Site icon Bangla Info Tube

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী: একজন নিভৃতচারী দেশপ্রেমিকের গল্প

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী: একজন নিভৃতচারী দেশপ্রেমিকের গল্প

Reading Time: 5 minutes

শুরুটা একটু পিছনে থেকে হোক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল। বাংলাদেশের পথে প্রান্তরে চলছে পাকিস্তানি মিলিটারিদের বর্বরতা। সে সময় লন্ডনে কয়েকজন ক্ষ্যাপাটে দেশপ্রেমিক ছিঁড়ে ফেলল নিজেদের পাকিস্তানি পাসপোর্ট। তাদের কাছে দেশের সংজ্ঞা একটাই। বাংলাদেশ। লন্ডন থেকে “রাষ্ট্রহীন নাগরিক” এর প্রত্যয়নপত্র নিলো দুজন শিক্ষানবিশ ডাক্তার। ভারতীয় ভিসা নিয়ে উঠলো বিমানে। বাকিটা শুনুন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের কলম থেকে-

‘চেনা হয়ে উঠেছে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডা. এমএ মোবিন। এরা দুজনে ইংল্যান্ডে এফআরসিএস পড়ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে বিলেতে চার বছর হাড়ভাঙা খাটুনির পর যখন এফআরসিএস পরীক্ষা মাত্র এক সপ্তাহ পরে, তখনই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু। ছেলে দুটি পরীক্ষা বাদ দিয়ে বাংলাদেশ আন্দোলনে অংশ নিলো, পাকিস্তানি নাগরিকত্ব বর্জন করলো, ভারতীয় ট্রাভেল পারমিট যোগাড় করে দিল্লিগামী প্লেনে চড়ে বসলো। উদ্দেশ্য ওখান থেকে কলকাতা হয়ে রণাঙ্গনে যাওয়া। প্লেনটা ছিল সিরিয়ান এয়ারলাইন্স-এর। দামাস্কাসে পাঁচ ঘণ্টা প্লেন লেট, সবযাত্রী নেমেছে। ওরা দুইজন আর প্লেন থেকে নামে না। ভাগ্যিস নামেনি। এয়ারপোর্টে এক পাকিস্তানি কর্নেল উপস্থিত ছিল ওই দুইজন ‘পলাতক পাকিস্তানি নাগরিককে’ গ্রেপ্তার করার জন্য।

প্লেনের মধ্য থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না, কারণ প্লেন হলো ইন্টারন্যাশনাল জোন। দামাস্কাসে সিরিয়ান এয়ারপোর্ট কর্মকর্তা ওদের দুইজনকে জানিয়েছিল- ওদের জন্যই প্লেন পাঁচ ঘণ্টা লেট। এমনিভাবে ওরা বিপদের ভেতর দিয়ে শেষ পর্যন্ত মে মাসের শেষাশেষি সেক্টর টু রণাঙ্গনে গিয়ে হাজির হয়েছে।’ 

রণাঙ্গনের দিনে 

সেদিন লন্ডন থেকে বহু নাটকীয়তা শেষে কলকাতা এসেছিলেন। কিন্তু সেটি ছিল কেবল নাটকীয় জীবনের শুরু। প্রথমে চাইলেন সেক্টর দুইয়ের কাছাকাছি জায়গায় ফিল্ড হাসপাতাল করতে। সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ রাজি নন। তার দরকার সৈনিক, ডাক্তার নয়। কিন্তু একসময় তাজউদ্দীন আহমদ অনুরোধ করলেন তার হয়ে। পরবর্তীতে খালেদ মোশাররফ ও  ভারতের জিবি হাসপাতালের প্রধান সার্জন ডা. রথিন দত্তের সহযোগিতায় পালিয়ে আসা ড. মবিনকে নিয়ে আগরতলার বিশ্রামগঞ্জের মেলাঘরে হাবুল ব্যানার্জির আনারস বাগানে গড়ে তুললেন প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল- ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’। হাসপাতালটির কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন ডা. সিতারা বেগম বীরপ্রতীক। কিন্তু হাসপাতালে দরকার প্রশিক্ষিত নার্স। কিন্তু সে ব্যবস্থা না থাকায় নারী স্বেচ্ছাসেবীদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দেয়ার দায়িত্বটাও নিজের কাঁধে তুলে নেন তরুণ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার সেই হাসপাতালের দুই স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ও তার বোন সাঈদা কামাল। ৪৮০ শয্যার সেই হাসপাতালে কত সহস্র আহত মুক্তিযোদ্ধা সেবা নিয়েছেন তা হয়ত স্বয়ং ডা. জাফরুল্লাহও জানেন না।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

১৯৪১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম । বড় হয়েছেন ঢাকায়। তার বাবার শিক্ষক ছিলেন বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন। পিতামাতার দশজন সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। পড়াশোনা করেছেন বকশীবাজার স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা মেডিকেলে। ছাত্র ইউনিয়নের মেডিকেল শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্র অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে করেছিলেন সংবাদ সম্মেলন। ১৯৬৪ সালে ডিএমসি থেকে এমবিবিএস ও ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে জেনারেল ও ভাস্কুলার সার্জারিতে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেশে ফিরে আসেন। বৃটেনে প্রথম বাংলাদেশি সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিডিএমএ)’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তিনি।

বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

সদ্য স্বাধীন দেশ। বঙ্গবন্ধু যেন প্রতিটি সমস্যা আলাদাভাবে তদারকি করছেন। কারো কোন সমস্য হলেই শাসন আর পরামর্শ দিয়ে সত্যিকার অর্থেই পিতা হয়ে উঠছেন। সমস্যা হলো ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাসপাতাল নিয়েও। বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল করতে দেয়া যাবেনা। নামে সমস্যা রয়েছে।

ডা. জাফরুল্লাহ সচিবালয়ে গিয়ে দেখা করলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিনের কথোপকথন শোনা যাক ডা. জাফরুল্লাহর মুখ থেকে।

শুরুতেই বললেন, ‘মুজিব ভাই, বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল করতে দেওয়া হচ্ছে না,’

‘বাংলাদেশ নাম থাকলে কেমন সরকারি সরকারি মনে হয়। অন্য কোনো সুন্দর নাম ঠিক কর হাসপাতালের জন্যে,’ বললেন বঙ্গবন্ধু।

অনেক তর্কের পর বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুই তিনটি নাম ঠিক করবি। আমি তিনটি নাম ঠিক করব। দুজন বসে যে নামটি ভালো সেই নামে হাসপাতাল হবে।’

তিনটি নাম ঠিক করে আবার বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

‘বল, কি নাম ঠিক করেছিস?’

ডা. জাফরুল্লাহ বলতে শুরু করলেন, ‘এক. বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল, দুই. গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র…।’

তৃতীয় নামটি বলার সুযোগ না দিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ খুব সুন্দর নাম। এই নামেই হবে হাসপাতাল। এই হাসপাতালে শুধু চিকিৎসা হবে না। দেশটাকে গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা সবকিছু নিয়ে কাজ করতে হবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে।’

সেদিন থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র মানে শুধু হাসপাতাল নয়। সেখানে কাজ করা প্রতিটি ডাক্তার একেকজন কৃষক। জোহরা বেগম, পাকিস্তান সরকারের যুগ্ম সচিব এম এ  রব ও ডা. লুৎফর রহমান সাভারে তাদের পারিবারিক সম্পত্তি থেকে পাঁচ একর জায়গা দিয়েছিলেন এই হাসপাতালের জন্যে। বঙ্গবন্ধু আরও ২৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে দিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’ পরিবর্তিত ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ নামে যাত্রা শুরু করলো ১৯৭২ সালে।

স্বাধীন দেশে তিনি সুপারম্যান

নব্বই দশকের পর থেকে চিকিৎসা যখন বাণিজ্য হতে শুরু করেছে, তখনো সত্যিকার অর্থেই ‘সেবা’ দিয়ে যাচ্ছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। স্বাস্থ্যবীমা চালু আছে জন্মলগ্ন থেকেই। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঢাকার হাসপাতালে সন্তান প্রসবের মোট খরচ ২ হাজার টাকা। সাভারে আরও কম। সিজারিয়ানের প্যাকেজ ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। ডাক্তার, ওষুধ, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার নামে অন্য কোনো বাড়তি খরচ নেই। জটিলতা দেখা না দিলে  সিজার করা হয় না। আর দেশের অন্য হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে সাধারণ প্রসব নেই বললেই চলে।

১৯৮১ সালে গড়ে তোলা হয় অত্যাধুনিক ‘গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল’। অন্য সব ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ওষুধের চেয়ে গণস্বাস্থ্য উৎপাদিত ওষুধের দাম প্রায় অর্ধেক। ডা. জাফরুল্লাহ নিজে কিডনির রোগী। ডায়ালাইসিস করেন সপ্তাহে প্রায় তিনবার। আর কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্যে অপরিহার্য ইনজেকশন ‘হ্যাপারিন’। বাজারে দাম ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। গণস্বাস্থ্যে উৎপাদিতটি হ্যাপারিনের দাম ২০০ টাকা। সারা পৃথিবীতে কোলেস্টেরল কমানোর জন্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ওষুধ ‘অ্যাট্রোভাসটাটিন’। গণস্বাস্থ্যে উৎপাদিত একটি ট্যাবলেটের দাম ৭ টাকা, যেখানে অন্য সবার ট্যাবলেট ১১ টাকার কাছাকাছি।

বাংলাদেশে সাধারণভাবে একবার কিডনি ডায়ালাইসিসের খরচ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাক্তার-ওষুধ মিলিয়ে আরও বেশি পড়ে যায়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫০ জন কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস করে থাকে। এর মধ্যে ১০-১২ শতাংশ দরিদ্র রোগীর ডায়ালাইসিস করা হয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় ২০ শতাংশ রোগীর থেকে নেওয়া হয় ৮০০ টাকা। ১১০০ টাকা নেওয়া হয় ১৫ শতাংশ রোগীর থেকে। সর্বোচ্চ নেওয়া হয় ২৫০০ টাকা। তবে ২৫০০ টাকা দিয়ে যারা ডায়ালাইসিস করাতে পারেন, তারা গণস্বাস্থ্যে আসেন না। তারা অন্য নামকরা হাসপাতালে ৮ বা ১০ হাজার টাকা খরচ করে ডায়ালাইসিস করান। কিডনি রোগীর অন্য যেকোনো রোগের ডাক্তারি সেবাও দেওয়া হয় সার্বক্ষণিক, দক্ষ নার্স তো থাকেনই। এসবের জন্যে আলাদা কোনো ফি নেওয়া হয় না।

স্বাধীনতার পর থেকেই দেশীয় ওষুধ শিল্প গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। কথা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। সমাজতান্ত্রিক দেশ থেকে কম দামে ওষুধ আমদানির প্রস্তাব বিবেচনায়ও নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

দেশীয় ওষুধ শিল্প ও নীতির বিষয়টি বুঝিয়েছিলেন জিয়াউর রহমানকেও। জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ তার মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে ওষুধ নীতি নিয়ে কাজ করুক। কিন্তু জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী শফিউল আযমদের সঙ্গে নেওয়ায়, চার পৃষ্ঠার চিঠি লিখে মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান ডা. জাফরুল্লাহ। প্রেসিডেন্ট জিয়ার ব্ল্যাংক চেকের প্রস্তাব ফেরাতে সময় নেননি এই দেশপ্রেমিক। পরবর্তীতে এরশাদকে বুঝিয়ে ওষুধ নীতি করাতে সক্ষম হন ১৯৮২ সালে। সাড়ে ৪ হাজার ওষুধ থেকে প্রায় ২৮০০ ওষুধ নিষিদ্ধ করা হয়।

দেশীয় ওষুধ শিল্পের যে বিকাশ, তা ডা. জাফরুল্লাহর সেই বৈপ্লবিক ওষুধ নীতিরই সুফল। এখন ১৬-১৭ কোটি মানুষের চাহিদার ৯৫ শতাংশেরও বেশি ওষুধ বাংলাদেশ উৎপাদন করে। বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানিকারক দেশও। সবখানেই নীরবে সুপারম্যান হয়ে আছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

অভিযোগ, অভিযোগ, অভিযোগ এবং একজন দেশপ্রেমিক

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘স্বাধীনতা দিবস পদক ও পুরস্কার’, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রসিদ্ধ ম্যাগসেসেসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্মানজনক পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি চকচকে ঝকঝকে করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলেননি। ব্যবস্থাপনাও সেই অর্থে অত্যাধুনিক নয়। নামমাত্র মূল্য নিয়ে গরীব মানুষদের সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান পাঁচ তারকা মানের করে গড়ে তোলা সম্ভব নয়, প্রয়োজনও ছিল না। বঙ্গবন্ধু যেমন চেয়েছিলেন, ঠিক তেমন সাদামাটা আর অসহায়ের সহায় হয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অসম্ভব পরিশ্রমী, কিন্তু জীবনযাপন, কাজ এবং কথায় অগোছালো একটি ব্যাপার দৃশ্যমানভাবেই বোঝা যায়। কখনো কেতাদুরস্ত জামায় দেখা যায়নি। দেখা যায়নি অসাধারণ বাচনভঙ্গি। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিপক্ষ ঘায়েল করার মত পটুও ছিলেন না। সারা জীবনই যা ভালো মনে করেছেন, তা করেছেন- বলেছেন। কখনো পরিণতি চিন্তা করেননি।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সম্প্রতি অসত্য তথ্য উল্লেখ করে কিছু কথা বলেছেন, ভুল বুঝতে পেরে সংবাদ সম্মেলন করে দুঃখও প্রকাশ করেছেন। এতে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়েছে।

সততার জন্য যে মানুষটি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করেননি, যিনি নীতিতে থাকার জন্য ড. ওয়াজেদ মিয়াকে সরাসরি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে যুক্ত করেননি, যাকে বিশ্বাস করে বঙ্গবন্ধু স্বয়ং হাসপাতাল করতে বলেছেন, সেই মানুষ আজ জটিল সব হাস্যকর মামলায় জর্জরিত।

লন্ডন থেকে পাউন্ড সংগ্রহ করে এনে যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্যে আগরতলায় হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন। হয়েছিলেন রাষ্ট্রহীন নাগরিক। জীবনে বহু অর্থ জোগাড় করেছেন, প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় ব্যয় করেছেন। উচ্চবিত্তের জীবনযাপন করার সকল যোগ্যতা থাকার পরও, সারা জীবন প্রায় শ্রমিক শ্রেণির জীবনযাপন করছেন। মুক্তিযুদ্ধে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান যার, সেই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এখন ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’, ‘ফল চোর’, ‘মাছ চোর’, ‘জমি দখলকারী’, ‘চাঁদাবাজি’ মামলার আসামি!

হতে পারতেন আর সব বুদ্ধিজীবীর মতো, টকশো হয়ত মাতিয়ে রাখতে পারতেন দেশের আরো সব চিকিৎসকের মতো। কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তেমন কেউ নন। ৩০০ টাকায় কোভিড-১৯ এর কীট আবিষ্কার করেছে তার প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তিনি এখন ঘুরছেন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে। শুধুমাত্র দেশের মানুষের জন্য।

ভুল হয়ত সেদিন পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলার সময়ই করেছেন। রাষ্ট্রহীন নাগরিক থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নিবেদিত নাগরিক হয়েছেন, শুধু ভাগ্যের সাথে ইঁদুর বিড়াল খেলা শেষ হলো না তার।

লেখক- জুবায়ের আহম্মেদ 

Exit mobile version