featured বিশ্ব

নেপাল এবং ভারতের সাম্প্রতিক বিরোধের নেপথ্যে 1 min read

জুন ১৬, ২০২০ 2 min read

author:

নেপাল এবং ভারতের সাম্প্রতিক বিরোধের নেপথ্যে 1 min read

Reading Time: 2 minutes

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ আতঙ্কে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে খারাপ সময় দেখতে হচ্ছে পৃথিবীবাসীকে। আমাদের উপমহাদেশে তো পরিস্থিতি দিনকে দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। কিন্তু এই অবস্থাতেই উপমহাদেশের উত্তর সীমান্তে ভারতের সাথে বিরোধে জড়িয়েছে নেপাল এবং চীন।

আকসাই চীন, সিকিম এবং অরুণাচলের একাংশ নিয়ে চীনের সাথে ভারতের বিরোধ বহু পুরনো। কিন্তু সম্প্রতি নেপালও সীমান্ত নিয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। নেপালের মন্ত্রীসভার সম্মতিতে প্রকাশিত নতুন মানচিত্রে ভারতের সাথে তিনটি বিতর্কিত এলাকা- লেপুলেখ, লিম্পিয়াধুরা ও কালাপানিকে নেপাল তাদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করে। এই ভূখণ্ডটি নেপাল, ভারত এবং চীনের একটি সংযোগস্থল। উল্লেখ্য যে, এই অঞ্চলে চীনের সাথে ভারতের যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা লেপুলেখ গিরিপথ। এসব কারণে এলাকাটিকে কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।

নেপালের সাথে ভারতের সীমান্ত দৈর্ঘ্য ১৭৫১ কিলোমিটার (উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে)। দীর্ঘ এই সীমান্তে নেই কোন কাঁটাতার। ১৯৯০ সালে নেপালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর পরই নেপাল উত্তরপশ্চিম সীমান্তের মহাকালী নদীর উৎপত্তিস্থলে কালাপানি অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে ভারতের সাথে বিবাদে জড়ায়। কিন্তু ঐ এলাকায় ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের সময় থেকেই নেপালের সম্মতিতেই সেনা চৌকি নির্মাণ করে করেছিল ভারত। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৮১৬ সালে সুগৌলি চুক্তিতে ব্রিটিশ সরকার এই এলাকাটিকে ভারতের সাথে নেপালের সীমান্তের পশ্চিম দিক বলে উল্লেখ করেছিলো। সুতরাং এই যুক্তিতে নেপালের দাবি যৌক্তিক বলে ধরে নেওয়া যায়।

গত মে মাসের শুরুর দিকে নেপালের সাথে কোনোরকম আলোচনা না করেই ভারত বিতর্কিত এই এলাকার মধ্য দিয়ে উত্তরখণ্ড হয়ে মানস সরবোর পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তার উদ্বোধন করে। এতেই মূলত ক্ষুব্ধ হয়ে নেপাল সরকার মন্ত্রীসভার সম্মতিতে নতুন নকশা প্রণয়ন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকাকে নেপালের অন্তর্ভুক্ত করে। এই ঘটনার পর ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল এম নারাভান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চীনকে ইঙ্গিত করে বলেন- নেপাল নিজ বলে নয় বরং অন্যকোন প্রচ্ছন্ন শক্তির বলেই এমন আগ্রাসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস করতে পেরেছে। কিন্তু নয়া দিল্লী নেপালের এহেন কর্মকাণ্ডে তেমন কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায় নি বলা চলে। তবে নয়া দিল্লীর দাবী নেপালের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা ঐ এলাকা ভারতের অংশ।

তবে আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সাথে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতেই বেশি আগ্রহী কাঠমুন্ডু। তৃতীয় কোন শক্তির ইন্ধন থাক বা না থাক অতীতে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বিবেচনা করে সংঘাতের পথে হাঁটবে না নেপাল। এজন্য ভারতে বারবার আলোচনায় বসার জন্যও প্রস্তাব পাঠাচ্ছে নেপাল। সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ৯ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করেছে নেপাল।

এদিকে গেলো সপ্তাহে নেপাল-ভারত সীমান্তে নেপালের সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে এক ভারতীয় গ্রামবাসী নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছে। এই ঘটনাকেও ভারত অতোটা গুরুত্ব দেয় নি। এ বিষয়ে ভারতের সশস্ত্র সীমা বলের মহাপরিচালক রজেশ চন্দ্র এক বিবৃতিতে বলেন, নেপাল সীমান্তের অন্তত দেড় কিলোমিটার অভ্যন্তরে ঘটেছে এই ঘটনা। এটি তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা।

সুতরাং এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, নেপালের সাথে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে এখন অতোটা ভাবছে না ভারত। ভারতের মূল চিন্তা এখন চীনের সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি।

লেখক- নিয়ন রহমান 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *