বিশ্ব

২য় বিশ্ব যুদ্ধকালের জাপানের সম্রাট হিরোহিতো1 min read

আগস্ট ১, ২০১৯ 2 min read

author:

২য় বিশ্ব যুদ্ধকালের জাপানের সম্রাট হিরোহিতো1 min read

Reading Time: 2 minutes

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিরোহিতো ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের মূলনায়ক। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে জাপানের সম্রাট হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়ে মৃত্যুর আগপর্যন্ত রাজকীয় শাসনামল ধরে রেখেছিলেন। প্রায় ৬৩ বছর তিনি সম্রাটের আসনে ছিলেন।  

টোকিওর আওয়ামার রাজপ্রাসাদে ১৯০১ সালে মিচিনোমিয়া হিরোহিতোর জন্ম। তখন হিরোহিতোর দাদা সম্রাট মেইজি জাপানের সাম্রাজ্য পরিচালনা করতেন। পরে ১৯১২ সালে সম্রাট মেইজি মারা যাওয়ার পর হিরোহিতোর বাবা ইওশিহিতো তখনকার সম্রাট হিসেবে রাজসিংহাসন গ্রহণ করেন।

তিনি  থেকে ১৯ বছর বয়সে, উচ্চবর্ণের শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলোতে শিক্ষাগ্রহন করেন।  সেখানে তিনি সামরিক ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞানলাভ করেন। ১৯১৬ সালে হিরোহিতোকে জাপান সাম্রাজ্যের যুবরাজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।  তিনি জাপানের সামরিক বাহিনী নৌবাহিনীতে সহকারী লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন এবং গ্র্যান্ড কর্ডন অফ দ্য অর্ডার অফ ক্রাইস্যান্থেমাম হিসেবে সম্মানিত হন। ১৯১৪ সালের দিকে তিনি পদোন্নতি পেয়ে সামরিক বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট নৌবাহিনীতে উপলেফটেন্যান্ট পদ পান এবং  ১৯১৬ সালে তিনি সামরিক বাহিনীর ক্যাপ্টেন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত হন। 

তৎকালীন সময়ে হিরোহিতা  ছিলেন একমাত্র যুবরাজ যিনিবিদেশ ভ্রমন করেছিলেন। ১৯১২ সালে ৩৪ জন সৈনিক নিয়ে পশ্চিম ইউরোপে ছয় মাসের ভ্রমণে যান। তিনি জাপানে ফিরে আসার পর তার বাবা সম্রাট তাইশো মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি রাজতন্ত্রে রিজেন্টে পদ গ্রহণ করে সম্রাটের দায়িত্ব পরিচলনা শুরু করেন।  

১৯২৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর সম্রাট তাইশোর মৃত্য হয়। এরপর হিরোহিতো জাপানের ১২৪ তম সম্রাট হন। তখন জাপান ছিল পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী দেশগুলোর একটি। নৌবাহিনীর শক্তির দিক থেকে ৩য় এবং অর্থনীতির দিক থেকে ৯ম। এছাড়াও, জাতিপুঞ্জে পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের একটি ছিল জাপান। হিরোহিতো সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর চীন ও পার্ল হারবারে আক্রমণ চালায়। 

টোকিওতে ১৯৩৬ সালে সৈন্যরা সেনাবাহিনী মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল, এমনকি বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদকে হত্যা করেছিল। তখন সম্রাটের আদেশ অনুসারে অভ্যুত্থান দমন বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। পরবর্তীতে সম্রাট নিজে দায়িত্ব নিয়ে দমন প্রচেষ্টা চালান।  এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের দায়ে ১৯ জন সেনা সদস্যের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন হিরোহিতো।

হিরোহিতো রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার এবং কৃষকদের উচ্ছেদের আইন অনুমোদন দেন। ১৯৪১ সালে প্রধান্মত্রী ফুমিমারো পদত্যাগ করে তার জায়গায় আরেকজন মনোনয়ন দিলে হিরোহিতো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এই কারণে পরবর্তীতে হিরোহিতোর জন্য কুখ্যাত চতুর হিদেকি তোজো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদ লাভ করেন।  

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের উপর পারমানবিক বোমা হামলা যুদ্ধের মোড় পাল্টে গিয়েছিল। ফলে সম্রাট হিরোহিতো একটি রেডিও সম্প্রচারের মাধ্যমে জাপানের আত্মসমর্পণ ঘোষণা করেন। কিন্তু আগস্ট পারমাণবিক বোমা হামলার পরেও তারা আত্মসমর্পণ করতে রাজি হননি, পরে আগস্ট পুনরায় আরেকটি বোমা হামলার পর হিরোহিতো নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। 

তখনকার সময়ে জাপানের লোকজনের কাছে সম্রাট ছিলেন কোনো স্বর্গীয় অতিশক্তিশালীর মত। তারা সম্রাট পদটাকে খুব ভক্তির সহকারে দেখত। কিন্তু হিরোহিতো এই চিন্তাধারার কিছু নিয়মের  বেশকিছু পরিবর্তন আনা শুরু করছিলেন তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেন এই নতুন সংবিধান অনুসারে  খুব কম ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতীকী ব্যক্তিতে পরিণত হন।  

মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি হিরোশিমা নাগাসাকিতে প্রাণ হারানো মানুষদের জন্য সর্বসমক্ষে শোক প্রকাশ করে গেছেন। এমনকি যুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে তিনি সবসময় অনুতাপ বোধ করতেন। তিনি সবসময়  বেশি বেশি মানুষের সামনে আসতেন। মানুষের সাথে থাকতেন, নিজের জীবন তুলে ধরতেন। জাপানের উন্নতি নিয়ে কাজ করতেন।

এরপর ১৯৭৫ সালে হিরোহিতো যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ফোর্ডের সাথে দেখা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার আর্লিংটন জাতীয় কবরস্থানে অবস্থিত টম্ব অব দ্য আননোউন সোলজার্স গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরবর্তীতে তিনি মেরিন বায়োলজি নিয়ে গবেষণা করেছেন। এমনকি বেশকিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। 

দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সম্রাট হিরোহিতো মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন বর্তমান সম্রাট আকিহিতো। প্রয়াত সম্রাটের রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যানুষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক ঘটনা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শেষকৃত্যানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তন্মধ্যেমার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ, ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরা, ডিউক অব এডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপ অন্যতম। সম্রাট শোয়াকে টোকিওর হ্যাচিওজি এলাকায় অবস্থিত রাজকীয় সমাধিমন্দিরে সম্রাট তাইসো পাশে কবর দেয়া হয়। 

লেখক- ইশরাত পর্ণা 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *