বিনোদন

ধর্ষণ: নারীর প্রতি সহিংসতার সেলুলয়েডিয় প্রকাশ 1 min read

অক্টোবর ১২, ২০২০ 6 min read

author:

ধর্ষণ: নারীর প্রতি সহিংসতার সেলুলয়েডিয় প্রকাশ 1 min read

Reading Time: 6 minutes

‘এমসি কলেজে স্বামীর সাথে ঘুরতে গিয়ে গণ ধর্ষণের শিকার নববধূ।‘

‘নির্যাতনের ৩২ দিন পর ভাইরাল হলো ভিডিও’

‘ওজু করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধা’

‘বাড়ি ফেরার পথে রিকশা থেকে নামিয়ে তরুণীকে গণধর্ষণ’

‘মাদ্রাসা শিক্ষকের হাতে ছাত্রী ধর্ষণ’

‘৫ বছরের ভাগ্নিকে ধর্ষণ করলো খালু’

একটানে লিখে ফেললাম গত কয়েক সপ্তাহের খতিয়ান। চাপা দীর্ঘশ্বাস আছে, কিন্তু দৈনিক ধর্ষণের খবর দেখতে দেখতে কিছুটা অভ্যস্তও কি হয়ে পড়ছি আমরা? আন্তর্জাতিক মহল যেখানে মুহুর্মুহু উদ্বেগের কথা জানাচ্ছে, সেখানে আপনি-আমি বড়ই উদাসীন।

রাজপথে মিছিল, মিটিংয়ে দীর্ঘদিন যাবত নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের দাবি জানিয়ে আসছে মানবিক জনতা এবং নানান অঙ্গ সংগঠন। গত কয়েক সপ্তাহের, বিশেষত এমসি কলেজ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ঘটনায় নগ্নবাহু হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা।

শুধু সামাজিক অবস্থাতেই নয়, চলচ্চিত্রের চিত্রায়নেও দেখা যায় নারী অবমাননাকর কনটেন্টের জয়জয়কার। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে এখন পর্যন্ত খুব কমই নারীবাদী বার্তা প্রচারিত হয়েছে। এর মধ্যে ‘পালাবি কোথায়’, ‘পাপী শত্রু’, ‘ভাত দে’ প্রভৃতি ছবি নারীর প্রতি বৈষম্যের দিক নির্দেশ করলেও দর্শক সমাদৃত হয়নি। এর কারণ হতে পারে, নব্বইয়ের দশক আরও বেশি গোঁড়া ছিল, বার্তা গ্রহণে প্রস্তুত হয়নি।

কিন্তু উল্লেখিত ছবিগুলোতে হয় এসব বৈষম্যকে কমেডিক উপায়ে দেখানো হয়েছে নতুবা ‘নারীর সম্মান শুধু যৌন সঙ্গমে’ই এই ধারণাকে উসকে দিয়েছে। বাণিজ্যিক ধারার বাংলা ছবিতে নারীকে ভোগ্যপণ্য ও অসহায় হিসেবেই প্রদর্শন করার সংস্কৃতি সমালোচিত হলেও পরিবর্তনের আভাস নেই একবিন্দুও।

তাই অবারিত সমুদ্র থেকে পাঁচ ভাষার পাঁচ ছবিকে তুলে ধরলাম পাঠকের কাছে। প্রতিটি ছবিই বলিষ্ঠভাবে উচ্চারণ করে –নারীর সম্মান তাঁর কর্মে, লিঙ্গ ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় নয়। সহিংসতাও তাই মানবিকতার স্পষ্ট লঙ্ঘন।

Angry Indian Goddesses (২০১৫

প্রত্যেকটা সিনেমাই একেকটা ভ্রমণের মতো, নিদেনপক্ষে অভিজ্ঞতার সোয়াদ দেবার ভূমিকা রাখে। Angry Indian Goddesses সেই ব্যক্তিগত অনুভূতির এক ছটাক স্পর্শ দিতে বাধ্য।

এর আগে একটা প্রশ্ন রাখি। ‘The Motocycle Diaries’, ‘Zindagi Na Milegi Dobara’, ‘The Darjeeling Limited’ এর মতো সরেস সিনেমার কথা ভাবলে আপনার মাথায় প্রথমেই কোন শব্দটা আসে?

ভ্রমণ, তাই না! কিন্তু ভেবে দেখুন তো নারীকেন্দ্রিক কটা ছবি আছে যেখানে ভ্রমণই মুখ্য, মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় পাখা মেলে উড়ে বেড়ানো নারীর চিত্রায়ন কই?

‘Angry Indian Goddesses’ এর মাহাত্ম্য এখানে। পান নলীনের পরিচালনায় তাই সিংহভাগেই উঠে আসে ভিন্ন শ্রেণি পেশার কয়েক ছত্র নারীর গল্প। এদের কেউ ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত, কেউ চলচ্চিত্রে নারীর সংজ্ঞায়ন পরিবর্তনে উন্মুখ, কেউ সিঙ্গেল মাদার হিসেবে সমানতালে সামলে চলছেন অন্দর-বাহির। এই সদাব্যস্ত নারীদের হাতে অবসর খুব কম। সেই অবসরকে রাঙিয়ে তুলতেও খামতি নেই তাঁদের।

সাদাকালো জীবনে এক পশলা রঙের সন্ধান পায় ফ্রিদা-লক্ষ্মী-মধুরিতারা, কিন্তু তাও ক্ষণিকের। মুহূর্তেই টের পায় যে ছুটির স্পর্শে জীবন রঙিন হবার কথা, সেখানে এখন জ্বলজ্বলে রক্তের দাগ। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তাঁদেরই এক বন্ধুকে।

ভারতীয় সেন্সর বোর্ডের করাতে বেশ গুরুত্ববহ কিছু দৃশ্য কাটা পড়ে। তবে টরেন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ঠিকই গোটা ছবি প্রদর্শন করতে পেরেছেন নলীন। সন্ধ্যা মৃদুল, তনিষ্ঠা চ্যাটার্জি, পাভলিন গুজরাল, সারাহ জেন ডিয়াস,আনুশকা মানচান্দা প্রমুখ অভিনীত ছবিটি বক্স অফিসে সফল হয়নি। তবে উপমহাদেশের পুরুষতান্ত্রিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত প্রচেষ্টা হিসেবে নন্দিত হয়েছে নানান মহলে।

I spit on your Grave (১৯৭৮)

নির্মাণ শৈলীর দিক দিয়ে নিম্নমুখী হলেও ধর্ষণের অকৃত্রিম নির্লজ্জতা দেখায় ‘I spit on your grave’
Photo: IMDb

নবনীতা দেবসেন একবার  তাঁর লেখায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, পুরুষ লেখকেরা যেমন অবকাশ পালন করতে পারেন, শহরের কোলাহল ছেড়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে লেখার কাজটি চালাতে পারেন- সেটা নারী লেখকদের পক্ষে অসম্ভব স্বপ্ন।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনও বলেন,

‘একজন নারীকে দশভুজা হয়ে কাজ করতে হয়। তাঁকে তাঁর ঘর-সংসার সামলাতে হয়। সন্তান স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। ঘরের রান্নাবান্না দেখাশোনা করতে হয়। সব কিছু সামলে তারপর একজন নারীকে তাঁর লেখার টেবিলে বসতে হয়। কিন্তু সবাই কি সেই সময়টুকুও পায়? কারো কারো পক্ষে নিজেকে আর লেখার সাথে সম্পৃক্ত রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। মেয়েরা যে কম লিখছে, তার দায় শুধু মেয়েদের নয়। এর সঙ্গে পারিপার্শ্বিক অনেক কারণ থাকে। এর দায় রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থারও রয়েছে।‘

এত কথার অবতারণা করলাম মূলত একটি কারণেই। ‘I spit on your grave’ কে সহিংসতা ও ধর্ষণের ছবি হিসেবে চিনলেও অধিকাংশই ভুলে যান ছবির মূল চরিত্র জেনিফারের পরিচয় ‘ধর্ষিতা’ নয়, একজন স্বাবলম্বী লেখক।

ভায়োলেন্স, গণধর্ষণ এবং প্রতিশোধ নিয়েই লিনিয়ার গল্প বলে গেছেন পরিচালক মেয়া জাচি। নিউ ইয়র্কে ঘটা এক ধর্ষণের ভিত্তিতেই ছবি তৈরির রসদ পান তিনি। এমনকি নির্যাতিত নারীকে পুলিশি ও চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা তিনিই করেছিলেন।

প্রথম যখন এটি থিয়েটারে মুক্তি পায় তখন এর নাম ছিল ‘Day of the Woman’. বাজেটের অভাবে শুধুমাত্র ড্রাইভওয়েতেই প্রদর্শন করতে হয়। দুই বছর বাদে নাম বদলে থিয়েটারে মুক্তি পায় ছবিটি। তুমুল আলোচিত হলেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া মেলে দর্শক-সমালোচকের কাছে। কাল্ট ক্লাসিকের আখ্যাও পায় বহু মুনির কাছে। মিলেনিয়ামেও এর বেশ কয়েকটি রিমেক মুক্তি পায়। তবে একেবারে অকৃত্রিম স্বাদ পেতে হলে প্রথমটা দেখায় শ্রেয়।

পুলিৎজার জয়ী সমালোচক রজার এবার্ট এ সম্পর্কে বলেন,

‘উক্ত চলচ্চিত্র সর্বোচ্চ অসুস্থ ও বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। কোন প্রকার আর্টের ধাতই ধরেননি পরিচালক, সরাসরি ঘটনা দেখিয়েছেন তিনি। আপনি যদি বিকৃত মানসিকতার হন, সেক্ষেত্রেই শুধু এই ধর্ষকামী ও অত্যাচারের দৃশ্যায়ন দেখে বিনোদিত হবেন।‘

ক্যামিলি কিটন, এরন টাবর অভিনীত ১০২ মিনিটের ছবিটি টাইম ম্যাগাজিনের মতে সেরা ১০ সহিংস ও বিকৃতমনস্ক সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হয়।

Han Gong-ju(২০১৪)

মিরিয়াং ধর্ষণ কান্ড। দক্ষিণ কোরিয়ার বিচারিক ইতিহাসে এক কালো দগদগে ঘায়ের নাম। উন্নয়ন, কর্মব্যস্ততার পেছনে যে ভয়ংকর পুরুষতন্ত্রের চর্চা চলে, এই প্রলয়ই সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেয়।

২০০৪ সাল, মিরিয়াংয়ের স্কুলপড়ুয়া পাঁচ চঞ্চল কিশোরী। আচমকাই তাদের জীবনের হিসেব নিকেশ বদলে দেয় একটি ঘটনা। নাহ, একটি ঘটনা বললে ভুল হবে। অজস্র, অসংখ্য, অগুনতি ঘটনা- ধর্ষণ। হ্যাঁ, টানা ১১ মাস ধর্ষণের শিকার হয় তারা, ৪১ জন স্কুলছাত্রের হাতে।

প্রথমে মিডিয়াতে আসেইনি এর টিকিটি। প্রভাবশালি ব্যক্তির ছেলে জড়িত থাকায় ধামাচাপাই পড়তো। ডিসেম্বরে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ে অপরাধের খবর। ফুঁসে ওঠে জনতা, বিক্ষোভ উন্মাতাল হয় দেশ।

কিন্তু খুব লাভ হয়নি। উল্টো পুলিশের গাফিলতি ও ষড়যন্ত্রে ভিক্টিমদের পরিচয় চলে আসে মিডিয়ায়। ভিক্টিম ব্লেমিং এর পাশাপাশি অপরাধীদের কাছ থেকে দফায় দফায় হুমকি পেতে থাকে তারা। পুলিশের সহায়তা তো এই কিশোরীরা পায়ইনি, উল্টো নানান ভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

মাত্র ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, যার মধ্যে মাত্র ৫ জন জুভেনাইলে সাজা পায়। বাকিরা বেকসুর খালাস পায়। ১৬ বছর পরেও কোরিয়ান সমাজ খুব একটা এগোয়নি। ন্যায়বিচারও পাননি নির্যাতিত নারীরা।

মামলা-বিচারিক প্রহসন- পুনরাবৃত্তিঃ এর মাঝে ভিক্টিমের ট্রমা চাপা পড়ে যায়; Photo: Letterboxd

‘হান গং-জু’ সেই সত্য ঘটনা থেকেই নির্মিত। যদিও কাহিনীর প্রয়োজনে বেশ কিছু অংশ বদলে নিয়েছেন পরিচালক-চিত্রনাট্যকার লি সু-জিন। মূল ধর্ষণকে প্রতিপাদ্য না রেখে ভিক্টিমের মানসিক স্বাস্থ্য ও দুরবস্থাকেই তুলে ধরেছেন তিনি। বিচার বিভাগের প্রহসনের তলে যে নির্যাতিতের জীবন কোণঠাসা হয়ে পড়ে তা দেখানোই ছিল মুখ্য।

The Secret in Their Eyes (২০০৯)

সত্তরের দশকে এক তরুণীর ধর্ষণ ও খুন কাপিয়ে দেয় গোটা বুয়েনোস এইরেসকে। গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা বেঞ্জামিন এসপোসিতো এবং পুলিশ বিভাগ তদন্তে নামে। বিশদ প্রচেষ্টার পর খুনিকে শনাক্ত করতে পারলেও বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয় বেঞ্জামিন।

গল্পের সমাপ্তি এখানেই টানতে পারতেন পরিচালক হুয়ান হোসে ক্যাম্পানেলা। প্রতিশোধের ছকবাধা চিত্রনাট্যে না গিয়ে এই ফোর বাই থ্রি ফ্রেমেই ইট গেঁথেছেন প্রেমের, বন্ধুত্বের, শপথের। প্রতিশোধ যে সবসময় সহিংসই হতে হবে সেই ধারণা থেকে দর্শককে মুক্ত করেছেন তিনি। অস্কারজয়ী ছবিটি এখনও দেখা না হয়ে থাকলে দেখে ফেলুন চটজলদি।

রাজনৈতিক কারণেও ছবিটি আর্জেন্টিনার ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কালের হিসেবে প্রায় তিন দশক দেখানো হয় এতে। সত্তরের সামরিকতন্ত্র, আশির গণতন্ত্র এবং পরবর্তী অবস্থার আঁচ পাওয়া যায় এ থেকে।

রিকার্ডো দারিন, সলেদাদ ভিলামিল, পাবলো রাগো প্রমুখ অভিনয় করেছেন ১০২ মিনিটের এই অনবদ্য চলচ্চিত্রে।

২০১৫ সালে হলিউড পুনঃনির্মাণ করে এই আর্জেন্টাইন ক্লাসিকের; Photo: Pinterest

Cairo 678 (২০১০)

‘প্রত্যেকটা দিন বাসে নিপীড়িত হই, প্রতিটা দিন। এরপরও আমাকে চুপ করে থাকতে বলবেন? বলবেন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত?’

সংলাপটি ফাইজার, নিম্ন-মধ্যবিত্ত যেই নারী সামান্য কিছু টাকা বাঁচাতে গণপরিবহনে নিত্যদিন মেনে নিচ্ছেন যৌন হয়রানি।

সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক প্রভেদ থাকা মানেই কি নারী নিষ্পেষণ থেকে মুক্ত? উত্তর: না। ঠিক এই প্রশ্নটাই সামনে নিয়ে এসেছেন পরিচালক মোহাম্মেদ দিয়াব। আরব বসন্তের মাস কয় আগে মুক্তি পাওয়ায় মিশরীয় সমাজব্যবস্থাকে ভালোভাবেই শূলবিদ্ধ করতে পেরেছেন তিনি। বলছিলাম মিশরীয় সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম সাহসী এবং বিতর্কিত ছবি ‘কায়রো ৬৭৮’ প্রসঙ্গে।

এই চলচ্চিত্র রুপায়নের পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক এক ঘটনা। হ্যাঁ, ঐতিহাসিকই বটে। কেননা মিশরীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা নুহা রুশদি।

