Site icon Bangla Info Tube

পরীক্ষা ছাড়াই ডাকসু ছাত্রনেতাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি

ডাকসু; Image Source: gonews24.com

Reading Time: 2 minutes

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া নিয়ে কয়েকজন ডাকসু নেতাসহ আরও কয়েকজন ছাত্রকে ঘিরে উঠছে অনিয়মের অভিযোগ।  অভিযুক্ত সবাই ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতা ছিলেন বলে জানা গেছে। নিয়ম অনুযায়ী সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হলে দিতে হয় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। কিন্তু তাদের কেউ এই ধরনের কোন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। সংবাদ মাধ্যমের কাছে বিনা পরীক্ষায় ভর্তি হওয়া বেশ কয়েকজন ছাত্রই পুরো বিষয়টি স্বীকার করেছেন। 

ঠিক কী অনিয়মটি হয়েছিল সেখানে? 

২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্যই ৩৪ জন বর্তমান ও সাবেক ছাত্রনেতা মাস্টার্স অফ ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট নামক একটি প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছিলেন। নির্বাচনে এই ৩৪ জনের মধ্যে সম্পাদক ও সদস্য পদে বেশ কয়েকজন অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই জয় লাভ করেন। 

অথচ এই মাস্টার্স প্রোগ্রামটির সর্বশেষ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল ২০১৮ সালের নভেম্বরে। আর সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী একই বছরের ত্রিশ নভেম্বরে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং পুরো ভর্তি কার্যক্রম জানুয়ারির মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তারা ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শুধুমাত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন সেই প্রোগ্রামে। সবার মনে এই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ার প্রায় মাস খানেক পরে কীভাবে তারা ভর্তি হয়েছিলেন? 

দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণ 

এই ভর্তি কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে প্রোগ্রামের পরিচালক হিসেবে ছিলেন ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ডিন শিবলি রুবাইয়াতুল ইসলাম। পরবর্তীতে তিনি ডাকসুর কোষাধ্যক্ষও হয়েছিলেন। রুবাইয়াতুল ইসলাম এবং এই প্রোগ্রামের সহপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা সংবাদ মাধ্যমকে জানান পুরো বিষয়টি সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তবে তারা এ সম্পর্কে না জানলেও ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি হওয়া এই ৩৪ জনের তালিকা প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রোগ্রামের একজন অফিস সহকারী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এই সকল ছাত্ররা ডিনের সই করা অনুমতিপত্র নিয়েই ভর্তি হওয়ার জন্য অফিসে এসেছিলেন। সেই অনুমতির ভিত্তিতেই তাদেরকে ভর্তি ফরম ও ফিস জমা দিতে দেয়া হয়েছিল। 

সেই প্রোগ্রামের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলেও এই গোলমালের কোন সুরাহা করা সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষকরা জানান কাগজে কলমে ভর্তি হওয়া স্বত্বেও এই সমস্ত ছাত্রনেতাদের কেউই কোন ধরনের ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে আসেননি। সংবাদ মাধ্যমের প্রচেষ্টায় সেই ক্লাসগুলোর হাজিরা খাতা সংগ্রহ করা গেলেও সেখানে পাওয়া যায়নি সেই সব ছাত্রনেতাদের নাম। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোঃ আখতারুজ্জামানকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, পুরো বিষয়টি তারও জানা নেই। যদি এই ধরনের অনিয়ম হয়ে থাকে তবে সেই বিভাগের ডিনের এই বিষয়ে অবশ্যই জানা থাকা উচিৎ বলে তিনি জানান। 

তবে সেই বিভাগের ডিনের কাছে এই বিষয়ে পরবর্তীতে আরো জানতে চাইলে পাল্টা অভিযোগের স্বীকার হতে হয় সংবাদ মাধ্যমকে। ডিনের অভিযোগ, সংবাদ মাধ্যম কোন ধরনের অসৎ উদ্দেশ্যে এই বিষয়ে খোঁজ খবর করছে। তাই তিনি সংবাদ মাধ্যমের সাথে এই ব্যাপারে কোন ধরনের কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। 

এই বিষয়ে আরো খোঁজ খবর করার জন্য সেই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তফসিল ঘোষণা করার পর অনেক ছাত্র নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য সচেষ্ট হয়ে পড়েন। তবে তাদের এবং নির্বাচনের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের ছাত্রত্ব আর কেবলমাত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্যই এই অনিয়মের আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন তারা। 

ডাকসু নির্বাচন ঘিরেই মোট ৩৪ জন এই অনিয়মে অংশগ্রহণ করলেও বেলা শেষে তাদের মধ্যে ২৩ জন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন নি। এদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন প্রায় বছর পাঁচেক আগে। কেবলমাত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্যই যেহেতু এই ভর্তি তাই পরবর্তীতে তাদের কাউকে কোন ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় নি। 

লেখক- ইকবাল মাহমুদ 

Exit mobile version