3 min read

author:

মালালা ইউসুফজাইঃ শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন তিনি?1 min read

Reading Time: 3 minutes

গত দশকের বহুল আলোচিত মুখ, মালালা ইউসুফজাই। ২০১৯ সালের শেষ ভাগে জাতিসংঘ তাদের এক ঘোষণায় নারী শিক্ষা এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় মালালার অবদানকে স্মরণ করে তাকে গত দশকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তরুণীর মর্যাদা দিয়েছে।

২০১৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে মালালা ইউসুফজাই নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। তবে মালালার নোবেল প্রাপ্তি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ফেসবুক থেকে শুরু করে জাতীয় পত্রপত্রিকা সবখানেই পক্ষে বিপক্ষে তুমুল বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। কারো চোখে মালালার নোবেল প্রাপ্তি ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের প্রোপাগান্ডার ফসল, কারো কাছে এটি ছিল পশ্চিমা পুঁজিবাদী চাল। আবার অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মতো এমন কি করেছেন মালালা ইউসুফজাই? শুধুমাত্র তালিবান জঙ্গিদের থেকে গুলিবিদ্ধ হওয়াই মালালার নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির একমাত্র যোগ্যতা এমন ধারণা মনে ধারণ করে চলা মানুষের সংখ্যা এখনও নেহায়েত কম নয়।

বারাক ওবামা, হেনরি কিসিঞ্জারের মতো ব্যক্তিত্বদের শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তি এই পুরস্কারকে বিতর্কিত করেছে, মানুষের মনের মধ্যে এই পুরস্কারের গ্রহণযোগ্যতাকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। এমনকি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে মালালার চেয়ে যোগ্য অনেকেই এই পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এটিও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে মালালা যে শুধুমাত্র গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণেই নোবেল পাননি এটি কতজন মানতে রাজি আছেন? হতে পারে মালালার অবদান শান্তিতে নোবেল পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়, কিন্তু মালালা গুলি খাওয়ার আগে থেকেই চিলড্রেন রাইটস আক্টিভিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন এটি কি সবার জানা আছে?

১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াত এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছেন মালালা। সোয়াত আফগানিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা। মালালা যখন বেড়ে উঠছিলেন সেসময় সোয়াতের মতো পাকিস্তানের আফগান সীমান্ত ঘেঁষা পশতুন এলাকাগুলো আফগানী তালিবানদের দখলে চলে যাচ্ছিল। তালিবানরা ফতোয়া দিয়ে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছিল। তারা বাধ্যতামূলকভাবে মেয়েদের নিকাব, বোরখা পরিধান করার নিয়ম চালু করেছিল ।

মেয়েদের জন্য এমন বিরুদ্ধ পরিস্থিতে স্থানীয় মানুষ কি ভাবছে সেটি জানতে সেসময় বিবিসি এসব এলাকার স্কুলের মেয়ে শিক্ষার্থীদের ব্লগিং করার প্রস্তাব দেয়। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা কেউ রাজি না হওয়ায় স্বভাবগতভাবে বিদ্রোহী ও সোচ্চার মালালা তালিবানিদের কৃতকর্মের চিত্র বিশ্ববাসীকে জানাতে বিবিসির ব্লগে লিখতে রাজি হন। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে “I am afraid” শিরোনামে মালালার প্রথম লেখা বিবিসির ব্লগে প্রকাশিত হয়। মালালার বয়স ছিল তখন মাত্র ১১ বছর। মালালা লিখতেন “গুল মাকাই” ছদ্ম নাম নিয়ে।

ছদ্মনামে লিখলেও মালালার পরিচয় গোপন থাকে নি। তিনি ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেয়ার পাশাপাশি অনেক অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করা শুরু করেন। এমনকি নিউইয়র্ক টাইমস সেসময় তাকে নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করতে আগ্রহী হয়েছিল। মালালা গুলিবিদ্ধ হওয়ার এক বছর আগে ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ডেসমন্ড টুটু তাকে “ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন পিস প্রাইজ” এর জন্য মনোনীত করেছিলেন।

মালালার এমন খ্যাতিই তালিবানিদের গাত্রদাহের কারণ হয়ে ওঠে। নারী শিক্ষার পক্ষে প্রচারণা এবং পাকিস্তানকে “সেকুলার” দেশে পরিণত করার “পুরস্কার” হিসেবে তালেবানিরা তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০১২ সালের ৯ অক্টোবর স্কুল থেকে ফেরার পথে তালিবানিদের দ্বারা আক্রান্ত হন মালালা। স্কুল বাসে তাকে চিহ্নিত করে তিনটি গুলি ছুঁড়ে তালিবানিরা। এই ঘটনায় কায়নাত রিয়াজ ও শাজিয়া রমজান নামক আরো দুই জন আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে টানা ৪৯ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে মালালা আবার সবার মাঝে ফিরে আসেন। সুস্থ হয়ে আবার চালিয়ে যান নারীদের অধিকার নিয়ে নিজের যুদ্ধ।

এখানে একটি কথা উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মালালার বাবা জিয়াউদ্দিন ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি মালালার শিক্ষা এবং স্বাধীনতার ব্যাপারে ছিলেন যথেষ্ট উদার ও সচেতন। বাবার কারণেই মালালার ইংরেজি শিক্ষা এবং লেখালেখি করা অন্যান্যদের চেয়ে সহজ ছিল। মালালা ২০১৩ সালে প্রকাশিত তার “I am Malala”  বইটিতে লিখেছিলেন-

I told my parents that no matter what other girls did, I would never cover my face like that. My face was my identity. My mother who is quite devout and traditional, was shocked. Our relatives thought I was very bold (some said rude). But my father said, I could do as I wished. “Malala will live as free bird” he told everyone.

গঠনমূলক বিতর্ক যেকোন জাতির জন্য কল্যাণকর। তাই মালালা ইউসুফজাইয়ের নোবেল প্রাপ্তির বিষয়ে নানা মুনির নানা মত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে সেই কম বয়সে সোয়াতের মতো এলাকায় তালিবানদের হুমকি উপেক্ষা করে নারী শিক্ষার পক্ষে বারবার নিজের আওয়াজ তোলা মালালাকে ছোট করে দেখা কি স্বাভাবিক?

লেখক- হাসান উজ জামান 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *