মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

‘ডাকা’ শিক্ষার্থী আর দক্ষদের অভিবাসন সুযোগ বাড়বে ২০১৮ তে1 min read

জানুয়ারি ২৩, ২০১৮ 3 min read

‘ডাকা’ শিক্ষার্থী আর দক্ষদের অভিবাসন সুযোগ বাড়বে ২০১৮ তে1 min read

Reading Time: 3 minutes

সাহেদ আলম

২০১৮ সালটি অভিবাসী স্বপ্ন বিলাসীদের জন্য সম্ভাবনার একটি বছর হিসেবে দেখা দিতে পারে বলেই মনে করছেন, অভিবাসন আ্‌ইনজীবি, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশী আমেরিকান এটর্নী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিদ্দীকি নাজমুল আলম বলছিলেন, এই বছরটি সম্ভাবনা নিয়ে আ্সতে পারে, শিক্ষিত এবং দক্ষ অভিবাসন প্রত্যাশীদের, কেননা, যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের মধ্যেই পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করে, বিজনেস বা ইনভেস্টর ক্যাটাগরীতে গ্রিনকার্ড প্রদান দ্বিগুন করতে চাইছে। তাতে ২০১৮ সালটি অভিবাসনে বাংলাদেশী সহ অনন্যদের জন্যে সম্ভাবনার একটি বছর হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে।

শিশুকালে কাগজপত্রহীন পিতা-মাতার হাত ধরে এই দেশে আশা শিক্ষার্থীদের, যাদেরকে ডিপোর্ট করে দেয়ার জন্য এরি মধ্যে আদেশ দিয়ে রেখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাদের জন্যেও সুখবর আসছে। কেননা, ডেফার্ড এ্যাকশন ফর চাইল্ডহুট এ্যরাইভাল- বা ডাকা নামের যে প্রকল্পটি বন্ধ করতে ঘোষনা দিয়েছেন, সেটার বিষয়ে নতুন করে চিন্তা ভাবনা হচ্ছে বলে আভাষ মিলেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথায়। তবে, সেই ডাকা কে, তিনি দুটি দরকষাকষির পর্যায়ে নিতে চান বলেই স্পষ্ট প্রতীয় মান হয়েছে। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা ডাকা নিয়ে ভাবতে চাই কেননা, অনেক রিপাবলিকান সিনেটর ডাকা চালু রাখতে চান।তবে, আমাদের সীমান্তে দেয়াল নির্মানের টাকা লাগবে’, সে বিষয়ে ডেমোক্রাটদের সমর্থন লাগবে বলেই প্রকারান্তরে জানাচ্ছিলেন তিনি । ডিসেম্বরের ২৯ তারিখে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ফ্লোরিডায় অবকাশ যাপন কালেই এসব কথা বলেন সাংবাদিকদের সাথে।

আর, ২ জানুয়ারীতে তিনি ফ্লোরিডায় ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থল ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেরার দিনে একাধিক বিষয়ে টুইট করে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন, তার একটি হলো এই ডাকা প্রকল্প নিয়ে। ৮ লক্ষ শিক্ষার্থী যাদের কে ‘ড্রিমার বা স্বপ্নতারুন্য’ হিসেবেই আখ্যা দেয় আমেরিকার গনমাধ্যম, সেই ড্রিমারদের জন্য কিছুটা করার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘ডেমোক্রাটরা শুধুই ডাকা নিয়ে রাজনীতি করেছে, কাজের কাজ কিছুই করেনি। আমরা তাদের জন্য কাজ করতে চাই যেন তারা রিপালিকানদেরকে আপন মনে করতে পারে’।

তার এই টুইট বার্তা ধরেই এখন বিশ্লেষন চলছে যে, এটিকে একটি দরকষাকষির মাধ্যম হিসেবে ডেমোক্রাটদের সমর্থন চাইবেন তিনি সিনেটে। কেননা, ডাকা অর্থাৎ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের সন্তান হিসেবে যারা এই দেশে বাবা মায়ের সাথে এসেছিল তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়ে ডেমোক্রাট দলের একটি দূর্বল দিক আছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা’র ব্যাক্তিগত ওয়াদা আর ডেমোক্রাট রাজনীতির মূল মূল্যবোধ জড়িয়ে আছে এটার সাথে। সে কারনে, এটা চালু রাখার বিনিময়ে ২টি বিষয়ের সহযোগীতা চান তিনি সিনেটে ডেমোক্রাট ভোটাভুটিতে। একটি হলো, সীমান্তে দেয়াল নির্মানের জন্য অর্থছাড়, অন্যটি হলো পারিবারিক অভিবাসন বন্ধে কঠোর আইন।

‘পারিবারিক অভিবাসন অর্থাৎ চেইন ইমিগ্রেশন বন্ধ করলে, তাতে খুব বেশি বাধ সাধবে না ডেমোক্রাট দল এটা মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। আবার, ডিভি লটারী পদ্ধতি যেটাতে এখনও মোট গ্রিনকার্ড এর অন্তত ৫ শতাংশ বরাদ্দ আছে সেটি বন্ধ করলেও অতটা আপত্তি নেই ডেমোক্রাট দলের। সুতরাং এই দুই ক্ষেত্রের অভিবাসন বন্ধ করলে, বছরে এখন যে প্রায় আড়াই থেকে তিন লক্ষ গ্রিনকার্ড প্রদান করা হচ্ছে, সেই কোটার সাশ্রয় হবে। সেক্ষেত্রে, এই বিশাল পরিমান গ্রিনকার্ড কোর্টার বড় অংশটিই চলে যাবে, দক্ষ, শিক্ষিত বিজনেস ক্যাটাগরীর গ্রিনকার্ড আবেদন এর ক্ষেত্রে। এর বাইরে বিনিয়োগকারীদের জন্যেও খুলতে পারে নতুন দরজা। ‘-জানাচ্ছিলেন এটর্নী নাজমুল আলম।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে সাড়ে পাচ লক্ষ করে গ্রিনকার্ড প্রদান করে, যার মধ্যে পারিবারিক অভিবাসন খাতে যায় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ। ৫ ভাগ ডিভি লটারীতে, আর দক্ষ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে যাচ্ছে মাত্র ২ ভাগ। এই ৬৫ ভাগ আভিবাসন যদি বন্ধ হয়ে যায় বা সীমিত হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বলিতে পড়বেন, বেশ কয়েক লক্ষ বাংলাদেশী যারা ডিভি লটারী সহ অণ্যন্য উপায়ে এই দেশে এসেছিলেন, এবং স্বপ্ন দেখছিলেন, একদিন তাদের আত্বীয় স্বজনেরা আসবেন, সুখি পরিবারের রেশ পাবেন, তাদের জীবন যাবন উন্নত হবে। এমন হাজার হাজার মানুষ যাদের আগমন বন্ধ হয়ে যাবে হয়তো। তবে এর বাইরে সম্ভাবনা তৈরী হতে পারে, এতদিন যারা সাইডলাইনে বসে ছিলেন তাদের জন্য। ঐযে ২ শতাংশ বেড়ে ২০ শতাংশ হতে পারে।

২ শতাংশ অর্থাৎ যারা আইটি অথবা অন্য খাতে দক্ষ হিসেবে আছেন, কিন্তু আমেরিকায় পাড়ি দিতে গিয়ে নানা রকম জটিলতা আর ভোগান্তি ছিল তাদের ক্ষেত্রে সুদিন আ্সতে পারে। কেননা, ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই ঘোষনা দিয়েছেন, যে অভিজ্ঞ এবং দক্ষদের নেয়ার ক্ষেত্রে পয়েন্ট সিন্টেম চালু করবেন তিনি কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মত। তবে, কানাডা আর অস্ট্রেলিয়ার থেকে বহুগুনে বেশি মানুষ এখানে ঐ প্রকল্পে আসতে পারবেন, কেননা, এ্‌ই দেশটি অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য অভিবাসন লাগবেই। নতুন মানুষ লাগবেই এদেশে। সেটাই বড় বাস্তবাতা। সুতরাং চাই্লেই অভিবাসন বন্ধ হয়ে যাবে না, তবে আকায়েদ আর সাইফুল্লাহ সাইপভ যিনি ডিভি লটারীতে এসেছিলেন-এই দুজনের কারনে ডিভি লটারী আর পারিবারিক অভিবাসন দুটিতেই ছেদ বসাতে চান ট্রাম্প। তাতে যেই সংকট তৈরী হবে সেটা হয়তো পুষিয়ে নিতে পারবেন না যারা তাদের স্বজনদেকে আনার জন্য আবেদন করে রেখেছেন। তবে দুয়ার খুলতে পারে অন্যদিকে, সেটাই হোক সম্ভাবনা।সেটার প্রস্তুতি নিতে সকল বাংলাদেশীদেরকে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *