featured বাংলাদেশ

“দল শুদ্ধিকরণ” অভিযানের জালে আটকা পড়া প্রথম “বিগ ফিস” জি কে শামীম1 min read

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯ 3 min read

author:

“দল শুদ্ধিকরণ” অভিযানের জালে আটকা পড়া প্রথম “বিগ ফিস” জি কে শামীম1 min read

Reading Time: 3 minutes

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র দলীয় শুদ্ধিকরণ অভিযানে এখন পর্যন্ত বের হয়ে আসা সবচেয়ে বড় নাম যুবলীগ নেতা পরিচয় দেয়া জি কে শামীম। তবে নামটি নতুন কিনা পুরাতন রাজধানীতে একটু খোঁজ খবর নিলেই তা বের হয়ে আসবে। সঠিক কোন রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও তিনি ভোল পাল্টাতে অভ্যস্ত। যে সরকারই আসুক না কেন, তিনি সরকার দলীয়দের মধ্যে ভিড়ে যান খুব সহজেই। জি কে শামীম, নামটার মতো মানুষটাও কিছুটা ছোটখাটো তবে তার ক্ষমতার দাপট তার মত ছোটখাটো নয়। 

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতে উনাকে প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে সবাই চিনেন। নিজেকে তিনি রাজধানী মহানগর যুবলীগের নেতা হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে ঠিক কোন ক্ষমতার বলে গণপূর্ত ভবনের বেশিরভাগ ঠিকাদারি কাজ জি কে শামিমের নিয়ন্ত্রণে সেটি এখনো বুঝা যাচ্ছে না। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, বিএনপি শাসনামলেও ঠিক এখনকার মতই প্রভাব বিস্তার করতেন বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে। তবে তখন তিনি কি নিজেকে বিএনপি’র নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন কি না সেটি সঠিক জানা যায়নি। 

এস এম গোলাম কিবরিয়া শামিম নিজেই নিজের নামকে সংক্ষিপ্ত করে জি কে শামীম নামকরণ করেছেন। তার জন্ম নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত সোনারগাঁ এলাকার দক্ষিনপাড়ায়। তার পিতার নাম আফসার উদ্দিন মাষ্টার, বর্তমানে শামিম ঢাকার ধনী এলাকা বনানীর ধনী ডিওএইচএসে থাকতেন।

যেভাবে গ্রেফতার হলেন জি কে শামিম 

রাজধানীর নিকেতন এলাকায় শামীমের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে র‍্যাব একটি অভিযান চালায়। উক্ত অভিযানে শামীমের অফিস থেকে প্রায় দুই কোটি নগদ টাকাসহ প্রায় পোনে দুইশত কোটি টাকার এফডিয়ারের কাগজপত্র পাওয়া যায়। এছাড়া তার অফিস থেকে আগ্নেয়াস্ত্র এবং মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। 

নিকেতনের অফিসে র‍্যাব সকাল এগারোটার দিকে এই অভিযান শুরু করে এবং সন্ধ্যা ৬টার কিছুক্ষণ পরেই তাকে সাত দেহরক্ষী সহ গ্রেফতার করে। র‍্যাবের আরেকটি বিবৃতিতে আগের প্রাপ্ত তালিকাসহ আরো বলা হয়েছে যে, জি কে শামিমের অফিসে প্রায় নয় হাজার ডলারও পাওয়া গেছে। 

নিজের অফিসে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, মদ ও অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া জি কে শামীম

ছাত্রদল নাকি যুবলীগ? 

বর্তমানে জি কে শামীম নিজের পরিচয় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় সম্পাদক হিসেবে দিলেও যুবলীগ এবং আওয়ামীলীগের বিভিন্ন বিবৃতি থেকে জানা যায় জি কে শামিমের এই পরিচয়টি মিথ্যে। জি কে শামীম যুবলীগের কোন ধরনের পদে বহাল নেই, তিনি মিথ্যে পরিচয় দিয়েই গড়েছেন এই টাকার পাহাড়। তার সম্পর্কে আরো জানা যায় যে ইতোপূর্বে তিনি বিএনপি সরকারের আমলে নিজেকে ছাত্রদলের একজন বড় নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তবে আসলেই কি তিনি তখনকার ছাত্রদলের কমিটিতে ছিলেন নাকি এখনকার মতই মিথ্যে পরিচয়ের আড়ালে নিজের আখের গোছাচ্ছিলেন তা সঠিক জানা যায় নি। 

র‍্যাব সদর দপ্তর, সচিবালয় ও কয়েকটি হাসপাতালসহ মোট প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারির কাজ এখন তার হাতে রয়েছে বলে জানা গেছে। র‍্যাবের সদর দপ্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে র‍্যাবের মহাপরিচালকের সাথে তার ছবিটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়ে উঠে। এমনকি শামীমের অফিসে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং র‍্যাব মহাপরিচালকসহ আরো অনেকের সঙ্গে ছবি টাঙ্গানো আছে। এছাড়া তার অফিসে প্রধানমন্ত্রীর সাথে তোলা একটি ছবি বড় করে টাঙ্গানো আছে যার নিচে লেখা রয়েছে জি কে শামীম, নারায়ণগঞ্জ  আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি এবং যুবলীগের সমবায় বিষয়ক সম্পাদক।  

ব্যাংকের সকল হিসেব বাজেয়াপ্ত 

বর্তমানে শামীম রিমান্ডে আছেন এবং তার সকল ধরনের ব্যাংক লেনদেনের উপর বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে স্থগিতাদেশ। তার ব্যাংকে কি পরিমাণ অর্থ জমা আছে সেটা এখনো সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তবে প্রাপ্ত কিছু তথ্যানুযায়ী সেই সম্পদের পরিমাণ তিনশ কোটি টাকারও বেশি। 

গত রোববার বিভিন্ন ব্যাংকে তার একাউন্টের বিপরীতে বেশ বড় পরিমাণের বিভিন্ন চেক জমা পড়ে। তবে ব্যাংকগুলো সেই চেকের অর্থ না দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করলে পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। তবে শুধুমাত্র জি কে শামীমের একাউন্টই নয় বরং তার স্ত্রী এবং বাবা মার নামে থাকা সমস্ত একাউন্টের উপরেও এই স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। 

জাতীয় রাজস্ববোর্ড থেকে সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ জি কে শামীম এবং তার পরিবারের সবার ব্যাংকের হিসেব তলব করা হয়েছে। সকল ব্যাংকের কাছে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অফিশিয়াল চিঠি পাঠানো হয়েছে। 

বর্তমান অবস্থা 

বর্তমানে শামীমকে তার অফিস থেকে জব্দ করা অস্ত্র এবং মাদকের মামলায় দশ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এছাড়া তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের পাতি পাতি করে হিসেব বের করা হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্যানুযায়ী ঢাকা শহরে তার বাড়ির সংখ্যা প্রায় ছয় সাতটিরও বেশি এবং দেশের অনেক জায়গায় ক্রয় করা তার মোট জমির পরিমাণ কয়েকশ বিঘা ছাড়িয়ে গিয়েছে। 

তবে গণমাধ্যমে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে, সে সব তথ্যানুযায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন যুবলীগ নেতার ভাষ্য অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি পদে তিনি আসলেই আছেন। এছাড়া ২০১৫ সালে যুবলীগের সমবায় সম্পাদক মেজবাহ মারা গেলে তার পদটি জি কে শামীমকে দেয়া হয়। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ঐ পদে থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *