বিশ্ব

ট্রাম্প টাওয়ার থেকে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে 1 min read

অক্টোবর ২৪, ২০২০ 3 min read

author:

ট্রাম্প টাওয়ার থেকে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে 1 min read

Reading Time: 3 minutes

‘হোম অ্যালোন টু’ চলচ্চিত্রে প্লাজা হোটেলে ছোট্ট কেভিনকে তিনি অভ্যর্থনা ডেস্কের পথ দেখিয়েছিলেন। এর আগে এসেছিলেন প্রো রেসলিং প্রতিষ্ঠান “ডাবিউডাবিউই (WWE)” তে। তখনও যদি বলা হতো বছর বিশেক পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন এই মানুষটি, তার পক্ষে বাজি ধরার জন্য কাউকে পাওয়া দুষ্কর হতো। কিন্তু সব কিছু তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ব্যবসায়ী থেকে তিনিই বনে গেলেন বর্তমান দুনিয়ার সব চেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। বলছিলাম, ট্রাম্প টাওয়ার থেকে হোয়াইট হাইসের রক্ষাকর্তা বনে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা।

শরীরে যার জার্মান রক্ত

অভিবাসন নীতি নিয়ে বেশ কঠোর ট্রাম্পের পূর্বপুরুষরাও বলতে গেলে অভিবাসীই ছিলেন। ট্রাম্পের পূর্বপুরুষরা জার্মানি থেকে এসেছিলেন মার্কিন ভূখন্ডে। তার পিতামহ ফ্রেডেরিক ট্রাম্পের জার্মানিতে ‘ক্লোনডিক গোল্ড রাশ’ নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল। সম্ভবত এই জন্যই ট্রাম্পের নিজের চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রেও জার্মান একরোখা আর জেদি ভাব দেখা যায়। ১৮৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন ফ্রেডেরিক ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবারের আসল পদবি ছিল মূলত ‘ড্রাম্পফ’। যদিও ১৭শ শতকে কোন এক ভুলে ড্রাম্পফ হয়ে যায় ট্রাম্প। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত এক বইয়ে অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছিলেন তারা সুইডিশ বংশোদ্ভূত। পরবর্তীকালে অবশ্য তিনি স্বীকার করেছিলেন, তার পূর্ব-পুরুষরা আসলে জার্মান বংশোদ্ভূত এবং তারা ১৮৯৯ সালে নিউইয়র্ক শহরে জার্মান-আমেরিকান স্টুবেন প্যারেডে সেনাবাহিনীর গ্র্যান্ড মার্শাল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৪ জুন, ১৯৪৬ সালে নিউইয়র্কের কুইন্সে জন্মগ্রহণ করেন। ট্রাম্প তার পিতামাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে ছিলেন ৪র্থ। তিনি কুইন্স, নিউইয়র্কের জ্যামাইকা স্টেটে তার ছাত্র জীবন কাটিয়েছেন।

ছাত্রজীবন

ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্ডারগার্টেন থেকে ৭ম গ্রেড পর্যন্ত কেউ-ফরেস্ট স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু আর দশজন বাচ্চার তুলনায় শৈশবে ট্রাম্প অনেক বেশি দুরন্ত হওয়ায় ১৩ বছর বয়সেই তার বাবা-মা তাকে নিউইয়র্কের সামরিক একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল ট্রাম্প এই মিলিটারি বোর্ডিং স্কুলেই পার করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ভর্তি হন ফোর্ডহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুই বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করে তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ারটন স্কুল অফ ফিনান্স অ্যান্ড কমার্সে ভর্তি হন। ১৯৬৮ সালে পেনসেলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রাম্প অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

আরও পড়ুন- ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যত যৌন হয়রানির অভিযোগ

আরও পড়ুন- ট্রাম্প কীভাবে এত বিশাল সম্পত্তির মালিক হলেন

আরও পড়ুন- হার না মানা জো বাইডেন

ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প

হোয়ারটন স্কুলে অধ্যয়নের সময়ই ডোনাল্ড ট্রাম্প বাবা ফ্রেড ট্রাম্পের ‘এলিজাবেথ ট্রাম্প এন্ড সান’ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। ১৯৬৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি পুরোপুরিভাবে পিতৃ প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন। ১৯৭১ সালে ট্রাম্প এই প্রতিষ্ঠানের সমস্ত ভার বহন করেন এবং সে বছরই তিনি প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’ রাখেন। উল্লেখ্য, ডোনাল্ড জে ট্রাম্প গত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েল স্টেট ব্যবসার সবচেয়ে বড় একটি নাম।

চেয়ারম্যান হবার পরেই তিনি সবার আগে ম্যানহাটানের কাছে তার কোম্পানিকে স্থানান্তরিত করেন। ম্যানহাটনে আমেরিকার উচ্চবিত্ত সমাজের বড় একটি অংশের বসবাস। এখানে এসেই ধনাঢ্য আর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে ট্রাম্পের সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করে। তিনি বুঝতে পারেন, শুধু সম্পর্ক গড়লেই হবে না, বরং তার সাথে সাথে বড় বিল্ডিং প্রকল্পে যোগদান করতে হবে যা উচ্চ মুনাফা অর্জন এবং জনসাধারণের স্বীকৃতি অর্জনের সুযোগ দেবে। তবে একপর্যায়ে তিনি দেউলিয়া হতে বসেছিলেন। ট্রাম্প টাওয়ার এবং ৩টি ক্যাসিনো ছাড়া সবই প্রায় হাতছাড়া হয়। তবে সেখান থেকে ফিরেও এসেছিলেন তিনি।

মিডিয়া জীবন

ট্রাম্প এখন পর্যন্ত ৮টি চলচ্চিত্রে অথিতি চরিত্রে দেখা দিয়েছেন।  ৮০’র দশকের শেষ থেকে তিনি ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট (WWE) এর সাথে যুক্ত। ২০০৩ সালে তিনি জনপ্রিয় টেলিভিশন রিয়েলিটি শো ‘Apprentice’ এর সহপ্রযোজক এবং উপস্থাপক হয়ে ছোট পর্দা মাতান। এই অনুষ্ঠানের প্রতিযোগীরা ১ বছর ট্রাম্প অর্গানাইজেশনে চাকরি পাওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতেন। পরবর্তিতে ট্রাম্পের সঞ্চালনায় ‘Celebrity Apprentice’ আরও জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই শো’তে সেলিব্রিটিরা স্থানীয়দের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাদের দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ জোগাড় করতো।

ট্রাম্প টাওয়ার থেকে হোয়াইট হাউসে

১৯৯৯ সালে, রিফর্ম পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথম রাজনৈতিক মঞ্চে আসেন ট্রাম্প। ১৯৯৯ সালের জুলাই নির্বাচনে তিনি জর্জ ডব্লিউ বুশের বিপক্ষে লড়ার প্রস্তুতি নেন। যদিও পরে তা প্রত্যাহার করেন। তবে সেবার না হলেও সামাজিক সংশ্লিষ্টতা তিনি বাড়াতে থাকেন।১৭ জন রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁদের প্রচারণা স্থগিত করার পর ১৬ জুন ২০১৫ সালে ট্রাম্প তাঁর প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। অবৈধ অভিবাসন, আমেরিকানদের চাকরির ব্যবস্থা, মার্কিন জাতীয় ঋণ এবং ইসলামী সন্ত্রাসবাদের মতো ঘরোয়া বিষয়গুলোতে মনোযোগ আকর্ষণ করে তিনি খুব দ্রুত সাধারণ মার্কিনী আর বিশ্ব মিডিয়ার সামনাসামনি চলে আসেন। তার স্লোগান ছিল, “Make America Great Again”। হাউস স্পিকার পল রায়ান সহ আরো সব বড় রিপাবলিকান নেতারা তার সমর্থক ছিলেন।

ট্রাম্প এক নির্বাচনেই বড় সব রেকর্ড ভেঙে দেন। তিনি ২৮ বছরে রিপাবলিকান দলের সর্ববৃহৎ ইলেকটোরাল কলেজ জয় লাভ করেন। তিনি সারা দেশে ২,৬০০ এর বেশি কাউন্টিতে জয়লাভ করেন, যা ১৯৮৪ সালে প্রেসিডেন্ট রিগানের পর সবচেয়ে বেশি। এছাড়া তিনি জনপ্রিয়তার ভোটে ৬২ মিলিয়নের বেশি ভোট পান। আমেরিকা প্রতিষ্ঠার পর রিপাবলিকানদের মধ্যে যা ছিল সর্বোচ্চ। তিনি ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পান, ১৯৮৮ সালে জর্জ এইচ ডাবলিউ বুশ সিনিয়ারের পর যা সবচেয়ে বেশি। দেশ পুনর্গঠন এবং স্থিতাবস্থা ভেঙ্গে ফেলা সংক্রান্ত তার বার্তা বেশ বড় প্রভাব রেখেছিল। শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে ৮ নভেম্বর ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হন।

ব্যক্তিগত জীবন

ট্রাম্প ২০০৫ সালে মেলানিয়া কানাসকে বিয়ে করেন। এটি ছিল তার ৩য় বিয়ে। তার আগের দুই সম্পর্ক বিবাহ বিচ্ছেদ দিয়ে শেষ হয়। ১৯৯২ সালের মার্চে ১৫ বছরের দাম্পত্য শেষে ইভা মারি জেলনিচকোভের সাথে বিচ্ছেদ করেন তিনি। তার দ্বিতীয় বিবাহ মার্লা ম্যাপলেসের সাথে। বিচ্ছেদ হয় ১৯৯৯ সালের জুন মাসে। তবে এসবের বাইরেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেশ বড় কিছু যৌন হয়রানির অভিযোগ ছিল।

লেখক- জুবায়ের আহম্মেদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *