Site icon Bangla Info Tube

‘ওপেন সিক্রেট’ ফাঁস, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর পদত্যাগ

Reading Time: 2 minutes

গত কিছুদিন যাবত পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল ছাত্রলীগ এবং এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। ৭ সেপ্টেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভা শেষে ছাত্রলীগের এই দুই নেতার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে নানা রকম গুঞ্জন বাতাসে ভেসে বেড়াতে থাকে। গতকাল ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সভায় প্রধানমন্ত্রী রেজওয়ানুল ও গোলাম রাব্বানীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। সেই সাথে ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল নাহিয়ান খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করেন। তারা রেজওয়ানুল ও রাব্বানী কমিটির বাকি থাকা ১০ মাস দায়িত্ব পালন করবেন।

ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক দুই শীর্ষ নেতার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ হওয়ার মূল কারণ ছিল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা চাঁদাবাজি, টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্প্রতি ফেন্সিডিলের বোতল পাওয়ার মতো ঘটনাগুলো। এছাড়া ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি গত ১৩ জুলাই জেলা সমমর্যাদার কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কমিটি ঘোষণা করে। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর থেকে কুষ্টিয়া ছাত্রলীগের ভেতর থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠে।

২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর “অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প” নামে ১,৪৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন পায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি আবাসিক হল নির্মাণের জন্য চলতি বছরের ১ মে দরপত্র আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই প্রকল্পের টাকার ভাগ়-বাটোয়ারা নিয়ে একাধিকবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের তিনটিপক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায়। উন্নয়ন প্রকল্পে ছাত্রলীগ বাঁধা দিবে না এই শর্তে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম ছাত্রলীগকে ২ কোটি টাকা দিয়েছে এমন সংবাদ ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ২৩ আগস্ট থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। গত ২৭ আগস্ট, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার তাদের বাংলা অনলাইন সংস্করণে  “শিক্ষা নয়, জাবির আলোচনার বিষয় ‘২ কোটি টাকা’র ভাগ-বাটোয়ারা”  শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৯ আগস্ট উপাচার্যের বাসায় প্রকল্পের টাকার ভাগভাগি নিয়ে ছাত্রলীগের সাথে উপাচার্যের বৈঠক হয়েছে বলে জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতা ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছে।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিকে না জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ায় রেজওয়ানুল ও রাব্বানী ক্ষুব্ধ হয় এবং প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে ৪ থেকে ৬ পারসেন্ট টাকা নিয়ে দেওয়ার দাবি করে বলে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম সাংবাদিকদের জানান। কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করে রাব্বানী উল্টো উপাচার্যকে অভিযোগ প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ জানান। অপরদিকে উপাচার্য ফারজানা ইসলামও তার বিরুদ্ধে রাব্বানীদের আনা অর্থ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও আচার্যকে এই ব্যাপারে তদন্ত করার অনুরোধ জানান।

কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যে বলছে সেটি আমজনতার পক্ষে কোন দিনই হয়তো জানা সম্ভব হবে না। তবে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কলহের কারণে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের যে চিত্র পত্রপত্রিকায় আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি সেটি কিন্তু আমাদের কারও অজানা নয়। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের সব অপকর্ম এখন “ওপেন সিক্রেট”। দু’নম্বরি কাজ আগে তাও একটু হলেও রেখে ঢেকে করা হতো, এখন আর সেসবের বালাই নেই। প্রবল প্রতাপশালী ছাত্রলীগ নেতাদের বাধা দিবে এমন বুকের পাটা এই বঙ্গদেশে কার আছে?  ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, টাকার বিনিময়ে নতুন কমিটিকে জায়গা দেয়া, হলে সিট দখলের দাপট এই সব কার অজানা? দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই কথাটি এখন সরকারি অফিস ও কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

রেজওয়ানুল-রাব্বানীর ওপরে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ হওয়ার অন্য কোন কারণ আছে কিনা সেটি আমাদের জানা নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা চলছে, এমন অভিযোগ মাথায় নিয়ে ছাত্রলীগের আরও অনেক নেতাই দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা ও গবেষণার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।

লেখক- হাসান উজ জামান

Exit mobile version