জুন মাসের খটখটে রোদ তখন আকাশে। সালটা ২০০৮। কাজ শেষে ঘরে ফিরছিলেন নুহা। আচমকা খালি রাস্তায় এক ট্রাক ড্রাইভার তাঁর বক্ষদেশ চেপে ধরে, চলন্ত অবস্থাতেই টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় অনেকদূর। কাপড় ছিঁড়ে পড়ে যাওয়ায় অল্পের জন্য রক্ষা পান নুহা। আটপৌরে নারীদের মতন সেই নির্যাতককে ছেড়ে দেননি, পুলিশের ধর্না দিয়েছেন। সামাজিক গঞ্জনা সত্ত্বেও মামলা লড়েছেন। শেষমেশ তিন বছরের কারাদন্ড পায় ঘৃণ্য ওই নিপীড়ক।

সেসময় প্রচুর তর্কবিতর্কের সম্মুখীন হয়েছিলেন নুহা। সেই মামলা বিচারালয়ে থেকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন দিয়াব। তিনি দেখেন, মামলার বিচারক থেকে ভিডিও ধারণকারী পর্যন্ত নুহাকেই দুষছিলেন প্রথমে। এহেন অজ্ঞানতাকে লক্ষ্য করেই দিয়াব ‘কায়রো ৬৭৮’ উপহার দেন।

ছবিটি অবশ্য শুধু নুহার ঘটনাতেই আটকে থাকেননি। নির্মাতা তুলে এনেছেন আরও দুই সামাজিক অবস্থানে থাকা নারীর গল্প- প্রকারান্তরে দেখিয়েছেন নারীর উচ্চ-মধ্য-নিম্ন বিত্ত কোন পরিচয় নেই, সকল অবস্থানেই নারী নির্যাতিত। দুবাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন এওয়ার্ডস, শিকাগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সহ বিভিন্ন উৎসবে পুরস্কৃত হয় ছবিটি।

তবে স্বদেশেই আইনজীবী আবদেল হামিদ ও মানবাধিকার কর্মী মাহমুদ হানফির মামলার মুখে পড়েছিলেন পরিচালক। তাদের ভাষ্য ছিল মিশরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা ও নারীদের উদ্ধত আচরণে উদ্বুদ্ধ করতেই এই সিনেমা তৈরি করেছেন দিয়াব। বলা বাহুল্য, ধোপে টেকেনি তাদের মামলা।

প্রখ্যাত উপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো এই চলচ্চিত্রের ভূয়সী প্রশংসা করে টুইট করেন,

‘কায়রো ৬৭৮ আমার মতে সাম্প্রতিকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ছবি, যা নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের মূল চিত্রটি আমাদের দেখায়।‘

৯৩% মিশরীয় নারী যৌন নিগ্রহের শিকার; Photo: Film Fest Gent

উল্লেখিত চলচ্চিত্রগুলোর কয়েকটিতে ধর্ষণের প্রতিশোধ হিসেবে ভায়োলেন্সকে দেখানো হলেও লেখক মোটেও সেই চর্চাকে উৎসাহিত করেন না।

নারীর প্রতি অত্যাচারের সবচেয়ে সহিংস রূপ ধর্ষণ। যৌন চাহিদার চেয়েও সমাজে ক্ষমতা প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই ঘৃণ্য অপরাধ। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেহেতু এর বীজ প্রথিত তাই এর মূল উৎপাটনে চাই সুদূরপ্রসারী কৌশল।

‘পুরুষকে ধর্ষণের উৎসাহ দেয় পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। ধর্ষণরোধের উপায় হচ্ছে সমাজরাষ্ট্রের সব এলাকায় নারীর প্রতিষ্ঠা, পুরুষের সমান প্রতিষ্ঠা; তবে তাতেও হয়তো ধর্ষণ লুপ্ত হবে না। ধর্ষণ প্রতিরোধের জন্য নারীকে হয়ে উঠতে হবে পুরুষের সমকক্ষ-ঘরে ও বাইরে, এবং শারীরিক শক্তিতে।‘

_নারী (অধ্যায়: ধর্ষণ, পৃষ্ঠা ২৫৭)- হুমায়ূন আজাদ

লেখক- সারাহ তামান্না

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *