বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মহাবিশ্বের পাঁচটি অদ্ভুত গ্রহ!1 min read

এপ্রিল ২৪, ২০২০ 4 min read

author:

মহাবিশ্বের পাঁচটি অদ্ভুত গ্রহ!1 min read

Reading Time: 4 minutes

এই মহাবিশ্ব এতটাই বড় যে এর সঠিক আকার সম্পর্কে আমরা আজ পর্যন্ত কোন ধারণাই করতে পারিনি। আমাদের পৃথিবীতে যে পরিমাণ ধুলোর কণা রয়েছে, মহাবিশ্বে তার চেয়েও বেশি পরিমাণে গ্রহ আর নক্ষত্র রয়েছে। আজকের এই লেখায় আমরা কথা বলবো এই বিশাল মহাবিশ্বে আবিষ্কৃত হওয়া কিছু অদ্ভুত এবং রহস্যময় গ্রহ সম্পর্কে। যেগুলো আপনাকে বেশ অবাক করবে বৈকি!

ডায়মন্ড প্ল্যানেট 

এই অদ্ভুত গ্রহটির আসল নাম হল “55 Cancri E”, এই গ্রহটির সবচাইতে অবাক করা এবং মজার বিষয় হল পুরো গ্রহটি হীরের তৈরি! ২০০৪ সালে আবিষ্কৃত এই গ্রহটির ওজন আমাদের পৃথিবীর তুলনায় প্রায় তিনগুন বেশি। আবিষ্কার হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে খেয়াল করেন যে এই গ্রহটির প্রায় এক তৃতীয়াংশ সলিড হীরে দিয়ে তৈরি। ঠিক যেমনটা আমরা জানি যে, ডায়মন্ড অর্থাৎ হীরে মূলত কার্বন থেকেই তৈরি হয়ে থাকে, আর এদিকে এই গ্রহটির বেশিরভাগ অংশই কার্বন। বিজ্ঞানীদের ধারণা কার্বনের তৈরি এই গ্রহটির মধ্যে মহাকর্ষের চাপের কারণে কার্বনের অনেক অংশ হীরেতে পরিবর্তিত হয়ে গেছে।  এই অদ্ভুত গ্রহটির নিজস্ব একটি সূর্য রয়েছে, আর সেই সূর্যের নাম “55 Cancri A”। এই সূর্যটি ডায়মন্ড গ্রহের খুব কাছাকাছি অবস্থান করার কারণে এ গ্রহের তাপমাত্রা প্রায় ১৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের খুব কাছাকাছি।

হীরে আমাদের পৃথিবীতে খুব দামী একটি পদার্থ আর সেদিক থেকে হিসেব করলে এই গ্রহটির মূল্য প্রায় ২৭ ননিলিয়ন ডলারের মত। এর সঠিক মূল্যটি উপলব্ধি করার জন্য ননিলিয়নের হিসেবটা বুঝতে পারা খুব জরুরী। এক ননিলিয়ন সংখ্যাটির মধ্যে ১ এর পর ত্রিশটি শূন্য থাকে, আর তাহলে বুঝতেই পারছেন দামের দিক থেকে হিসেব করলে এই গ্রহটি ঠিক কতটা মূল্যবান!

কেপলার ৪৫২–বি

কেপলার ৪৫২–বি

২০১৫ সালে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা এই কেপলার ৪৫২–বি নামক গ্রহটি আবিষ্কার করে। এছাড়া আমাদের পৃথিবীর মতোই এই গ্রহটির নিজস্ব একটি সূর্য আছে আর অবাক করার মতো তথ্যটি হল সূর্য থেকে আমাদের পৃথিবীর দূরত্ব ঠিক যতটুকু, কেপলার ৪৫২–বি এর সাথে তার নিজস্ব সূর্যের দূরত্বও ঠিক ততটুকু। আর বিজ্ঞানীরা এই গ্রহটির আবহাওয়া দেখে খুবই অবাক হয়েছিলেন, কেননা এই গ্রহে আমাদের পৃথিবীর মতোই পানি, মাটি এবং বাতাস পাওয়ার তীব্র সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়ার এই অদ্ভুত মিলের কারণে এই গ্রহটিতেও প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। মজার ব্যাপার হল, পৃথিবীর সাথে অনেক সাদৃশ্যতা থাকার কারণে এই গ্রহটিকে অনেকে “পৃথিবী ২.০” নামে নামকরণ করেছেন।

সূর্যকে একবার পুরোপুরি ঘুরে আসতে আমাদের পৃথিবীর সময় লাগে প্রায় ৩৬৫ দিনের মত। অপরদিকে এই কেপলার ৪৫২–বি নামক গ্রহটি তার নিজস্ব সূর্য “জে-২” কে ঘুরে আসতে সময় নেয় প্রায় ৩৮৫ দিন। অর্থাৎ এই গ্রহটিতে এক বছর পূর্ণ হতে সময় লাগে প্রায় ৩৮৫ দিনের মতো। এছাড়া আমাদের সূর্য প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর পুরানো এবং কেপলার ৪৫২–বি এর সূর্য প্রায় ছয় বিলিয়ন বছরের পুরানো।

যেহেতু এই গ্রহটির আবহাওয়া অনেকটাই পৃথিবীর মতো আর তাই এখানে প্রাণের বিকাশের সম্ভাবনাও প্রবল। কিন্তু এই প্রবল সম্ভাবনা থাকার পরেও আমরা ঠিক কি কারণে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে পারছি না, এই প্রশ্নটি এখন আমাদের মনে জাগতেই পারে। এর কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলেন, পৃথিবী থেকে এই গ্রহটির দূরত্ব প্রায় ১৪০০ আলোকবর্ষ, আর তাই আপনারা হয়ত বুঝেই গেছেন যে বর্তমান প্রযুক্তির মহাকাশযানের এই গ্রহে পৌঁছাতে ঠিক কতটা সময় লেগে যেতে পারে। ভবিষ্যতে যদি আমরা আরো কোন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাকাশযান তৈরি করতে পারি, তাহলে একদিন অবশ্যই এই গ্রহে আমরা পৌঁছে যাব।

এইচ, ডি ১৮৯৭৭৩– বি 

এইচ, ডি ১৮৯৭৭৩– বি

এই অদ্ভুত গ্রহটি সম্পর্কে জেনে আপনারা বেশ অবাক হবেন যে, এই গ্রহে বৃষ্টি হয় ঠিকই তবে সেটা পানির নয় বরং কাঁচের বৃষ্টি! এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেন, এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল সিলিকা দিয়ে তৈরি আর পৃথিবীতে আমরা বালুর মধ্যে সিলিকা পাই। উল্লেখ্য যে কাঁচ মূলত এই সিলিকা দিয়েই তৈরি হয়ে থাকে। এছাড়া এই গ্রহে কাঁচের বৃষ্টি কোন সাধারণ বৃষ্টি নয়, কেননা গ্রহটিতে বাতাসের বেগ ঘণ্টায় প্রায় আট হাজার সাতশ কিলোমিটার।

এই অদ্ভুত গ্রহটির তাপমাত্রা প্রায় নয়শ ত্রিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। আর গ্রহের উচ্চ তাপমাত্রার কারণেই বাতাসের সিলিকার কণাগুলো গলে কাঁচে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

গ্লিয়েস ৪৩৬–বি 

গ্লিয়েস ৪৩৬–বি

ডায়মন্ড প্ল্যানেটের সাথে সাথেই ২০০৪ সালে এই গ্রহটিও আবিষ্কৃত হয়েছিল। গ্রহটির অদ্ভুত বিষয় হল পুরো গ্রহটি আগুনের মধ্যে জলতে থাকা বরফ! শুনতে একটু অবাক লাগারই কথা যে, পুরো গ্রহটি বরফ দিয়ে তৈরি হওয়ার পরেও এটা কীভাবে আগুনের মধ্যে জ্বলছে! অবাক লাগলেও এই গ্রহটির ক্ষেত্রে এই তথ্যটিই একমাত্র সত্য।

আর এই গ্রহটির তাপমাত্রা প্রায় ৪৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অর্থাৎ পুরোপুরি বরফে ঢাকা এই গ্রহটির তাপমাত্রা অতিশয় গরম। আর এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেন, গ্রহটির মহাকর্ষ খুবই প্রবল। ঠিক একারণেই উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বরফ যদি গলেও যায় তবু সে বাষ্প উপরের দিকে উঠতে পারে না বরং আবারও গ্রহটির দিকেই ধাবিত হতে থাকে এবং পুনরায় এটা বরফে পরিণত হয়ে যায়। পুরো প্রক্রিয়াটি এভাবে চলতেই থাকে আর যার ফলে বরফের তৈরি এই গ্রহটি আগুনে জ্বলছে লক্ষ কোটি বছর ধরেই! এছাড়া এই গ্রহটির আকৃতি আমাদের সৌর মণ্ডলে থাকা নেপচুন গ্রহের কাছাকাছি এবং এটি তার নিজস্ব সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় মাত্র দুই দিন পনের ঘণ্টা।

টাইটান 

টাইটান

এতক্ষণ ধরে যতগুলো গ্রহের কথা আমরা বলছিলাম সেগুলো সবগুলোই আমাদের সৌর জগত থেকে অনেক অনেক দূরে অবস্থিত। কিন্তু এখন যে গ্রহটির কথা বলতে যাচ্ছি সেটা আমাদের সৌর জগতের মধ্যেই রয়েছে। এই টাইটান গ্রহটিকে অনেকে শনি গ্রহের চাঁদও বলে থাকেন। আমাদের পৃথিবীর যেমন চাঁদ রয়েছে ঠিক তেমনই শনি গ্রহের এই চাঁদটি হল টাইটান।

এই গ্রহটির আবহাওয়ার ঘনত্ব এতই বেশি যে ২০০৫ সালের আগে বিজ্ঞানীরা বুঝতেই পারছিলেন না গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে ঠিক কি কি রয়েছে। ২০১৫ সালের পর বিজ্ঞানীরা এই গ্রহটি সম্পর্কে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য আবিষ্কার করেন। এই গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর মতোই নদী নালা দিয়ে ভর্তি। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল এই গ্রহের তাপমাত্রা এতটাই ঠাণ্ডা যে সবকিছু জমে বরফ হয়ে আছে। এই গ্রহের তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ১৭৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস!

এই গ্রহের প্রাকৃতিক মিথেন গ্যাস বাষ্প আকারে নেই বরং তরল হয়ে আছে। আর এতক্ষণ ধরে যে নদী নালার কথা বলছিলাম সেগুলো সব এই তরল মিথেন গ্যাসের তৈরি! আর এখানকার বায়ুমণ্ডলে হওয়া বৃষ্টি এবং মেঘও এই মিথেন গ্যাসেরই তৈরি।

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা কেবলমাত্র এই গ্রহের ২৪ শতাংশ জায়গা সম্পর্কেই জেনেছে। আর এই ২৪ ভাগ জায়গাতেই এত পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে যেটা পুরো পৃথিবীতে থাকা প্রাকৃতিক গ্যাসের থেকে প্রায় একশ গুণ বেশি!

লেখক- ইকবাল মাহমুদ ইকু

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *