Site icon Bangla Info Tube

দ্বিধার দোলায় দোদুল্যমান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতি

দ্বিধার দোলায় দোদুল্যমান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতি

Reading Time: 2 minutes

“চলে গেলাম

যাওয়ার আগে কিছু দ্বিধা রেখে গেলাম” 

না—বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো আমাদের ছেড়ে চলে যায় নি, আছে বহাল তবীয়তেই! তবে দ্বিধার দোলায় দোদুল্যমান এই সংস্থাটির বিভিন্ন বক্তব্যে বর্তমান মহামারীকালীন পরিস্থিতি প্রতিনিয়তই এক দ্বৈরথের মধ্যে অবস্থান করছে। কিছুদিন পর পর নতুন বক্তব্য প্রদান এবং তারও কিছুদিন পর সেই বক্তব্য বাতিল করে দেয়াটা যেন এখন নিত্য নৈমিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিছুদিন আগে ঠিক এমনই এক বক্তব্য দিয়েছিলেন উক্ত সংস্থাটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা মারিয়া ভ্যান কেরখোভ। সেই বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন,

“যে সকল করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে কোন ধরনের উপসর্গ দেখা যায় না, তাদের থেকে অন্যদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক ক্ষীণ।” 

অথচ এই বক্তব্য প্রদানের ঠিক একদিন পরেই সংস্থাটির আরেকজন শীর্ষ কর্মকর্তা সেই বক্তব্যকে নাকোচ করে দিয়ে বলেন,

“এই সম্পর্কে সঠিক গবেষণা এখনো হয়নি, তাই এই ব্যাপারে সুনিশ্চিত হয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।”

এই বক্তব্য এবং পাল্টা বক্তব্যের খেসারত গুনতে হচ্ছে বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে। কেননা, ভুয়া তথ্যের হুড়োহুড়িতে করোনা সম্পৃক্ত সঠিক তথ্য জানার জন্য এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকেই সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়ে আছে। পরবর্তীতে মারিয়া ভ্যান কেরখোভ নিজের বক্তব্যকে শুধরে নেন এবং পুরো বিষয়টিকে একটি ভুল বুঝাবুঝি বলে চালিয়ে দিয়েছেন। তার থেকে পাওয়া পরবর্তী বিবৃতিতে এখন জানা যায় যে করোনা রোগের উপসর্গ দেখা না গেলেও উক্ত রোগী অন্যকে সংক্রমণ করতে পারেন।

উন্নয়নশীল দেশে ভুল বিবৃতির প্রভাব 

উন্নত দেশগুলোর নিজস্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মোটামুটি উন্নত থাকার কারণে, তারা এই ধরনের ভুল বিবৃতি থেকে খুব দ্রুতই পরিত্রাণ লাভ করতে পারেন। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোর দিকে তাকালে সেখানে দেখা যায় ভিন্ন প্রেক্ষাপট। কেননা সেখানকার ভগ্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে এমনিতেই পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। সেখানে এমন বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্যের জন্য নিজেদের জীবন দিয়ে এই ভুলের খেসারত দিতে হয় সাধারণ জনগণকে।

উল্লেখ্য যে, এটিই প্রথমবার নয় বরং ইতোপূর্বেও বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রদান করেছিল এই স্বাস্থ্য সংস্থাটি। একদম শুরুর দিকে যখন বলা হয়েছিল এই রোগটি মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায় না, তখন স্বাভাবিকভাবেই পোষা প্রাণীদের প্রতি বিরূপ দৃষ্টি পরে। বিভিন্ন গণমাধ্যম লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে সেই সময়ে এমন ভুল বক্তব্যের কারণে প্রাণ দিতে হয়েছিল অনেক পোষা প্রাণীকে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণে ভুল বিবৃতির প্রভাব 

এদিকে থেমে নেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধ কণ্ঠস্বরগুলো। অনেকেই জোরালো দাবী তুলেছেন যে করোনা ভাইরাস এভাবে ছড়িয়ে পরার পেছনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভ্রান্তি মূলক তথ্য এবং বিবৃতির প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে। কেননা কিছুদিন আগেই এই সংস্থাটি থেকে একটি বক্তব্য এসেছিল যে, করোনা রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য মাস্ক পরিধান করার কোন প্রয়োজন নেই।

অথচ এই বক্তব্যটির কারণে অনেকেই হয়ত মাস্ক পরিধান করা ব্যতীত চলাফেরা করে করোনা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই করোনা ছড়িয়ে পরার পেছনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভ্রান্তিমূলক বিবৃতির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নিয়ে নিন্দুকদের এই দাবীটি একদমই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

তবে অনেকেই মনে করেন, যেহেতু করোনা ভাইরাস সম্পূর্ণ নতুন একটি রোগ, তাই এই সম্পর্কে প্রতিনিয়তই নতুন তথ্য ভেসে আসছে। ঠিক একারণেই নতুন গবেষণার তথ্য পুরানো গবেষণার তথ্যের সাথে না মিলতেই পারে। প্রতিনিয়ত আমরা এই ভাইরাস সম্পর্কে নতুন করে জানছি। যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোন একক ব্যক্তির সংগঠন নয় বরং অনেক দেশের বিশেষজ্ঞরা মিলেই এটি একটি সংস্থা। তাই বিভিন্ন রকম তথ্য এবং বিবৃতির মধ্যে রকমফের দেখা যেতেই পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞরাই বলেন, যেহেতু এই সংস্থাটির বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে অনেক কিছুই হচ্ছে এখন, তাই যে কোন ধরনের বিবৃতি প্রদান করার আগে যথেষ্ট পরিমাণে যাচাই বাছাই করেই তবে বিবৃতি প্রদান করা উচিৎ।

লেখক- ইকবাল মাহমুদ ইকু 

Exit mobile version